Sunday, May 19, 2024
Homeএনাটমীকোষ বিভাজন এবং কোষ পরিচিতি

কোষ বিভাজন এবং কোষ পরিচিতি

প্রাথমিক আলোচনাঃ আজকে আমরা কোষ পরিচিতি এবং কোষ বিভাজন এর উপর বিস্তারিত আলোকপাত করবো। কি কি উপাদান দ্বারা কোষ গঠিত, কোষের বিভাজন প্রক্রিয়া কিরূপে সম্পন্ন হয়? এবং কোষ বিষয়ক আরো নানাবিধ গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর নিয়ে আজকের আলোচনা।

কোষ কাকে বলে?

উদ্ভিদ বা জীব সকলের দেহই কোষ দ্বারা তৈরি।  কোষ হল দেহ গঠনের Unit বা একক। উদ্ভিদ বা জীবদেহের ‘সামগ্রিক গঠন’, ‘বিভাগীয় ক্রিয়াকলাপ’ এবং ‘বংশগতির ধারা’ এই সকল বিষয়ের মূল উপাদান হল কোষ। আর এই কোষের গঠনের একক হল প্রোটোপ্লাজম।

কোষ কত প্রকার?

সাধারণত দুইটি প্রধান ধরনের কোষ আছে।
১) Prokaryotic প্রোক্যারিয়োটিক(আদিকোষ) এবং
২) Eukaryotic ইউক্যারিওটিক।

Prokaryotic কোষ গুলোর মধ্যে কোন নিউক্লিয়াস থাকে না। এই ধরনের কোষ ব্যাকটেরিয়ার মত জীবগুলিতে পাওয়া যায়। Eukaryotic ইউকেরিওটিক কোষগুলোতে নিউক্লিয়াস থাকে এবং এগুলো মানবদেহে পাওয়া যায়।

ক্রিয়া অনুসারে কোষ কে দুই শ্রেণীতে ভাগ করা যায়।
১) দেহকোষ এবং
২) জনন কোষ।

দেহকোষ বলতে সাধারণত Somatic Cell কে বোঝায় যা শরীরের বেশির ভাগ টিস্যু তৈরি করে। 

আর জনন কোষ প্রজননের সাথে যুক্ত কাজ যেমন শুক্রাণু এবং ডিম্বানু তৈরি করে।

কোষ এর গঠনঃ

সাধারণত (Nucleus)নিউক্লিয়াস, (Protoplasm)প্রোটোপ্লাজম এবং (Cell wall)কোষ প্রাচীর নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ কোষ গঠিত হয়। কোষের প্রাণকেন্দ্র নিউক্লিয়াস বাদে বাকি অংশ হল প্রোটোপ্লাজম। এই প্রোটোপ্লাজমের উপরের পর্দা হল Cell wall বা কোষ প্রাচীর। কোষ প্রাচীর এবং নিউক্লিয়াসের মাঝখানের তরল অংশকে সাইটোপ্লাজম (Cytoplasm) বলে।

১) Mitochondria– মাইটোকনড্রিয়া কোষের শক্তিঘর বলে। ছোট ছোট লম্বা আকৃতির দেখতে এগুলো। Mitochondria কোষ এর পুষ্টি এবং Respiration এর কাজে সাহায্য করে।
২) Golgi body-এটি নিউক্লিয়াসের নিকটে অবস্থান করে Cell এর Secretion এর কাজে সাহায্য করে। সাইটোপ্লাজম এটি জটিল প্রকৃতির Colloidal কলাইডাল পদার্থ এবং এর মধ্যেই কোষের অন্যান্য গঠন উপাদান অবস্থান করে।
৩) Cytoplasm: সামান্য ঘন পদার্থ এটি। এই সাইটোপ্লাজম এর গঠনের আশি ভাগ প্রায় জল এবং এটি দেখতে বর্ণহীন। এটি জনন কার্যে সহযোগিতা করে থাকে জনন কার্যে সাহায্য করে। ১৮৬২ সালে বিজ্ঞানী বিজ্ঞানী রুডলফ ভন
৪) Cell wall– কোষ প্রাচীর সম্পূর্ণ কোষ টি এই কোষ প্রাচীর দ্বারা আবৃত থাকে। কোষ প্রাচীরের গায়ে জালিকার ন্যায় অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্র থাকে।
৫) Nucleus– এই নিউক্লিয়াস হল কোষের প্রাণকেন্দ্র। Nuclear membrane নামক আবরণীর দ্বারা নিউক্লিয়াস আবৃত থাকে। নিউক্লিয়াসের ভেতর Nuclear SAP নামক একটি তরল পদার্থ থাকে।

তবে আবার এমন প্রাণীও দেখা যায় যা মাত্র একটি কোষ দ্বারাই গঠিত। যেমন অ্যামিবা। কিছু ব্যাক্টেরিয়াওও দেখা যায় যারা এককোষী।

অনেকগুলো ইট পরপর সাজিয়ে যেমন একটি ভবন নির্মিত হয় ঠিক তেমনি অনেকগুলো বা প্রায় অসংখ্য পরিমাণ কোষ একত্রিত হয়ে দেহ গঠিত হয়। একই বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন কিছু কোষ একত্রিত হয়ে তৈরি হয় Tissue. আর অনেকগুলো টিস্যু মিলে তৈরি হয় একেকটি Organ. অসংখ্য কোষের সমষ্টি দ্বারা এক একটি জীবশরীর তৈরি হয়। তবে এমনও প্রাণী আছে যাদের দেহ একটি মাত্র কোষ দ্বারা তৈরি। যেমন অ্যামিবা। এমনকি এই অ্যামিবার জননকার্য বা Reproduction ও তাদের একটি মাত্র কোষ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে সম্পন্ন হয়ে থাকে।

১৮৩৯ সালে বিজ্ঞানী Matthias Jakob Schleiden এবং Theodor Schleiden যে কোষ তত্ত্ব আবিষ্কার করেন তা হল “সকল জীবিত বস্তুই এক বা একাধিক কোষ দ্বারা গঠিত এবং সব কোষই পূর্বে অস্তিত্বশীল অন্য কোন কোষ থেকে উৎপত্তি লাভ করে”।

কোন কোন রাসায়নিক পদার্থ দ্বারা কোষ গঠিত?

সাধারণত যে সকল রাসায়নিক পদার্থ দ্বারা কোষ গঠিত হয় তা হল। 

১) Protein-কোষগুলোতে প্রোটিন উপাদান থাকে।
২) fat– তেল বা লিপিড জাতীয় পদার্থ থাকে।
৩) Carbohydrate-কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা জাতীয় পদার্থ থাকে কোষের ভেতর।
৪) In organic salt– বিভিন্ন ধরনের ইনঅর্গানিক সল্ট যেমন সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফেট, ক্লোরাইড প্রভৃতি সল্ট কোষে থাকে।
৫) H2O– কোষের একটা অংশ জল দ্বারা গঠিত। কোষে জলের পরিমাণ কমে গেলে তাকে ডিহাইড্রেশন বলে। ডিহাইড্রেশন মারাত্মক হলে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এজন্য অনেক সময়ই দেখা যায় কলেরা বা হিটস্ট্রোকে ডিহাইড্রেশন হয়ে মানুষ মারা যায়।

কোষ বিভাজন কাকে বলে?

যে বিশেষ প্রক্রিয়া দ্বারা জীব কোষ বিভক্ত হয়ে একটি কোষ থেকে দুইটি বা চারটি(ব্যাকটেরিয়ার ক্ষেত্রে বাইনারি ফ্যাশন এর ধারা অনুযায়ী কোষ বিভাজিত হয়ে থাকে ) এভাবে বিভাজিত হয়ে নতুন কোষ সৃষ্টি করে তাকে কোষ বিভাজন বলে। এই বিভাজন দ্বারা যে নতুন কোষ তৈরি হয় তাকে অপত্য কোষ(Daughter Cell) বলে। এবং যে মূল কোষ থেকে এই বিভাজন হল তাকে মাতৃকোষ(Mother Cell) বলে। 

কোষ বিভাজন কত প্রকার?

সাধারণত তিন প্রকারের কোষ বিভাজন দেখা যায়।
১) মাইটোসিস কোষ বিভাজন
২) মিয়োসিস কোষ বিভাজন।
৩) এমাইটোসিস কোষ বিভাজন।

কোষ বিভাজন
Cell Division

মাইটোসিস কোষ বিভাজন কাকে বলে?

যে কোষ বিভাজন প্রক্রিয়া দ্বারা একটিমাত্র মাতৃকোষ(Mother cell) থেকে দুইটি অপত্য কোষ(Daughter cell) তৈরি হয় এবং যারা স্বভাব গুনাগুন ও বৈশিষ্ট্যে মাতৃকোষের সমগুণ লাভ করে তাকে মাইটোসিস কোষ বিভাজন বলে। এই কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় মাতৃকোষ এবং অপত্য কোষের ক্রোমোজোম সংখ্যা অবশ্যই সমান থাকে। মাইটোসিস কোষ বিভাজনকে সমীকরণিক কোষ বিভাজন বা Equational cell division বলা হয়।

মাইটোসিস কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় ক্রোমোজোম এবং নিউক্লিয়াস উভয়ই একবার করে বিভাজিত হয়। এই কারণেই অপত্য কোষ ক্রোমোজোম সংখ্যা মাতৃ কোষের সমান হয়। এই কোষ বিভাজন প্রক্রিয়াটি সাধারণত দেহকোষে ঘটে থাকে।

মিয়োসিস কোষ বিভাজন কাকে বলে?

যে কোষ বিভাজন প্রক্রিয়া দ্বারা একটিমাত্র মাতৃকোষ(Mother cell) থেকে চারটি অপত্য কোষের(Daughter cell) সৃষ্টি হয় এবং অপত্য কোষের ক্রোমোজোম সংখ্যা মাতৃ কোষের ক্রোমোজোম সংখ্যা থেকে অর্ধেক পরিমাণে হয় তাকে মিয়োসিস কোষ বিভাজন বলে। মিয়োসিস কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় ক্রোমোজোম একবার এবং নিউক্লিয়াস দুইবার বিভাজিত হয়ে থাকে এই কারণে এই কোষ বিভাজন প্রক্রিয়াকে হ্রাসমূলক কোষ বিভাজন বলে।

অ্যামাইটোসিস কোষ বিভাজন কাকে বলে?

সাধারণত ব্যাকটেরিয়া এবং এককোষী প্রাণীদের মধ্যে এই ধরণের কোষ বিভাজন দেখা যায়।

যে কোষ বিভাজন প্রক্রিয়া দ্বারা কোন জটিল এবং ধারাবাহিক প্রক্রিয়া ছাড়া সরাসরি একটি মাতৃকোষ বিভাজিত হয়ে দুইটি অপত্য কোষের সৃষ্টি করে তাকে অ্যামাইটোসিস কোষ বিভাজন বলে। অর্থাৎ একে Direct cell division বা প্রত্যক্ষ কোষ বিভাজন বলে। এ ক্ষেত্রে মাতৃকোষের নিউক্লিয়াস এবং সাইটোপ্লাজম সরাসরি বিভাজিত হয়। এক্ষেত্রে নিউক্লিয়াস এবং সাইটোপ্লাজম এর মাছ বরাবর একটা খাঁজ সৃষ্টি হয় এবং এই খাঁজ বাড়তে বাড়তে একসময় কোষটি সম্পূর্ণ বিভক্ত হয়ে দুই ভাগ হয়ে দুটি নতুন কোষের সৃষ্টি হয়। সাধারণত Prokaryotic কোষগুলোতেই এই জাতীয় কোষ বিভাজন হয়ে থাকে। এককোষী প্রাণী অ্যামিবার কোষ বিভাজন অ্যামাইটোসিস প্রক্রিয়ায় হয়ে থাকে।

কোষের শক্তিঘর কাকে বলে?

কোষের শক্তিঘর বা Power house বলা হয় মাইটোকন্ডিয়াকে। কোষের শক্তি উৎপাদনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় Mitochondria থেকে তাই একে কোষের শক্তিঘর বলা হয়।

কোষ প্রাচীর কাকে বলে?

কোষের নিউক্লিয়াস এবং প্রোটোপ্লাজম একটি আবরণী বা Cell wall দ্বারা বেষ্টিত হয়ে থাকে। এই আবরণীকে Cell wall বা কোষ প্রাচীর বলে। এই Cell wall নিউক্লিয়াস এবং প্রোটোপ্লাজম কে সুরক্ষা প্রদান করে।

কোষের প্রাণকেন্দ্র কাকে বলেঃ কোষের প্রাণকেন্দ্র হল নিউক্লিয়াস। কোষের মস্তিষ্ক বলা হয় নিউক্লিয়াস কে। এই নিউক্লিয়াস এর ভেতরে এক ধরনের তরল Nuclear sap থাকে। নিউক্লিয়াসের ভেতর আরো থাকে কিছু সুতার মতো সরু প্রকৃতির পদার্থ যাকে Chromosomes বলে। Chromatin network এর ভেতর থাকা এই ক্রোমোজোম হলো একটি দীর্ঘ DNA অনু যাতে জিনগত উপাদান বিদ্যমান থাকে।  Somatic Cell বা মানুষের জনন কোষে ক্রোমোজোম সংখ্যা হল সর্বমোট ২৩ জোড়া। অর্থাৎ সর্বমোট ৪৬ টা করে ক্রোমোজোম থাকে(মানব দেহে অন্তত ৩০ থেকে ৪০ বিলিয়ন Somatic Cell থাকে) প্রত্যেকটা জনন কোষে। এই ২৩ জোড়া ক্রোমোজোম এর ভেতর একজোড়া ক্রোমোজোম হলো sex Chromosome. তারা হতে পারে XX অথবা XY. একটি সন্তান ছেলে হবে নাকি মেয়ে হবে তার উপর ভূমিকা রাখে এই সেক্স ক্রোমোজোম।

আদি কোষ কাকে বলে?

নিউক্লিয়াস হলো কোষের প্রাণকেন্দ্র। তবে কিছু কিছু জীব এর ক্ষেত্রে এমন কোষ দেখা যায় যাদের কোষে এই নিউক্লিয়াস সুগঠিত বা  সুবিন্যাস্ত নয়। এই শ্রেণীর কোষকে আদি কোষ বা Prokaryotic Cell বলে। যেমন ব্যাকটেরিয়ার কোষ। ব্যাকটেরিয়ার কোষে নিউক্লিয়ার বস্তুসমূহ সমস্ত প্রোটোপ্লাজমের ভেতর ভাসমান অবস্থায় ছড়িয়ে থাকে। ব্যাকটেরিয়ার নিউক্লিয়ার সুগঠিত নয় বলে এদের আদিকোষী জীব বলা হয়।

প্রস্তর কোষ কাকে বলে?

Stone cell বা প্রস্তর কোষ Sclereids(Sclereids শব্দটি গ্রিক শব্দ থেকে এসেছে যার অর্থ কঠিন বা শক্ত) নামে পরিচিত। এটি এমন একপ্রকারের বিশেষ উদ্ভিদকোষ যা অনমনীয় ও ঘন কোষ প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত থাকে।  উদ্ভিদকে কঠিন এবং শক্ত হতে এই কোষগুলো ভূমিকা রাখে। এই শ্রেণীর কোষগুলো বিভিন্ন আকৃতির হয়ে থাকে। এগুলো সাধারণত বিভিন্ন ফল, বাদাম, কাঠের অংশের টিস্যুতে পাওয়া যায়।

স্নায়ু কোষ কাকে বলে?

নিউরণ(Neuron) স্নায়ুতন্ত্রের একটি বিশেষ কোষ যা স্নায়ুতন্ত্রের গঠন একক। সমস্ত স্নায়ুমন্ডল এর ভেতর এটি যোগাযোগ রক্ষা করে এবং একটি কোষ থেকে অন্যকোষে এবং মস্তিষ্কে বিভিন্ন সংকেত প্রেরণ ও গ্রহণ করতে নিউরন প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখে। অর্থাৎ নিউরন স্নায়ুতন্ত্রের মৌলিক একক যা শরীরের বিভিন্ন ফাংশন এর যোগাযোগ এবং সমন্বয় কে পরিচালনা করে থাকে।

আরো পড়ুনঃ
নাকের হাড় বাঁকা কারণ, চিকিৎসা এবং ব্যবস্থাপনা

এই লেখাটি ইংরেজীতে পড়ুনঃ
Cell srtucture and cell division

 

ডাঃ দীপংকর মন্ডল।
রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথ।
০৫.০২.২০২৪

———————————-

Dr. Dipankar Mondal
Dr. Dipankar Mondal
আমি ডা. দীপংকর মন্ডল। রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথ। যেকোন নতুন ও পুরাতন রোগের চিকিৎসা করার জন্য যোগাযোগ করুন।
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments