Sunday, May 19, 2024
Homeপুরাতন রোগএমিনোরিয়ার হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা

এমিনোরিয়ার হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা

প্রাথমিক আলোচনাঃ আজকের আলোচনাতে এমিনোরিয়া বা মাসিক ঋতুস্রাবের বন্ধের বিস্তারিত এবং এমিনোরিয়ার হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বিষয়ে আলোচনা করব। এর সাথে সাথে এমিনোরিয়ার প্ররকারভেদ, কারণ, লক্ষন ইত্যাদি সম্বন্ধেও আলোচনা করব।

Amenorrhea কি?

নিয়মিত মাসিক ঋতুস্রাবের অনুপস্থিতি কে Amenorrhea বলে। প্রাকৃতিক কারণগুলো ব্যতীত সাধারণত পরপর তিনটি মাসিক ঋতুস্রাব বন্ধ থাকলে তাকে এমিনোরিয়া বলে। অর্থাৎ Pregnancy, Breast feeding, এবং Menopause ইত্যাদি প্রাকৃতিক কারণ গুলো ব্যতীত শারীরিক অসুস্থতা জনিত কারণে ঋতুস্রাব বন্ধ থাকলে তাকে এমিনোরিয়া বলে।

এমিনোরিয়া কত প্রকার? 

এমিনোরিয়া সাধারণত দুই প্রকার। 

১) প্রাইমারি এমিনোরিয়া।
২) সেকেন্ডারি এমিনোরিয়া।

প্রাইমারি এমিনোরিয়াঃ বেশিরভাগ মেয়েদের বয়স ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে তাদের মাসিক ঋতুস্রাব শুরু হয়ে যায়। গড়ে এই বয়সটা ১২ বছর। কোন মেয়ের স্তন বিকাশের পাঁচ বছরের মধ্যে সাধারণত প্রথম ঋতুস্রাব হয়ে থাকে। একটা মেয়ের ১৫ বছর বয়সের ভেতর যদি Menstruation প্রক্রিয়া শুরু না হয় তাকে Primary Amenorrhea বলে।

এমিনোরিয়ার হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা
Menstruation

সেকেন্ডারি এমিনোরিয়াঃ যে সকল স্ত্রীলোকের স্বাভাবিক ঋতুস্রাব হয়েছে কিন্তু শরীরগত অসুস্থতার কারণে মাসিক ঋতুস্রাব বন্ধ হয়েছে। তাকে Secondary Amenorrhea বলে। অনেক সময় দীর্ঘদিন যাবত কারো কারো ক্ষেত্রে এরকম মাসিক বন্ধ থাকতে পারে।

এমিনোরিয়া এর লক্ষণঃ

নিয়মিত মাসিক ঋতুস্রাবের হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং পরপর তিনটি Menstrual Cycle মাসিক বন্ধ থাকাই এমিনোরিয়ার প্রধান লক্ষণ। তবে এর সাথে কখনো কখনো অতিরিক্ত আরো কিছু শারীরিক অসুস্থতার লক্ষণ প্রকাশ পেতে দেখা যায়। 

যেমন-
১) তলপেটে বেদনা থাকতে পারে।
২) মাথা বেদনা থাকতে পারে।
৩) মুখে ব্রণ দেখা দিতে পারে।
৪) মুখে হালকা ধরনের দাড়ি-গোঁফ দেখা দিতে পারে।(হিরসুটিজম)
৫) চুল পড়ে যেতে পারে।
৬) স্তনের বোটা দিয়ে দুধের ন্যায় আঠালো স্রাব বেরোতে পারে।

এমিনোরিয়া এর কারণঃ

নানাবিধ কারণ থেকে এমিনোরিয়া রোগটি দেখা দিতে পারে। নিচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ আলোচনা করা হলো।

সর্বপ্রথমে এমিনোরিয়া এর প্রাকৃতিক কারণগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো। 

প্রেগনেন্সিঃ কোন স্ত্রীলোকের প্রেগন্যান্সি আসলে প্রাকৃতিক কারণেই তার মাসিক বন্ধ হয়ে থাকে।

ব্রেস্ট ফিডিংঃ বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানো কালীন প্রথম প্রথম কিছুদিন মাসিক ঋতুস্রাব বন্ধ থাকে। তবে এই সময়ের হিসাবটা হেরফের হতে পারে ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তির ক্ষেত্রে।

মেনোপজঃ কারো মেনোপজ হয়ে গেলে তখন প্রাকৃতিক নিয়মেই তার মাসিক ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যায়। গড় হিসাবে একজন স্ত্রী লোকের ৪৫ বছরের কাছাকাছি বয়সে মেনোপজ বা Climacteric Change ঘটে থাকে।

এই সকল প্রাকৃতিক কারণ দ্বারা কোন স্ত্রী লোকের মাসিক রজঃস্রাব বন্ধ হতে পারে যা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। এছাড়া আরো যে সকল কারণে একজন স্ত্রী লোকের মাসিক ঋতুস্রাব বন্ধ হতে পারে সেগুলো হলঃ

Contraceptive এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াঃ বিভিন্ন জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি এমনকি Oral Contraceptive ব্যবহার করলেও কখনো কখনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় হিসাবে Menstruation বন্ধ থাকতে পারে।

ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াঃ কিছু বিশেষ চিকিৎসার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় মাসিক ঋতুস্রাব বন্ধ থাকতে পারে যেমন- ক্যান্সার রোগে, কেমোথেরাপির পরে ইত্যাদি পরিস্থিতিতে Menstruation বন্ধ থাকতে পারে।

বিভিন্ন মানসিক রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত Depression Relief Medicine এর সাইড ইফেক্ট দ্বারা মাসিক ঋতুস্রাব বন্ধ হতে পারে। বিভিন্ন প্রকার এলার্জির সমস্যায় ব্যবহৃত ঔষধ সমূহের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় মাসিক বন্ধ হতে পারে। ব্লাড প্রেসার, ডায়াবেটিস, থাইরয়েড ইত্যাদির জন্য ব্যবহৃত ওষুধগুলোর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় মাসিক ঋতুস্রাব বন্ধ হতে পারে।

Hormonal Imbalance এর কারণেঃ হরমোনের অসামঞ্জস্যতা বশত কিছু ক্ষেত্রে মাসিক বন্ধ থাকতে পারে যেমন-

PCOS(polycystic ovarian syndrome): পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম, (Pituitary Malfunction) পিটুইটারি গ্ল্যান্ডের কোন সমস্যা বিশেষত পিটুইটারি টিউমার হলে মাসিক ঋতুস্রাব বন্ধ থাকতে পারে।

Thyroid malfunction: থাইরয়েড গ্ল্যান্ডের Hyper activity বা Under active thyroid gland ইত্যাদি সমস্যার কারণে মাসিক ঋতুস্রাব সাময়িক বন্ধ থাকতে পারে।

Premature Menopause: সাধারণত ৪৫ বছর বা ৫০ বছর বয়সের মধ্যে অধিকাংশ স্ত্রীলোকের Menopause হয়ে থাকে। তবে কিছু কিছু ব্যতিক্রম দেখা যায় কখনো কখনো কোন কোন স্ত্রী লোকের ওভারিতে ডিমের মজুদ শেষ হয়ে গেলে ৪০ বছরের কাছাকাছি সময়েও Menopause হতে দেখা যায়। এমিনোরিয়া রোগের চিকিৎসায় এসকল বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে।

জীবন আচরণের ত্রুটিঃ Lyfe Style সম্পর্কিত কিছু সমস্যার দ্বারা রোগটি দেখা দিতে পারে। যেমন শারীরিক ওজন নিয়ে সমস্যা। রোগীর যদি খুব বেশি ওজন থাকে বা খুব কম ওজনের হয়ে থাকে তবে Amenorrhea এর ক্ষেত্রে তা প্রভাব রাখতে পারে। 

অতিরিক্ত পরিশ্রমঃ খুব ভারী পরিশ্রম বা কঠোর ব্যায়াম অনুশীলন ইত্যাদির দ্বারা মাসিক ঋতুস্রাব বন্ধ হতে পারে। 

মানসিক দুশ্চিন্তাঃ মানসিক নানাবিধ হতাশা, দুশ্চিন্তা, ভয় ইত্যাদি থেকে মাস্রিক ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে পারে।

গঠনগত সমস্যাঃ স্ত্রীলোকের Reproductive System এর যদি গঠনগত ত্রুটি থাকে মাসিক ঋতুস্রাব এর অনুপস্থিতি ঘঠতে পারে। যেমন (Congenital absence of uterus)কনজেনিক্যাল অ্যাবসেন্স অফ ইউটেরাস, Congenital absence of fallopian tube,  রিপ্রোডাক্টিভ সিস্টেম এর কোন Structural Abnormality থাকলে, তার Problem of ovulation ইত্যাদি এছাড়াও নানাবিধ প্রজনন অঙ্গের ত্রুটিজনিত অসুবিধা থেকেও এমিনোরিয়া রোগটি হতে পারে।

স্ত্রীলোকের প্রজনন যন্ত্রাদির গঠনে কোন রকম ত্রুটি থাকলে এমিনিরিয়া সহ আরো নানাবিধ রোগ লক্ষণ দেখা দিতে পারে। কখনো কখনো কোনো অস্বাভাবিক পর্দা দ্বারা যদি জরায়ুর সম্মুখভাগে বাধা তৈরি হয় তার ফলে জরায়ু এবং সার্ভিস থেকে মাসিকের রক্তস্রাব বের হতে পারে না এবং এমিনোরিয়া রোগটি দেখা দেয়।

কাদের এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেশিঃ

সাধারণত যে সকল স্ত্রীলোকের এমিনোরিয়া রোগটির দ্বারা আক্রান্ত হাউ আর ঝুঁকি বেশি থাকে তা হল-

পারিবারিক ইতিহাসঃ পরিবারের যাদের সাথে রক্তের সম্পর্ক আছে এমন অন্য স্ত্রীলোক দিগের যদি কেউ এই রোগে ভুগে থাকে তবে তাদের এই রোগটি হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।

ভারী পরিশ্রমঃ অতিরিক্ত পরিশ্রমযুক্ত ভারী কাজ, এথলেটস দের কঠোর অনুশীলন এই সকল ক্ষেত্রে Amenorrhea রোগটি Develop করার ঝুঁকি অধিক।

এমিনোরিয়া নির্ণয়ে প্যাথোলজিক্যাল টেস্টঃ

প্রেগনেন্সি টেস্টঃ অন্যান্য পরীক্ষার আগে আমিনোরিয়ার কারণ হিসেবে গর্ভাবস্থা আছে কিনা কিনা সেটি পরীক্ষা করা উচিত।

হরমোন পরীক্ষাঃ
Follicle-Stimulating Hormone (FSH): এটির লেভেল বেড়ে গেলে সেটি ovarian failure কে নির্দেশ করে।
Luteinizing Hormone (LH): এই হরমোনটির অস্বাভাবিকতা ডিম্বাশয়ের সমস্যা কে নির্দেশ করে।
Estradiol: হরমনটির নিম্নমাত্রা ডিম্বাশয়ের কর্মহীনতা কে নির্দেশ করে।

Thyroid Function Tests:
Thyroid Stimulating Hormone (TSH): থাইরয়েড হরমোনের অস্বাভাবিকতা মাসিক চক্রকে ব্যাহত করতে পারে।

Pelvic Ultrasound: পেলভিক অর্গান এর আস্বাভাবিকতা আছে আছে কিনা সেটি দেখার জন্য পেলভিক আল্ট্রাসাউন্ড এর সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।

Genetic Testing: প্রাথমিক এমিনোরিয়া এর ক্ষেত্রে কোন ক্রোমোজোমের অস্বাভাবিকতা বা জেনেটিক রোগ আছে কিনা তা সনাক্ত করতে জেনেটিক টেস্টিং করতে হতে পারে।

MRI or CT Scan: এমিনোরিয়ার কেন্দ্রীয় কারণ গুলো অনুসন্ধানের জন্য পিটুইটারি গ্ল্যান্ড এবং হাইপোথ্যালামাস এর কোন অস্বাভাবিকতা আছে কিনা তা দেখতে এমআরআই এবং সিটি স্ক্যান করার প্রয়োজন হতে পারে।

এমিনোরিয়ার হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাঃ

বরাবরের মতোই হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা লক্ষণ ভিত্তিক। তাই এমিনোরিয়ার হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাও লক্ষণ ভিত্তিক উপায়ে করতে হবে। তবে চিকিৎসার শুরুতেই ভালো করে বুঝে নিতে হবে কি কারন থেকে রোগটি শুরু হয়েছে। সেই অনুযায়ী চিকিৎসা পরিচালনা করতে হবে।

সিপিয়াঃ  লক্ষণ সাদৃশ্য থাকলে সচারাচার এটি ব্যবহার করলে এমিনোরিয়া রোগে খুবই উপকার পাওয়া যায়।

পালসেটিলাঃ এমিনোরিয়া রোগে প্রথম শ্রেণীর ঔষধ। রোগীর গরম বেশি, পিপাসাহীন। 

গ্রাফাইটিসঃ রোগী মোটাসোটা, শীত বেশি, রোগীর প্রাণিজ খাদ্যে বিতৃষ্ণা, মিষ্টি খাদ্যদ্রব্যে বিতৃষ্ণা, স্রাব আঠাল প্রকৃতির এবং গাঢ়। রোগীর চর্মরোগ প্রবণতা অধিক। এই সকল ক্ষেত্রে গ্রাফাইটিস ব্যবহার করলে খুব সুন্দর ফলাফল পাওয়া যাবে।

ল্যাকেসিসঃ রোগীর গরম বেশি, সাপের স্বপ্ন দেখে খুব, অনেক সময় টনসিলাইটিস এর সমস্যা থাকতে পারে এই সকল ধাতু গত লক্ষণ সাদৃশ্যে এমিনোরিয়া রোগটির জন্য ল্যাকেসিস ঔষধটি ব্যবহার করলে খুব সুন্দর ফল পাওয়া যায়।

ফসফরাসঃ রোগী হালকা-পাতলা গড়নের, যথেষ্ট উচু লম্বা, সিপসিপে শরীর, সুন্দর দৃষ্টিনন্দন চেহারা, ঠান্ডা খাদ্য দ্রব্য যেমন ঠান্ডা জল, আইসক্রিম, কোলড্রিংস এই সকল খাবারে অত্যাধিক আগ্রহ, বজ্রপাতের প্রচন্ড ভয় এই সকল লক্ষণ সাদৃশ্য ফসফরাস ঔষধটি নির্বাচিত হলে রোগীর এমিনোরিয়া রোগটি সমূলে আরোগ্য হবে।

জনশিয়া অশোকাঃ অত্যাল্প ঋতুস্রাব, ঋতুস্রাব চাপা পড়লে ঔষধটির খুব সুন্দর ক্রিয়া দেখা যায়। জনশিয়া অশোকা ঔষধটি মাদার টিংচার ফার্মে জলের সাথে মিশিয়ে খেতে হয়।

সেনেসিও অরিয়াসঃ ঔষধটি অগভীর প্রকৃতির হলেও মাসিক ঋতুস্রাব বন্ধ হলে এটি ব্যবহারে অনেক সময় খুব সুন্দর ভাবে রোগটি আরোগ্য হয়। ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে কাশির সাথে রক্ত আসলে অথবা ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে রক্তবমি(মিলিফোলিয়াম) হলে ঔষধটি ব্যবহার করলে রোগ আরোগ্য হয়ে থাকে।

ফেরাম মিউরঃ রক্তহীনতা জনিত ঋতুবন্ধের ক্ষেত্রে ঔষধটির ব্যবহার দ্বারা উপকার পাওয়া যেতে পারে। ঔষধটি নিম্নশক্তিতে ব্যবহারে ভালো ফল পাওয়া যায়।

ক্যালকেরিয়া কার্বঃ রোগীর মোটাসোটা, শীতকাতর, অধিক ঋতুস্রাব প্রবণ, ইত্যাদি লক্ষণসহ কালকেরিয়া কার্বের ধাতুতে ঔষধটি প্রয়োগ করলে এমিনোরিয়া রোগ আরোগ্য হবে।

নেট্রাম মিউরঃ শারীরিক শীর্ণতা যুক্ত রোগী, রোগীর গরম বেশি, লবণ খাওয়ার প্রতি অত্যাধিক আগ্রহ অথবা রোগী লবণাক্ত খাবার খেতে চায় অধিক পরিমাণে, মাইগ্রেনের (পার্শ্বগত মাথা বেদনা) সমস্যা থাকতে পারে, রোগীর রাগ বেশি, সান্ত্বনায় বৃদ্ধি, স্নান করায় প্রবল আগ্রহ ইত্যাদি লক্ষণযুক্ত রোগীর ক্ষেত্রে নেট্রাম মিউর ব্যবহারে এমিনোরিয়া রোগটি সুন্দরভাবে আরোগ্য হবে।

এছাড়াও রোগীর ধাতুগত লক্ষণ বিচার করে যে কোন ঔষধই এমিনোরিয়ার হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার জন্য নির্বাচিত হতে পারে এবং খুব সুন্দর ক্রিয়া পাওয়া যেতে পারে।

রোগ নির্ণয়ে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাঃ

এমিনোরিয়া এর রোগীকে আমার সর্বপ্রথম প্রশ্ন থাকে

১) রোগিনী প্রেগনেন্সি টেস্ট করেছেন কিনা?
যদি তার প্রেগনেন্সি টেস্ট রিপোর্ট নেগেটিভ থাকে তবে আমার দ্বিতীয় ইনভেস্টিগেশন থাকে এটা খোঁজ করা যে-

২) তিনি কোন অন্য রোগের চিকিৎসার জন্য কোন ঔষধ নিয়মিত খাচ্ছেন কিনা? অথবা এরূপ কোন প্রকার ঔষধ সেবনের পর থেকে তার এই সমস্যা শুরু হয়েছে কিনা?

তৃতীয় ইনভেস্টিগেশন থাকে এটা দেখা যে-

৩) রোগিনী রক্তশূন্যতায় ভুগছে কিনা? রোগীর শরীরের রক্ত কম থাকলে তা রোগীর চোখ মুখের দিকে তাকালে বোঝা যাবে। এনিমিয়া নিশ্চিত হতে প্যাথলজিক্যাল টেস্ট Hb% করাতে হবে।

যদি প্যাথলজিক্যাল টেস্ট Hb% নরমাল রেঞ্জের ভেতর থাকে তবে ধারণা করা যায় যে, কোন হরমোনাল সমস্যা থেকে রোগীর ঋতুস্রাব বন্ধ হয়েছে।

এর সাথে সাথে রোগীর USG of lower abdomen করালে প্রজনন যন্ত্র সম্বন্ধীয় কোন ত্রুটি, কোন টিউমার, সিস্ট এসব আছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যাবে। যদি সকল ক্লিনিক্যাল ইনভেস্টিগেশন ও সকল প্যাথলজিকাল টেস্ট রিপোর্ট নরমাল থাকে তবে ধরে নিতে হবে Systematic Disorder বা ধাতুগত সমস্যা থেকে Amenorrohea রোগটি হয়েছে। অনেক সময় কোন কারণে ভয় পেয়েও মাসিক ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে থাকে অনেকের।

নোটঃ এমিনোরিয়া রোগটি রক্তস্বল্পতা থেকে হয়ে থাকলে রোগীকে ঔষধ সেবানের পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খেতে বলতে হবে। (আয়রন সমৃদ্ধ খাবারঃ কচু শাক, কচুর লতি, কাঁচকলা, ডুমুর, কলার মোচা, কুলেখাড়া, বেদানা, সজিনা পাতা, কিসমিস ইত্যাদি)। এর সাথে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণে খেতে হবে।

ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবারঃ দুগ্ধ(milk, Cheese, Yogurt, Buttermilk), তিল, নোটে শাক, মাছের কাটা(sardines (with bones), বাদাম এবং বীজ (almonds, Chia seeds, Sesame seeds, Sunflower seeds), ফল(orange, Dried figs, Kiwi) মাংসের হাড়, কড লিভার অয়েল, সূর্যতাপ ইত্যাদি।

এই বিষয়টি সর্বদা খেয়াল রাখতে হবে যে শরীরে ক্যালসিয়াম শোষণ করার ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করতে ভিটামিন ডি অতীব প্রয়োজন। অর্থাৎ শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ডি না থাকলে তা ক্যালসিয়াম শোষণ কে ব্যাহত করে। অর্থাৎ শরীরে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি থাকলে যতই ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাদ্য খাওয়া হোক না কেন তার শরীরে শোষিত হতে বাধা পায়। তাই ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পাশাপাশি ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবারের দিকেও নজর রাখুন।

ভিটামিন ডি এর উৎসঃ প্রকৃতির বিভিন্ন ধরনের খাবার এ ভিটামিন ডি খুব একটা পাওয়া যায় না। শরীরে ভিটামিন ডি গ্রহণের প্রধান উৎস হল সূর্যালোক। সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি (Ultraviolet B ray) যখন ত্বকের উপর পড়ে তখন আমাদের ত্বকে Vitamin D3 তৈরি হয়। পরবর্তীতে তার লিভার এবং কিডনির মাধ্যমে Vitamin D (Calcitriol) তে রূপান্তরিত হয়। অর্থাৎ সূর্যালোকই হল ভিটামিন ডি সংগ্রহের গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক উৎস।

যে সকল খাবারগুলোতে অতি সামান্য পরিমাণে ভিটামিন ডি পাওয়া যায় তা হলঃ
Fatty Fish: Salmon, Mackerel, Sardines, Trout. Cod Liver Oil: This is one of the richest sources of vitamin D. Egg Yolks: Eggs, especially the yolks, contain some vitamin D.
There are many fortified foods that contains vitamin D
milk, yogurt, cheese, soy, almond, rice, etc.

আরো পড়ুনঃ
সাদা স্রাব এর হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা

ডাঃ দীপংকর মন্ডল।
রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথ।
২৩.০১.২০২৪

———————————

Dr. Dipankar Mondal
Dr. Dipankar Mondal
আমি ডা. দীপংকর মন্ডল। রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথ। যেকোন নতুন ও পুরাতন রোগের চিকিৎসা করার জন্য যোগাযোগ করুন।
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments