Sunday, May 19, 2024
Homeঅর্গাননজীবনীশক্তি নিজেই রোগ উৎপাদন করে। অনুচ্ছেদ ১২ অর্গানন।

জীবনীশক্তি নিজেই রোগ উৎপাদন করে। অনুচ্ছেদ ১২ অর্গানন।

আজকে আমরা অর্গাননের ১২ নম্বর অনুচ্ছেদ নিয়ে আলোচনা করব। এই অনুচ্ছেদে মহত্মা শ্যামুয়েল হ্যানিম্যান আমাদের শরীরে জীবনীশক্তির ভূমিকা, আমাদের শরীরে কিভাবে রোগ উৎপাদিত হয়, এই বিষয়ে তার উপলব্ধি ব্যক্ত করেছেন। আমি মহামতি ডঃ জি দীর্ঘাঙ্গী এর বাংলা অনুবাদকৃত অর্গানন পাঠ করে যে জ্ঞান অর্জন করেছি, তার আলোকে এখন আলোচনা করছি।

প্রথমেই আমরা অর্গানন এর ১২ নম্বর অনুচ্ছেদকে একবার দেখে নেব।

It is the morbidly affected vital force alone that produces disease1, so that the morbid phenomena perceptible to our senses express at the same time all the internal change, that is to say, the whole morbid derangement of the internal dynamis; in a word, they reveal the whole disease; consequently, also, the disappearance under treatment of all the morbid phenomena and of all the morbid alterations that differ from the healthy vital operations, certainly affects and necessarily implies the restoration of the integrity of the vital force and, therefore, the recovered health of the whole organism.

আজকের আলোচনায় আমরা যে সকল বিষয় জানতে যাচ্ছি সংক্ষেপে তা হলোঃ

১) আমাদের শরীরে কে রোগ উৎপাদন করে?
২) রোগের কতটুকু একজন চিকিৎসক জানতে পারেন?
৩) শরীরে রোগ প্রকাশিত হয় কয়টি কারণ দ্বারা?
৪) রোগের প্রকাশ বা আকৃতি কিরুপ?
৫) রোগ দূর হলে কিরুপে তা বোঝা যাবে?

এবার তাহলে আলোচনায় আসা যাক। উল্লিখিত বিষয়গুলো ক্রমানুসারে আমরা ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করব।

জীবনীশক্তি নিজেই রোগ উৎপাদন করে। অনুচ্ছেদ ১২ অর্গানন।
Organon of medicine

আমাদের শরীরে কে রোগ উৎপাদন করে?

এই প্রশ্নের উত্তর হল, অশুভ শক্তি দ্বারা আক্রান্ত জীবনী শক্তি নিজেই রোগ উৎপাদন করে। অর্থাৎ যেইমাত্র কোন অশুভ অদৃশ্য শক্তি দ্বারা আমাদের জীবনী শক্তি আক্রান্ত হয়, সঙ্গে সঙ্গে আমাদের জীবনী শক্তিও সেই অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। জীবনী শক্তি সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যুদ্ধ করে এই অশুভ শক্তিকে পরাজিত করতে। কিন্তু যদি ওই অশুভ শক্তিটি আক্রান্ত জীবনীশক্তি থেকে অধিক বলবান হয়, তবে পীড়িত জীবনী শক্তির রোগমুক্ত হতে বাইরের কোন শক্তির সাহায্যের প্রয়োজন হয়। অশুভ রোগ শক্তিকে পরাজিত করতে শরীরের বাইরে থেকে  সাহায্য চাওয়া এবং সাহায্য পাওয়ার আশায় জীবনী শক্তি শরীরে এবং মনে কিছু রোগ লক্ষণ প্রকাশ করে। বলা হয় এই রোগ লক্ষণ গুলো হল জীবনী শক্তির সাহায্য চাওয়ার ভাষা।

অর্থাৎ আমরা বুঝতে পারলাম অশুভ শক্তি বা রোগ শক্তি আমাদের শরীরে রোগ সৃষ্টি করে না। রোগশক্তি জীবনী শক্তিকে আক্রমণ করলে জীবনীশক্তি  সাহায্যের আশায় কিছু বিকৃত রোগ লক্ষণ শরীর ও মনে উৎপাদন করে। তাই হোমিওপ্যাথিক দর্শন অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হবে জীবনী শক্তির।

জীবনীশক্তি সুস্থ হলে রোগ আপনি দূরীভূত হবে। এই কারণেই হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার মূলনীতি হল Treat the patient not the disease. অর্থাৎ রোগীর চিকিৎসা কর রোগের নয়।

রোগের কতটুকু একজন চিকিৎসক জানতে পারেন? 

অর্গাননের ১২ নম্বর অনুচ্ছেদ এর ৮ নম্বর পাদটিকায় এই বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এই পাদটিকাতে বলা হয়েছে, রোগশক্তি দ্বারা আক্রান্ত জীবনীশক্তি অসুস্থ হয়ে কি প্রকারে আমাদের শরীরে রোগ লক্ষণ উৎপাদন করে তা খুবই জটিল বিষয়। একজন চিকিৎসক তা সম্পূর্ণ রুপে জানতে পারেন না এবং সম্ভবত কোনদিনও তা পারবেন না। একজন চিকিৎসকের নিকট এই তত্ত্বের কেবল ততটুকুই প্রকাশিত হয় জীবনদেবতা(Lord of life) দ্বারা, যতটুকু জানলে রোগ আরোগ্য সম্ভব হবে। অর্থাৎ যে সকল লক্ষণ দ্বারা সমগ্র রোগটিকে চিহ্নিত করা যায় সেই সকল লক্ষণ পূর্ণাঙ্গ আকারে আমাদের শরীরে প্রকাশিত হয় না। কেবলমাত্র কিছু আংশিক লক্ষণ একজন চিকিৎসকের নিকট প্রকাশিত হয়।

শরীরে রোগ প্রকাশিত হয় কয়টি কারণ দ্বারা?

প্রত্যেকটি কষ্টকর রোগ লক্ষণের পেছনে থাকে দুইটি কারণ-

১) সূক্ষ্ম/ভেতরের এবং
২) স্থূল/বাইরের

শরীরে রোগ সৃষ্টির কারণে এই দুইটি কারণের প্রভাব অবশ্যই বর্তমান থাকে। একটি উদাহরণের সাহায্যে বোঝা যাক-

আমাদের শরীরের কোন অঙ্গে কাঁটা ফুটলে সেখানে বেদনার অনুভব হয়। এখানে প্রত্যক্ষ তিনটি উপাদান আমরা পাই। এর দুটি রোগ সৃষ্টির কারণ এবং একটি রোগের পরিণাম ফল।

১) কষ্টকর রোগ লক্ষণ=কাঁটা ফোটা স্থানে বেদনা।
২) বাহ্য/স্থূল কারণ=কাঁটা।
৩) ভেতরের/সূক্ষ্ম কারণ=আক্রান্ত অঙ্গে জীবনী শক্তির ক্রিয়া।

এবার আলোচনা করা যাকঃ একটি পচনশীল অঙ্গে জীবনী শক্তির উপস্থিতি থাকে না। তাই সেখানে কাটা ফুটলে বা কোন প্রকার আঘাত লাগলেও কোন প্রকার বেদনার অনুভূতি থাকে না। জীবনী শক্তির ক্রিয়া এই স্থলে নেই বলে এখানে কোন ব্যথা বেদনার অনুভূতি থাকে না।

অর্থাৎ বোঝা গেল আমাদের রোগ যন্ত্রণা ভোগ করার জন্য জীবনী শক্তির ক্রিয়া অবশ্যই সক্রিয় থাকে। অর্থাৎ ভেতরের কারণ অবশ্যই জীবনী শক্তি সংশ্লিষ্ট হবে।

বাইরের কারণ দুই প্রকারের হতে পারে সূক্ষ্ম এবং স্থূল। কাঁটা, সুচ, পেরেক, আলপিন বা কোন আঘাত এই সকল স্থূল কারণ। আর চর্মরোগ, টিউমার, ক্রণিক শ্বাসকষ্ট এই সকল রোগের কারণ সূক্ষ্ম রোগশক্তি বা অশুভ রোগশক্তি। এসব শক্তি অদৃশ্যমান এগুলো রোগের সূক্ষ্ম কারণ।

অর্থাৎ আমরা দেখতে পেলাম, যে সকল কষ্টকর রোগ লক্ষণে আমরা ভুগে থাকি তার বাহিরের এবং ভেতরের কারণ হিসেবে দুটি পক্ষ যুক্ত থাকে। এবং রোগের পরিণাম ফল বলে আরেকটি পক্ষ তৈরি হয়। এবং বাহিরের কারণ সূক্ষ্ম এবং স্থূল এই দুই প্রকারের হতে পারে।

রোগের প্রকাশ বা আকৃতি কিরূপ?

অশুভ রোগ শক্তি দ্বারা আমাদের জীবনী শক্তি আক্রান্ত হলে তখন জীবনী শক্তির সূক্ষ স্তরে একটা অদৃশ্য আভ্যন্তরিক পরিবর্তন ঘটে থাকে। এই অদৃশ্য আভ্যন্তরিক পরিবর্তনের আকৃতি কিরূপ? রোগের কারণে একজন সুস্থ ব্যক্তি অসুস্থ হয়। এই অসুস্থ অবস্থায় রোগ লক্ষণ দ্বারা রোগীর কিছু শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন ঘটে থাকে। রোগ লক্ষণ যুক্ত দৃশ্যমান এই বাইরের পরিবর্তনই ভেতরে অদৃশ্য পরিবর্তন এর আকৃতি।

রোগ দূর হলে কি রূপে তা বোঝা যাবে?

হোমিওপ্যাথিক নীতি অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হবে রোগীর বা জীবনী শক্তির, রোগের নয়।অর্থাৎ রোগীর আভ্যন্তরিক বিশৃঙ্খলার দিকে নজর রেখেই চিকিৎসা কার্য পরিচালনা করতে হবে। চিকিৎসা করতে হবে আভ্যন্তরিক বিশৃঙ্খলার। সঠিক চিকিৎসা দ্বারা আভান্তরিক বিশৃঙ্খলা দূর হলে বাহ্যিক দৃশ্যমান রোগ লক্ষণ সকল তখন আপনি দূর হবে। তবে একথা অবশ্যই স্মরণে রাখতে হবে যে বাহ্যিক রোগ লক্ষণ সমূহ সম্পূর্ণভাবে ও সামগ্রিকভাবে দূর হতে হবে। ‌ রোগী সমস্ত রোগ লক্ষণ থেকে সুস্থ হবে। শুধুমাত্র আংশিকভাবে দুই একটি রোগ লক্ষণ দূর হলে সেটি প্রকৃত আরোগ্য নয়। অর্থাৎ চিকিৎসার শেষে জীবনীশক্তি ও জীবশরীর উভয়ই সম্পূর্ণ সুস্থ্যাবস্থা পুনঃপ্রাপ্ত হবে। এটিই হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার মূল কথা।

মহাত্মা শ্যামুয়েল হ্যানিম্যান রচিত ‘অর্গানন শাস্ত্র’ চিকিৎসা নীতি সম্মিলিত একটি অমূল্য গ্রন্থ। অর্গাননের প্রতিটি পাতায় পাতায় লিপিবদ্ধ রয়েছে চিকিৎসা বিদ্যার নিগুড় রহস্য। পুনঃ পুনঃ পাঠ করে এই রহস্য উদঘাটন ও তার বাস্তব প্রয়োগ দ্বারা চিকিৎসক এবং রোগী উভয়ই সুফল পেতে পারেন।

আরো পড়ুনঃ
সাদা স্রাব এর হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা

ডাঃ দীপংকর মন্ডল।
রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথ।
২৭.০১.২০২৪

——————————-

Dr. Dipankar Mondal
Dr. Dipankar Mondal
আমি ডা. দীপংকর মন্ডল। রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথ। যেকোন নতুন ও পুরাতন রোগের চিকিৎসা করার জন্য যোগাযোগ করুন।
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments