Sunday, May 19, 2024
Homeহোমিওপ্যাথিহোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা| একটি বিকল্প আরোগ্য বিধান|

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা| একটি বিকল্প আরোগ্য বিধান|

প্রাথমিক আলোচনাঃ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতি জার্মান চিকিৎসা বিজ্ঞানী ক্রিশ্চিয়ান ফ্রেডরিক স্যামুয়েল হ্যানিম্যান কর্তৃক আবিষ্কৃত একটি চিকিৎসা পদ্ধতি। ‘সমঃ সম সময়তি’ এই মূলনীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত এই চিকিতসা পদ্ধতির মূল কথা হলো ‘সদৃশ্য সদৃশ্যকে আরোগ্য করে’। যাইহোক হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার ক্ষেত্রে যেমন কিছু সুবিধা আছে, তেমনি কিছু এর অসুবিধাও আছে। আছে হোমিওপ্যাথি নিয়ে বিতর্ক। তবুও স্বমহিমায় চলছে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা যুগ যুগ ধরে। হোমিওপ্যাথির সেকাল-একাল ও আদ্যপান্ত নিয়ে আলোচনা করবো আজকে। তুলে ধরব এই চিকিৎসা দর্শন এর বিস্তারিত।

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা কি?

ক্রিশ্চিয়ান ফ্রেডরিক স্যামুয়েল হ্যানিম্যান কর্তৃক ১৮ শতকের শেষের দিকে(১৭৯৬ সাল) আবিষ্কৃত একটি চিকিৎসা পদ্ধতি হলো হোমিওপ্যাথি। এই চিকিৎসা পদ্ধতির মূলনীতি হলো ‘সদৃশ সদৃশকে আরোগ্য করে’। ‘Like cure like’. তাই এই চিকিৎসার অপর নাম হল ‘সদৃশ বিধান’।

এই নীতি অনুযায়ী একটি বিশেষ পদার্থ নির্দিষ্ট পরিমাণে সেবনে সুস্থ মানুষের দেহে যে নির্দিষ্ট রোগ লক্ষণ তৈরি হয় সেই পদার্থের সূক্ষ্ম মাত্রা সেবনে একই রকম রোগ লক্ষণ আরোগ্য হতে হয়।

হোমিওপ্যাথির ইতিহাস ও উৎপত্তিঃ 

জার্মান তৎকালীন এলোপ্যাথিক চিকিৎসক ক্রিশ্চিয়ান ফ্রেডরিক স্যামুয়েল হ্যানিম্যান(১৭৫৫-১৮৪৩) হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতির প্রবর্তন করেন। ১৮৯০ সালে স্যামুয়েল হ্যানিম্যান সিঙ্কোনা নামক একটি গাছের ছালের রস সেবন করে দেখেন তাতে ম্যালেরিয়া জ্বরের সাদৃশ্য যুক্ত লক্ষণ তৈরি হয়। তৎকালীন সময়ে ম্যালেরিয়া জ্বর সারাতে সিঙ্কনা ব্যবহৃত হতো। অর্থাৎ যে ভেষজ দ্বারা যে রোগ আরোগ্য হয় সেই ভেষজ সুস্থ মানুষ সেবন করলে সেই একই রোগ তৈরি হয়! এই অদ্ভুত ব্যাপার তিনি লক্ষ্য করলেন। এই উপলব্ধিকে ভিত্তি করে (Like cure like) ‘সদৃশ্য দ্বারা সদৃশ্যের নিরাময়’ নীতির উপর প্রতিষ্ঠা করলেন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতি।

হোমিওপ্যাথি শব্দের উৎপত্তিঃ 

গ্রীক ‘Homoios’ শব্দটির অর্থ ‘সদৃশ’। এবং ‘Pathos’ শব্দটির অর্থ ‘রোগ’। এই ‘Homoios’ শব্দটি থেকে ‘হোমিও’ এবং ‘Pathos’ শব্দটি থেকে এসেছে ‘প্যাথি’। এই কারণে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা হল ‘সাদৃশ্য দ্বারা সদৃশ্যের নিরাময়’ এই নীতির উপর গড়ে ওঠা একটি চিকিৎসা পদ্ধতি। এই চিকিৎসা পদ্ধতির মূলনীতি সহ সকল খুঁটিনাটি বিবরণ স্যামুয়েল হ্যানিম্যান তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘অর্গানন অব মেডিসিন'(Organon of medicine) এ লিপিবদ্ধ করেন। উনবিংশ শতাব্দীতে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতি পৃথিবী ব্যাপী জনপ্রিয় হয়। পৃথিবীর বহু দেশেই বর্তমানে এই চিকিৎসা বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

হোমিওপ্যাথি | একটি বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি
স্যামুয়েল হ্যানিম্যান

হোমিওপ্যাথির মূলনীতিঃ

বিশ্বজনীন প্রাকৃতিক আরোগ্য নীতি ‘হোমিওপ্যাথি’ বিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটনের গতির তৃতীয় সূত্রের উপর প্রতিষ্ঠিত। নিউটনের গতিসূত্র গুলোর তৃতীয় সূত্র হচ্ছে, ‘যখন একটি বস্তু দ্বিতীয় কোন বস্তুর উপর বল প্রয়োগ করে তখন দ্বিতীয় বস্তুটি প্রথম বস্তুর উপর সমান ও বিপরীতমুখী বল প্রয়োগ করে’। এই নীতি অনুযায়ী সদৃশই একমাত্র সদৃশকে বিতাড়িত করতে পারে। সমগুণ সম্পন্ন দুটি বস্তু একই স্থানে থাকলে তা একে অপরকে বিকর্ষণ করে। তার বাস্তব প্রমাণ আমরা দেখি দুই খন্ড চুম্বকের উত্তর মেরু একই স্থান বরাবর আনলে তারা পরস্পরকে বিকর্ষণ করে। তাই হোমিওপ্যাথির আরোগ্য নীতি হলো ‘সিমিলিয়া সিমলিবাস কিউরেন্টার’ বা ‘Let like cured by like’. সংস্কৃত ভাষায় একে বলা হয় সমঃ সমঃ শময়তি। অর্থাৎ রোগশক্তি এবং অসুখ শক্তির সাদৃশ্য হলে তবেই রোগ বিতাড়িত হবে। এটিই এই চিকিৎসা পদ্ধতির অন্যতম মূলনীতি। 

এই চিকিৎসার আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি হলোঃ 

সামগ্রিকতাঃ কোন বিশেষ একটি রোগের উপরে নয় বরং রোগীর শরীরে প্রকাশিত সকল শারীরিক ও মানসিক রোগ লক্ষণ সংগ্রহ করে(Totality of symptom) সেই লক্ষণ এর সাদৃশ্যে একই সময়ে একটি মাত্র হোমিওপ্যাথিক শক্তিকৃত ঔষধ প্রয়োগ করা হয়।

ব্যক্তিগতকরণঃ এই নীতি অনুযায়ী একই রোগের জন্য দুইজন রোগীর ক্ষেত্রে লক্ষণের ভিন্নতা থাকলে একই ঔষধ নির্বাচন করা যাবে না। অর্থাৎ একই রোগের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তির ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন ওষুধ প্রযুক্ত হতে পারে।

একক ঔষধঃ হোমিওপ্যাথিক নীতি অনুযায়ী রোগ নয় রোগীর চিকিৎসা করতে হবে। বলা হয় ‘Treat the patient not the disease’. একই সময়ে একটা মাত্র শক্তিকৃত ঔষধ প্রয়োগের দ্বারা চিকিৎসা করা হয়ে থাকে।

শক্তিকৃত ঔষধঃ মূল ভেষজ উপাদান স্থুল আকারে থাকে। একে ডাইলিউশন ও ডায়নামাইজেশন দ্বারা সূক্ষ্মশক্তির স্তরে নিতে হয়।

ক্ষুদ্রতম মাত্রাঃ হোমিওপ্যাথিক ঔষধকে যতটা সম্ভব অল্পমাত্রায় বা ক্ষুদ্রতম মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে।

হোমিওপ্যাথিক ঔষধ তৈরি ও প্রয়োগঃ 

সাধারণত ৭টি উৎস হতে হোমিওপ্যাথিক শক্তিকৃত ঔষধ তৈরি ও প্রস্তুত হয়। উৎসগুলো হল উদ্ভিজ্জ, খনিজ, প্রাণিজ, নোসড, সারকোড ইত্যাদি।

এই সকল উৎস হতে সংগৃহীত ঔষধজ মূল উপাদান কে হোমিওপ্যাথিক ফার্মাকোপিয়ার নিয়ম অনুযায়ী ডাইলিউশন(তরলীকরণ) এবং ডাইনামাইজেশন(ঝাঁকি দ্বারা শক্তিকরণ)দ্বারা একটা সূক্ষ স্তরে নেওয়া হয়।

সাধারণত জটিল কঠিন ও মারাত্মক রোগ গুলোতে শক্তিকৃত হোমিওপ্যাথিক ঔষধ ক্ষুদ্রতম মাত্রায় প্রয়োগ করতে হয়।

ঔষধের শক্তিঃ ভেষজকে ফার্মাকোপিয়ার নিয়ম অনুযায়ী ডাইলিউশন এবং ডাইনামাইজেশন করতে করতে শক্তির একটি সুক্ষ স্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। যেমন নাক্স ভমিকা ২০০ বা ১০এম। সালফার ১এম ইত্যাদি। এগুলো হলো হোমিওপ্যাথিক শক্তিকৃত ঔষধ।

ঔষধের মাত্রাঃ সূক্ষ্মশক্তির ঔষধ যখন কোন রোগের জন্য নির্বাচিত হয় তখন এই শক্তিকৃত ঔষধকে রোগীকে প্রয়োগের জন্য পুনরায় প্রস্তুত করতে হয়। এক কাপ জলের ভেতর যদি সালফার ২০০ শক্তির একফোঁটা ঔষধ মেশানো হয় তবে এটি স্থূল মাত্রা হলো। কিন্তু যদি এই এক কাপ জলে একফোঁটা ঔষধ দিয়ে তার সবটা গ্রহণ না করে এখান থেকে এক চামচ পরিমাণ গ্রহণ করা হয় তবে তা আরো সূক্ষ্ম মাত্রা হলো।

এক ফোটা নাক্স ২০০ শক্তির ঔষধ দ্বারা ২০০ টি গ্লোবিউলস সিক্ত করে তার থেকে একটি গ্লোবিউলস সেবন করলে সেটি ক্ষুদ্রতম মাত্রা হয়। এখন এই একটি গ্লোবিলস যদি এক কাপ জলে মিশিয়ে সেখান থেকে এক চামচ সেবন করা হয় তবে তা আরো ক্ষুদ্রতম মাত্রা হলো। এটি সাধারণ হিসেবে কিছুটা অবিশ্বাস্য হলেও বাস্তবে এটি ক্রিয়াশীল হয় তা বহুল পরিক্ষীত।

হোমিওপ্যাথির সুবিধা ও অসুবিধাঃ 

কম বেশি বিতর্ক ও সমালোচনা থাকার পরেও এক হ্যামিমান থেকে সমগ্র বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়েছে যে হোমিওপ্যাথি তা নিশ্চয়ই হোমিওপ্যাথি নিজস্ব কৃতিত্ব। যুগ যুগ ধরে যে হোমিওপ্যাথি টিকে আছে তা রোগীরা এই চিকিৎসা দ্বারা উপকৃত হচ্ছে বলেই। অন্য সব কিছুর মতোই হোমিওপ্যাথিরও কিছু সুবিধা এবং কিছু সুবিধা আছে। এখন আমরা সেই সম্বন্ধে আলোচনা করব।

হোমিওপ্যাথির সুবিধা-

নিরাপদ ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া মুক্তঃ কিছু ব্যাতিক্রম ক্ষেত্র ব্যতীত ঔষধের ভুল প্রয়োগ থেকে যে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হয়ে থাকে তা তুলনামূলকভাবে খুবই কম। সাধারণত হোমিওপ্যাথি ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে। ফলে এটি শিশু থেকে বৃদ্ধ এমনকি গর্ভকালীন সময়ে মা ও শিশুর ক্ষেত্রেও হোমিওপ্যাথিক শক্তিকৃত ঔষধ শতভাগ নিরাপদ ও কার্যকরী। 

কার্যকরী চিকিৎসাঃ হোমিওপ্যাথিতে প্রায় সকল ধরনের জটিল কঠিন ও পুরাতন রোগের চিকিৎসা আছে।

প্রাকৃতিক চিকিৎসা পদ্ধতিঃ হোমিওপ্যাথিক শক্তিকৃত ঔষধে রাসায়নিক কোন উপাদান থাকে না। যে কোন ভেষজের মূল উপাদান কে ডাইলিউশন এবং ডাইনামাইজেশন করে এমন একটা স্তরে নিয়ে যাওয়া হয় যেখানে অদৃশ্য সূক্ষ শক্তি থাকে। 

সামগ্রিক চিকিৎসাঃ হোমিওপ্যাথি রোগীর কোন বিশেষ রোগের উপর ঔষধ প্রদান করে না। রোগীকে সামগ্রিকভাবে বিবেচনা করে ঔষধ প্রয়োগ করা হয়। ফলে রোগীর জীবনী শক্তি ও সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়। 

কম খরচঃ অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতির তুলনায় হোমিওপ্যাথিতে অনেক কম খরচ করে চিকিৎসা নেওয়া যায়।

হোমিওপ্যাথিক ঔষধের অসুবিধা- 

কার্যকারিতা নিয়ে বিতর্কঃ কিছু লোক হোমিওপ্যাথির কার্যকারিতা বিশ্বাস করে না। ফলে তারা এই চিকিৎসা নিতে আগ্রহী হয় না এবং অপরকেও তারা এই চিকিৎসার বিষয়ে নিরুৎসাহিত করে।

আরোগ্যের গতি সম্পর্কে ভুল ধারণাঃ অনেকে মনে করে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ ধীরে ধীরে কাজ করে। প্রকৃত অর্থে এই ভাবনা সঠিক নয়। কেননা অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে সঠিক ঔষধ নির্বাচিত হলে এবং ঔষধের শক্তি ও মাত্রা সঠিক থাকলে তা অন্যান্য চিকিৎসার তুলনায় কয়েক গুণ দ্রুত রোগীকে আরোগ্য করে। তবে কিছু রোগ যেমন বড় টিউমার, আঁচিল, পুরাতন একজিমা ইত্যাদি আরো অনেক রোগ আছে যেগুলোর অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতিতে কার্যকরী কোন চিকিৎসা নেই। যেমন টিউমার সার্জারি ছাড়া কোন ঔষধে আরোগ্য হয় না।

আঁচিলের বেলাতেও তাই। এসব ক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথি ম্যাজিক দেখাতে পারে। টিউমার, আচিঁল এসব শুধুমাত্র হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দ্বারা বিনা সার্জিক্যাল অপারেশনে আরোগ্য হতে পারে। তবে এসব ক্ষেত্রে কিছুদিন নিয়মিত ওষুধ সেবন করতে হয়। এই সকল রোগে আরগ্যের গতি কিছুটা ধীর দেখে অনেকে হোমিওপ্যাথিকে ধীরগতি সম্পন্ন চিকিৎসা পদ্ধতি বলে মনে করেন। কিন্তু অন্য অনেক রোগ হোমিওপ্যাথিতে এতো দ্রুত আরোগ্য লাভ করে যা অকল্পনীয়।

যোগ্য চিকিৎসকের অভাবঃ হোমিওপ্যাথির মৌলিক তত্ত্ব কিছুটা সূক্ষ্ম স্তরের। তাই ধৈর্যের যথেষ্ট সাধনা ব্যতিরেকে একজন আদর্শ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক হয়ে ওঠা কঠিন। এরকম হোমিওপ্যাথিক সাধক চিকিৎসক তুলনামূলকভাবে কম। অর্থাৎ হোমিওপ্যাথিতে জটিল কঠিন ও দুরারোগ্য রোগের জন্য সুন্দর সুন্দর ঔষধ আছে বটে কিন্তু তা খুজে বের করার মত দক্ষ চিকিৎসক পরিমাণে কম। কেননা হোমিওপ্যাথিতে রোগ নির্ণয় ও ঔষধ নির্বাচন প্রক্রিয়া তুলনামূলক জটিল অন্য চিকিৎসা পদ্ধতিগুলো থেকে।

হোমিওপ্যাথিক ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াঃ

হোমিওপ্যাথিক ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নিয়ে ইতিবাচক এবং নেতিবাচক উভয় প্রকার আলোচনা সমালোচনা রয়েছে কেউ কেউ মনে করেন হোমিওপ্যাথিক ঔষধের পার্শপ্রতিক্রিয়া সাময়িক ও খুব হালকা ধরনের হলেও ঔষধের অতিরিক্ত ব্যবহারের জন্য কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া অবশ্যই দেখা দেয়। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া গুলোর মধ্যে রয়েছে অস্থায়ী রোগ লক্ষণের বৃদ্ধি, এলার্জিক সমস্যা সৃষ্টি ইত্যাদি।

আবার কোন কোন সমালোচক মনে করেন যেহেতু হোমিওপ্যাথিক ঔষধ এ কোন সক্রিয় উপাদান থাকে না তাই এর কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। ঔষধজ প্রতিক্রিয়াকে তারা প্লাসিবো এফেক্ট মনে করে থাকেন।

তবে আদর্শ বিবেচনা এই যে, হোমিওপ্যাথিক ঔষধের অবশ্যই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে। ঔষধগুলো প্রুভিং করার সময় প্রুভারদের বারবার একই ঔষধ নিয়মিত কিছুদিন সেবন করানো হয়েছিল। তার ভলে তাদের প্রত্যেকের শরীরে একই প্রকার রোগলক্ষণ দেখা দিয়েছিল। এবং সেই সকল লক্ষণাবলী হোমিওপ্যাথিক মেটিরিয়া মেডিকা তে ঔষধের লক্ষণ হিসেবে লেখা হয়েছে। অর্থাৎ এটি নিশ্চিত যে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ নির্বিচারে অধিক দিন সেবনে ঔষধজ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেবে।

এছাড়াও রোগশক্তির থেকে ঔষধ শক্তি অধিক হলে ঔষধজ প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে। ভুল ঔষধ অধিক মাত্রায় সেবনে ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। মুমূর্ষ রোগীদের ক্ষেত্রে, যাদের জীবনী শক্তি দুর্বল তাদের অবশ্যই ঔষধ জলে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। হ্যানিম্যানের অর্গাননে বলা আছে আমাদের জীবনী শক্তি একই শক্তির শক্তিকৃত হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দ্বিতীয় বার গ্রহণ করে না। তাই ঔষধকে কিঞ্চিত জলের সাথে মিশিয়ে কয়েকটি ঝাঁকি দিলে ঔষধের শক্তির কিছুটা তারতম্য হয়। তখন সেটি ব্যবহার উপযোগী হয়। একই শক্তির ঔষধ ঘন ঘন বারবার ব্যবহারে রোগবৃদ্ধি হতে পারে। আর মুমূর্ষ রোগীদের এরূপ ঔষধজ বৃদ্ধি সহ্যের ক্ষমতা নাও থাকতে পারে।

বাংলাদেশে হোমিওপ্যাথিঃ 

১৯ শতকের মধ্যভাগে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বাংলাদেশে প্রবেশ ও বিকাশ লাভ করে এবং দ্রুত জনপ্রিয় হয়। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার জন্য বর্তমানে বাংলাদেশে সরকারি, বেসরকারি অনেক হাসপাতাল ক্লিনিক এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বিশেষ করে ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনেক প্রাইভেট ক্লিনিক ও চেম্বারে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা সেবা প্রদান করছেন বহু হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক। বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক সকল জেলা সদর হাসপাতাল এবং উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা গ্রহণের পূর্বেঃ

১) যেকোনো রোগে একজন অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
২) চিকিৎসককে রোগের সমস্ত ইতিহাস খুলে বলুন।
৩) আপনি অন্য কোন ঔষধ সেবন করছেন কিনা তা চিকিৎসাকে জানান।
৪) ধৈর্য ধারণ করুন। চিকিৎসকে সময় দিন। খুব ঘনঘন চিকিৎসক বদলাবেন না। চিকিৎসক বদলাতে হলে নির্দিষ্ট সময় অপেক্ষা করার পর যৌক্তিকভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন।

আরো পড়ুনঃ
আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার মূলতত্ত্ব

ডাঃ দীপংকর মন্ডল
রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথ।
১১.০৩.২০২৪

—————————–

Dr. Dipankar Mondal
Dr. Dipankar Mondal
আমি ডা. দীপংকর মন্ডল। রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথ। যেকোন নতুন ও পুরাতন রোগের চিকিৎসা করার জন্য যোগাযোগ করুন।
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments