Sunday, May 19, 2024
Homeপ্রাকটিস অব মেডিসিনজ্বরের প্রকারভেদ, ব্যবস্থাপনা এবং চিকিৎসা

জ্বরের প্রকারভেদ, ব্যবস্থাপনা এবং চিকিৎসা

প্রাথমিক আলোচনাঃ জ্বর শরীরে একটি রোগ উপসর্গ মাত্র। এটি নিজে স্বয়ং একটি পূর্ণাঙ্গ অসুস্থতা নয়। ৯৮.৬ ডিগ্রীর বেশি তাপমাত্রাকে জ্বর বলে। শরীরের তাপমাত্রা ১০৬° ফারেনহাইট এর উপরে উঠলে তাকে Hyperpyrexia বলে। আজকের আলোচনাতে আমি জ্বর কি জ্বরের কারণ, জ্বরের প্রকারভেদ, নিদান,  লক্ষণ ও চিকিৎসা ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করব।

জ্বরের প্রকারভেদঃ

এখন আমরা জ্বরের প্রকারভেদ নিয়ে আলোচনা করব। বিভিন্ন প্রকারের জ্বর আছেঃ

একুইট ফিভারঃ জ্বরের ভোগকাল সাত দিনের কম হলে তাকে Acute Fever বলে।

সাব একুইট ফিভারঃ জ্বরের ভোগ কাল ১৪ দিনের কম হলে তাকে Subacute fever বলে।

ক্রনিক ফিভারঃ ১৪ দিনের বেশি জ্বরের ভোগকাল হলে তাকে Chronic fever বা Persistent fever বলে।

পাইরেক্সিয়াঃ শরীরের কোন টিস্যু বা যন্ত্রে আঘাত লেগে জ্বর হলে তাকে Pyrexia বলে।

জ্বরের প্রকারভেদ, ব্যবস্থাপনা এবং চিকিৎসা
জ্বরের প্রকারভেদ

জ্বরের কারণঃ

শরীরের অভ্যন্তরীণ কোন বিশৃঙ্খলা যেমন ইনফেকশন, টক্সিন, বা বিষাক্ত পদার্থ জমা হলে ও তা রক্তে মিশলে বা এরুপ অজানা কোনো কারণে জ্বর হলে তাকে FUO বা Fever if unknown origin বলে।

জ্বরের নিদানঃ

শরীরে তাপমাত্রার বৃদ্ধি, নাড়ীর গতি বৃদ্ধি, শ্বাস-প্রশ্বাসের অসামঞ্জস্যতা সাথে সর্বাঙ্গীন অসুস্থতা সহ কিছু ক্ষেত্রে স্নায়বিক বিকার ও প্রলাপ বকা, শিরঃপীড়া শরীরে বেদনা সহ দুর্বলতা, বমি বমি ভাব, কোষ্ঠবদ্ধতা, অরুচি ইত্যাদি পরিস্থিতি তৈরি হয় জ্বর হলে।

সাধারণত জ্বর তিন প্রকারঃ

Simple continued fever: একজ্বর বা অবিরাম জ্বর।

Remitted fever: স্বল্প বিরাম জ্বর যা মাঝে মাঝে কমে আসে কিন্তু পুরো ছাড়ে না

Intermediate fever: সবিরাম জ্বর যেমন ম্যালরিয়া।

এছাড়াও আরো কয়েক প্রকারের জ্বর আছেঃ

Caterel fever-সর্দি জ্বর, 

Hectic fever- ক্ষয় জ্বর। ক্ষয় রোগের সাথে জ্বর

Rheumatic fever বাতজ্বর 

As a symptom of other diseases, 

Adynamic fever জোরে উত্তাপ খুব বেশি নয় কিন্তু প্রচন্ড দুর্বলতা।

জ্বরের লক্ষণঃ

জ্বর হলে শরীরে স্বাভাবিকের তুলনায় অধিক টিস্যু ধ্বংস হয়। শরীরে এলবুলবুমিন, ফাইব্রিন, মেদ ও টিস্যু সমূহ ধ্বংস হয়। রক্তে RBC এর সংখ্যা কমে যায়। জ্বরে শরীরে ইউরিয়া, ইউরিক অ্যাসিড, কার্বলিক অ্যাসিড প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন হয় ও তা বের হতে পারে না। এই দূষিত পদার্থসমূহ শরীরের উত্তাপ বৃদ্ধি করে অন্যান্য আনুষঙ্গিক উপসর্গের প্রকাশ করে।

জ্বর চিকিৎসায় লক্ষণ বিবেচনাঃ

জ্বরে প্রধান প্রধান শারীরিক অসুবিধা দেখতে হবে। জ্বর কখন বাড়ে?  কখন কমে? শরীরে কোন উদ্ভেদ বের হয়েছে কিনা? বা উদ্ভেদ বের হওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা? কোন স্থানে বেদনা আছে কিনা? ক্রিয়া বিকার আছে কিনা? প্রলাপ বকা আছে কিনা ইত্যাদি ভালো করে খেয়াল করতে হবে।

জ্বরে নাড়ী ও স্বাস-প্রশ্বাসের গতিঃ

সুস্থ অবস্থায় নাড়ীর গতি প্রতি মিনিটে ৭০ থেকে ৮০ বার এবং শ্বাস প্রশ্বাস ১৬ থেকে ১৮ বার। সামান্য তারতম্য হতে পারে। প্রতি ১ ডিগ্রি উত্তাপ বৃদ্ধিতে ৮ বার স্পন্দন বৃদ্ধি পায় এবং শ্বাস-প্রশ্বাস ২/৩ বার বৃদ্ধি পায়। জ্বর অবস্থায় নাড়ীর গতি ১২০ থেকে ১৬০ বার পর্যন্ত হতে পারে। জ্বরের অভ্যন্তরীণ কারণ হিসেবে বলা যায় যে, অন্যান্য রোগের ন্যায় জ্বরের আমার একটি পৃথক ব্যাসিলাস আছে। আর জ্বরের উত্তেজক কারণগুলো হলো হঠাৎ অতিরিক্ত ঠান্ডা লাগা বা গরম লাগা, আহার বিহারে অনিয়ম বা অমিতাচারিতা, অতিরিক্ত শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রম, রক্ত দূষিত হওয়া, কীটপতঙ্গের দংশন, ভয় পাওয়া ইত্যাদি। এছাড়াও কানের সংক্রমণ, মূত্র থলির সংক্রমণ, দাঁত ব্যথা ও মাড়িতে ইনফেকশন, নানাবিধ ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমন ইত্যাদি থেকে জ্বর হতে পারে।

বিঃদ্রঃ সাধারন জ্বর বেশীরভাগ ক্ষেত্রে কোন চিকিতসা ছাড়া এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। তবে শিশু বা বয়স্কদের ক্ষেত্রে এবং যদি রোগীর অন্যান্য গুরুতর রোগ উপসর্গ থেকে থাকে ও জীবনী শক্তির প্রতিরোধ দুর্বল হয় তবে অবশ্যই চিকিৎসা নিতে হবে।

জ্বর এর হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাঃ 

জ্বরের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় সাধারণত রোগের কারণ, হ্রাস বৃদ্ধির ধারণ, শারীরিক অন্যান্য রোগ উপসর্গ এবং রোগীর সামগ্রিক লক্ষণ বিবেচনা ওষুধ নির্বাচন করতে হয়। তবে সাধারণত  যে সকল ওষুধগুলো প্রায় বিবেচনা করার প্রয়োজন হয় সেগুলো হলঃ

একোনাইট, সালফার, নাক্স ভমিকা, বেলেডোনা, ব্রায়োনিয়া, জেলসিমিয়াম, আর্সেনিক এল্বাম, পালসেটিলা, চায়না, ওপিয়াম, এন্টিম টার্ট, ফসফরাস, নেট্রাম মতিউর, থুজা, মার্ক সল,

রাস টক্স, এন্টিম ক্রুড ইত্যাদি।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ জ্বরের তাপ যখন খুব বেশি তখন ঔষধ না দেওয়া ভালো। তবে উচ্চ তাপমাত্রার যেসব জ্বর একনাগাড়ে চলতে থাকে সেসব ক্ষেত্রে ওই উচ্চ তাপমাত্রার সাথে সাথেই ঔষধ খাওয়াতে হবে। তবে ঔষধ খাওয়ানোর সাথে সাথে মাথায় ঠান্ডা জল ঢালতে হবে অথবা গামছা বা তোয়ালে দ্বারা ঘনঘন শরীর মুছে দিতে হবে। কপালে কিছুটা জলপট্টি দেওয়া যেতে পারে। 

কিছু জ্বর এমন আছে যেমন ভাইরাস জ্বর ২-৩ দিনের কমে নিয়ন্ত্রণে আসে না। সে ক্ষেত্রে লক্ষণ সাদৃশ্যে ঔষধ দিয়ে যেতে হবে। ঔষধ খাওয়ানো বন্ধ করা যাবে না।

জ্বর না কমলেও ঔষধ নির্বাচন ভুল হয়েছে ভেবে অযথা ঘন ঘন ঔষধ পরিবর্তন করা যাবে না। অন্যান্য স্বাভাবিক খাবারের সাথে চিনি, লেবুর শরবত খাওয়ালে দুর্বলতা আসবে না। 

সাধারণ প্রকৃতির জ্বর হঠাৎ আসে ও কয়েকদিন উপবাস দিলে আপনিই সেরে যায়। ঔষধের প্রয়োজন হয় না।

গুরুপাক আহার দুধ, দই, ডিম, মাংস, মাছ এবং কঠিন প্রকারের সকল খাবার নিষিদ্ধ। দুধ ফলের রস, এক বেলা ভাত ও মাছের ঝোল এবং রাত্রিতে রুটি দেওয়া যাবে।

জ্বরের বায়োকেমিক ঔষধঃ

ফেরাম ফস, ক্যালি ফস, ক্যালকেরিয়া ফস, ক্যালি মিউর, নেট্রাম ফস, নেট্রাম সালফ ইত্যাদি ঔষধ লক্ষণ বিবেচনা করে প্রয়োগ করা যেতে পারে।

আরো পড়ুনঃ
নাক্স ভমিকা ব্যাবহার ডোজ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

ডাঃ দীপংকর মন্ডল।
রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথ
১১.০৪.২০২৪

————————-

Dr. Dipankar Mondal
Dr. Dipankar Mondal
আমি ডা. দীপংকর মন্ডল। রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথ। যেকোন নতুন ও পুরাতন রোগের চিকিৎসা করার জন্য যোগাযোগ করুন।
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments