Sunday, May 19, 2024
Homeযোগাসনযোগাসন এর অনুশীলন করুন জীবন বদলাবেই

যোগাসন এর অনুশীলন করুন জীবন বদলাবেই

ভূমিকাঃ যোগাসন একটি অত্যন্ত পুরাতন মানসিক ও শারীরিক কৌশলগত অনুশীলন। এটি এমন একটি জীবনধারা যেখানে শরীর মন এবং আত্মা একসাথে গেঁথে যায়। এটি শরীর চর্চার বিভিন্ন ভঙ্গি, শ্বাস-প্রশ্বাসের নিয়ন্ত্রণ এবং ধ্যানের মেলবন্ধন দ্বারা গঠিত। ইংরেজিতে এটিকে Yoga posture বলে।

যোগাসন কাকে বলে? 

শরীর ও মনকে সুস্থ রাখতে সাহায্যকারী Yoga posture দুটি সংস্কৃত শব্দ ‘যোগ’ এবং ‘আসন’ থেকে এসেছে। যোগ সংস্কৃত শব্দটির অর্থ হল যুক্ত করা বা মিলন আর আসন শব্দটির অর্থ বসার ভঙ্গিমা। অর্থাৎ যোগাসন হল এমন একটি শারীরিক ভঙ্গিমা যার দ্বারা শরীর মন ও আত্মা একত্রিত হয়।

যোগাসন এর উৎপত্তিঃ 

যোগাসনের উৎপত্তি ভারতে। বিভিন্ন গ্রন্থসূত্র থেকে জানা যায় সিন্ধু সভ্যতার সময়কাল থেকেই এই Yoga posture প্রচলিত রয়েছে। প্রত্নতাত্মিক প্রমাণ হিসেবে ৫০০০ বছরের পুরাতন কিছু যোগী মূর্তি পাওয়া গেছে যারা যোগাসনের ন্যায় ধ্যানের ভঙ্গিতে বসে আছে। ধর্মীয় গ্রন্থ হিসেবে ২০০০ বছরের পুরাতন পাতঞ্জলির যোগসূত্র এবং পাঁচ হাজার বছরের পুরাতন উপনিষদে এই যোগাসনের উল্লেখ পাওয়া যায়। এমনকি শ্রীমদ্ভগবত গীতাতেও যোগাসনের উপরে অনেক শ্লোক আছে। যোগাসনের উৎপত্তির সময়কাল নির্দিষ্ট করে বলা না গেলেও এ সকল প্রমাণ থেকে ধারণা করা হয় যে যোগাসন অতি প্রাচীন একটি শারীরিক ও মানসিক অনুশীলন কৌশল।

যোগাসন এর অনুশীলন করুন জীবন বদলাবেই
যোগাসন

যোগাসন কত প্রকার?

বিভিন্ন প্রকারের যোগ রয়েছে। বিশেষ কিছু গুরুত্বপূর্ণ যোগের উল্লেখ করছি-

হঠ যোগঃ শরীর ও মনের সুস্থতার ও একাগ্রতার জন্য বিশেষ সাধনা ও যোগাভ্যাসের উপর ভিত্তি করে এটি বিস্তৃত।

অষ্টাঙ্গ যোগঃ পাতঞ্জল যোগ সূত্রের উপর ভিত্তি করে আটটি ধারণা অনুসরণ করে এই যোগ পদ্ধতি ক্রিয়াশীল।

রাজযোগঃ রাজযোগ অভ্যাসের ফলে মনঃসংযোগ একাগ্র হয়। আর মনঃসংযোগ একাগ্র হলে জ্ঞান লাভ হয়। রাজযোগ অনুশীলন করতে মনের বহির্মুখী গতিকে অন্তর্মুখি করতে হয়। মনের সকল শক্তিকে কেন্দ্রীভূত করে মনের উপরেই তা আরোপ করতে হয়। তখন মন নিজেকে পাঠ করতে পারে এবং তার ফলে সে নিজের প্রকৃতিকে জানতে পারে। তখন মনের সংহত সেই শক্তি তার অন্তরঙ্গ প্রদেশের রহস্যকে ভেদ করতে পারে। সূর্যের প্রকাশে যেমন অন্ধকার দূরীভূত হয় তেমনি জ্ঞানের প্রকাশ হলে তখন জগতের অন্ধকার দূরীভূত হয় এবং জ্ঞান লাভ হয়। আমাদের অন্তর্জগতের স্থুল অথবা সূক্ষ্ম রুপই হলো আমাদের সম্মুখে দৃশ্যমান এই বহির্জগৎ। জ্ঞান এই শিক্ষা দেয় আমাদের। 

পতঞ্জলির যোগসূত্র রাজযোগের সবচেয়ে প্রামাণ্য শাস্ত্র গ্রন্থ।

জ্ঞানযোগঃ জ্ঞান অর্জন দ্বারা আধ্যাত্মিক মুক্তির সাথে সম্পর্কিত।

কর্মযোগঃ কর্মফল ত্যাগ দ্বারা কর্তব্য কর্মের অনুষ্ঠান করে কর্মের বন্ধন থেকে মুক্তির কথা বলে।

ভক্তি যোগঃ প্রেম ভক্তি সহকারে ঈশ্বরের সেবার সাথে সংশ্লিষ্ট।

আরো পড়ুনঃ
যোগমুদ্রার উপকারিতা| জনপ্রিয় ১০ টি যোগ মুদ্রার নাম|

যোগাসনের উদ্দেশ্যঃ

যে বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে যোগের অনুশীলন করা হয় তা হল- 

১) শারীরিক শক্তি ও সহনশীলতা বৃদ্ধি করা।
২) শারীরিক সুস্থতা লাভ করা।
৩) শরীরের রক্ত সঞ্চালনকে বৃদ্ধি করে।
৪) পেশি ও অস্থিকে শক্তিশালী করে।
৫) শরীরের পেশি বৃদ্ধি করে শরীরকে সবল করে।
৬) শরীরের ওজন কমিয়ে শরীরকে মেদহীন করে।
৭) আধ্যাত্মিক উন্নতি লাভ করে ঈশ্বরের প্রতি র প্রেম অর্জন করা যায়।
৮) হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।
৯) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

যোগাসনের উপকারিতাঃ

নিয়মিত যোগের অনুশীলন দ্বারা নানাবিধ শারীরিক ও মানসিক উপকার পাওয়া যেতে পারে যেমন-

শারীরিক সুস্থতাঃ যোগের অনুশীলন শরীরের বিভিন্ন সন্ধি ও পেশীর নমনীয়তা বাড়ায়। হজমশক্তির উন্নতি হয়, শরীরের রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

মানসিক সুস্থতাঃ মানসিক চাপ, বিষন্নতা, হতাশা, উদ্বেগ ইত্যাদি কমাতে যোগের অনুশীলন সাহায্য করে। মনকে শান্ত করে এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে নিয়মিত যোগানশীলন।

আধ্যাত্মিক উন্নতিঃ আত্মজ্ঞান লাভ এবং আধ্যাত্মিক উন্নতি লাভ করতে সাহায্য করে যোগের অনুশীলন। নিয়মিত যোগ অনুশীলন ব্যক্তির আত্মসচেতনতা বৃদ্ধি করে। আত্মিক আনন্দ খুঁজে পেতে সাহায্য করে।

কিছু জনপ্রিয় যোগাসনঃ

সূর্য নমস্কারঃ সকল অঙ্গ ও সকল পেশীর ক্রিয়াশীলতা বৃদ্ধি করে।

বজ্রাসনঃ হজম ক্রিয়া বৃদ্ধি করে হজম শক্তি বাড়ায়।

পদ্মাসনঃ ধ্যানের সহযোগিতা করে।

শবাসনঃ শরীর ও মনকে প্রশান্ত ও নির্মল করে। ক্লান্তি নাশ করে। প্রত্যেকটা আসনের শেষে শবাসনে বিশ্রাম নেওয়া উচিত।

ভুজঙ্গাসনঃ মেরুদন্ডের নমনীয়তা রক্ষা করে।

তৈলাঙ্গাসনঃ পেটের পেশী দৃঢ় হয়। হার্নিয়া প্রতিরোধ করে।

অর্ধকুর্মাসনঃ শরীর শিথিল হয় এবং মন শান্ত হয়।

এখানে মনে রাখতে হবে সকলের জন্য একই আসন উপযোগী নয়। শারীরিক ও মানসিক অবস্থা, পছন্দ ও উদ্দেশ্যের উপর নজর রেখে আসন নির্বাচন করতে হয়। যোগাসন শুরু করতে হলে অবশ্যই একজন প্রশিক্ষকের পরামর্শ নেওয়া উত্তম।

যোগাসন শুরু করার টিপসঃ

এটি একটি গুরুমুখী বিদ্যা। যোগাসন অনুশীলন শুরু করার জন্য যে সকল বিষয়ে নজর রাখতে হবেঃ

অভিজ্ঞ শিক্ষকের সহযোগিতাঃ যোগের শিক্ষা একজন অভিজ্ঞ শিক্ষকের সহযোগিতা ও তত্ত্বাবধানে শুরু করলে শারীরিক ভঙ্গি গুলি শেখা সহজ হবে এবং প্রাথমিক অবস্থায় কোন দুর্ঘটনা বা আঘাত পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।

নিজের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে সচেতনতাঃ শারীরিক কোন ত্রুটি বা অসুস্থতা থাকলে তা সচেতন ভাবে বিবেচনা করতে হবে।

নিয়মিত অনুশীলনঃ নিয়মিত যোগের অনুশীলন করলে কাঙ্ক্ষিত ভালো লাভ সম্ভব হবে।

যোগের কৌশলঃ

সাধারণত তিনটি কৌশল অবলম্বন করে যোগের অনুশীলন করা হয়।

আসনঃ বিভিন্ন শারীরিক ভঙ্গী দ্বারা Yoga posture করা যোগের অনুশীলন হয় করা হয়।
প্রাণায়ামঃ শ্বাস-প্রশ্বাসের ছন্দের ব্যবহার করে প্রাণের নিয়ন্ত্রণ করা।
ধ্যানঃ সমাধির স্তর পার হয়ে ধ্যানে মগ্ন হওয়া।

যোগাসনে সতর্কতাঃ

যোগের অনুশীলন করার সময় কিছু বিষয়ে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।

১) শারীরিক কোন সীমাবদ্ধতা বা ত্রুটি বা রোগাবস্থা থাকলে তা বিবেচনায় রাখতে হবে।
২) অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ ও দক্ষ প্রশিক্ষকের তত্ত্বাবধানে যোগ অনুশীলন করতে হবে।
৩) ধীরে ধীরে ও ক্রমান্বয়ে অনুশীলনের মাত্রা বাড়াতে হবে। অর্থাৎ হঠাৎ করেই খুব কঠিন আসন অনুশীলন করা যাবে না। তাতে শারীরিক ক্ষতি হতে পারে।

উপসংহারঃ সুস্থ ও সুন্দর জীবনের জন্য যোগ ব্যায়ামের গুরুত্ব অপরিসীম। মানসিক ও শারীরিক প্রশান্তির রহস্য লুকিয়ে আছে শরীরের সুস্থতার মধ্যে। আর সঠিক ও নিয়মিত যোগাসন থেকে শারীরিক সুস্থতা আসতে পারে। যোগাসনের নিয়মিত অভ্যাস শারীরিক মানসিক ও আত্মিক সুস্থতা এবং আধ্যাত্মিক সচেতনতা প্রদান করে। Yoga posture এর ইতিবাচক পরিবর্তনের প্রভাবে আপনার জীবনকে বদলে যাবে।

আরো পড়ুনঃ
আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার মূলতত্ত্ব

ডা. দীপংকর মন্ডল।
রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথ।
২০.০৩.২০২৪

————————-

Dr. Dipankar Mondal
Dr. Dipankar Mondal
আমি ডা. দীপংকর মন্ডল। রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথ। যেকোন নতুন ও পুরাতন রোগের চিকিৎসা করার জন্য যোগাযোগ করুন।
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments