Sunday, May 19, 2024
Homeপ্রাকটিস অব মেডিসিনউচ্চ রক্তচাপ| আপনি চাইলেই এই নিরব ঘাতক কে প্রতিরোধ করতে পারেন|

উচ্চ রক্তচাপ| আপনি চাইলেই এই নিরব ঘাতক কে প্রতিরোধ করতে পারেন|

প্রাথমিক আলোচনাঃ আজকের এই আলোচনাতে আমি ব্লাড প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ মাপার নিয়ম, উচ্চ রক্তচাপের কারণ, উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ, উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায়, তাৎক্ষনিক ভাবে উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায়,   এবং এই সম্বন্ধীয় বিস্তারিত আলোচনা করব।

উচ্চ রক্তচাপ একটি নীরব ঘাতক বা সাইলেন্ট কিলার। এটি ভেতর থেকে ধীরে ধীরে রোগীকে শেষ করে দেয়। তাই সঠিকভাবে ব্লাড পেশার মাপার নিয়ম কানুন জানা খুবই গুরুত্বপূর্ন।

উচ্চ রক্তচাপ কি?

ধমনীর মধ্য দিয়ে রক্ত প্রবাহের সময় ধমনীর গাত্র প্রাচীরে রক্ত যে চাপ দেয় তাকে রক্তচাপ বলে। হৃদপিণ্ড সংকোচনের সময় রক্ত ধমনী প্রাচীরে যে চাপ দেয় তাকে সিস্টোলিক ব্লাড প্রেসার বলে। আর হৃদপিণ্ড সম্প্রসারণের সময় রক্ত ধমনী প্রাচীরের গাত্রে যে চাপ দেয় তাকে ডায়াস্টলিক প্রেসার বলে।

রক্ত চাপের স্বাভাবিক মাত্রা কত?

একজন সুস্থ ব্যক্তির রক্তচাপ সাধারণত ১২০-১২৯/ ৮০ mmHg এর ভেতরে থাকবে। বিভিন্ন ব্যক্তির রক্তচাপের যে ভিন্নতা দেখা যায় তাকে আমরা চারটি ভাগে ভাগ করতে পারি।

নরমালঃ সুস্থ ব্যক্তির ক্ষেত্রে নরমাল বা স্বাভাবিক রক্তচাপ হলো 120/80 mmHg.

মাইল্ডঃ রক্তচাপ বৃদ্ধির একেবারে প্রাথমিক স্তর এটি। এই ক্ষেত্রে রক্তচাপ থাকবে সাধারণত 130/80 mmHg এর কাছাকাছি।

মডারেটঃ যখনই কোন ব্যক্তির রক্তচাপ 130-159/80 mmHg এই স্কেলের মধ্যে থাকবে তখন এটিকে মডারেট স্টেজ বলা হবে। রক্তচাপের এই অবস্থায় রোগীকে খুবই সচেতন থাকতে হবে কেননা এই অবস্থা থেকে রক্তচাপ প্রতিরোধ করা না গেলে তা রোগীর জন্য হাই ব্লাড প্রেসারের ঝুঁকি সৃষ্টি করবে।

সিভিআরঃ এই অবস্থাটি খুবই ভয়ঙ্কর। রোগী যে কোন পরিস্থিতিতে স্ট্রোক করতে পারে তাই সর্বোচ্চ সচেতন থাকতে হবে। এক্ষেত্রে রোগীর রক্তচাপের পরিমাণ 180+/110+ mmHg এই সীমা ছাড়িয়ে যাবে।

উচ্চ রক্তচাপ| জানুন এই নিরব ঘাতক সম্পর্কে|
parts of stethoscope

উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ ও কারণ:

কোন ব্যক্তির রক্তের চাপ উচ্চ থাকলে তার শরীরে কিছু অস্বস্তিকর লক্ষণ দেখা দেবে। এখন আমরা উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ নিয়ে আলোচনা করব। তার সাথে উচ্চ রক্তচাপের কারণ বিষয়ক কিছু তথ্য তুলে ধরব। 

উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণঃ অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে উচ্চ রক্তচাপ এর ক্ষেত্রে কোন শারীরিক কষ্টকর লক্ষণ পাওয়া যায় না। এটি নিরবে রোগীকে ভেতর থেকে শেষ করতে থাকে। তাই এটিকে নিরব ঘাতক বলা হয়। তবে লক্ষণ প্রকাশিত হলে সাধারণত যে রোগ উপসর্গ গুলো দেখা যায় সেগুলো হলঃ

মাথা ব্যথাঃ রোগীর প্রচন্ড মাথা ব্যথা থাকে, বিশেষত মাথার পেছন দিকেই ব্যাথাটা বেশি থাকে। এর সাথে রোগীর মাথা ঘোরাও থাকতে পারে।
বুকে ব্যথাঃ হৃদপিন্ডের অসুস্থতার কারণে বুকের বাম পার্শ্ব বরাবর ব্যাথা ও অস্বস্তি থাকতে পারে।
দুর্বলতা ও ক্লান্তিঃ রোগী অল্পতেই হাঁপিয়ে যায়। প্রচন্ড দুর্বলতা ও ক্লান্তি বোধ হয়।
শ্বাসকষ্টঃ সামান্য পরিশ্রমেই রোগীর শ্বাসকষ্ট হতে দেখা যায়।
চোখের সমস্যাঃ রোগী চোখে ঝাপসা দেখে এবং দৃষ্টি শক্তি হ্রাস পায়।

উচ্চ রক্তচাপ এর কারণঃ

জীবনাচরণের ধরনঃ অপর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রম, অস্বাস্থ্যকর আহার, জীবন যাপনে অমিতাচার, ধূমপান, মদ্যপান, অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ ইত্যাদি হাই ব্লাড প্রেসার হওয়ার ঝুঁকি তৈরি করে।

অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যাঃ ডায়াবেটিস, কিডনি সমস্যা,  হৃদপিন্ডের অন্যান্য রোগ, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা ইত্যাদি রোগাবস্থা গুলো রক্তচাপ বৃদ্ধির ঝুঁকি তৈরি করে থাকে। এছাড়াও কিছু ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াতেও উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টি হতে পারে।

পারিবারিক ইতিহাসঃ পারিবারের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের রোগী থাকলে সে ক্ষেত্রে রোগীর হাই ব্লাড প্রেসার হওয়ার ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি হয়ে থাকে।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না থাকলে হৃদরোগ, কিডনির সমস্যা, স্ট্রোক ইত্যাদি গুরতর স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করা উচিত এবং স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করা উচিত।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের উপায়ঃ

উচ্চ রক্তচাপ জীবনী শক্তির ত্রুটিবশত সৃষ্ট কোন রোগ নয় বরং এটি জীবানাচরণের অনিয়ম থেকে সৃষ্ট একটি রোগাবস্থা। এই কারণে এই রোগ প্রতিরোধ ও নিরাময় করতে স্বাস্থ্যকর জীবনাচরণের ভূমিকা অপরিহার্য।

স্বাস্থ্যকর খাবারঃ শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে এবং উচ্চ রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণ করতে অবশ্যই স্বাস্থ্যকর খাবার, শাক-সবজি, ফলমূল খেতে হবে। এর সাথে অস্বাস্থ্যকর সকল খাবার যেমন অতিরিক্ত লবণ, চর্বিযুক্ত খাবার এই সব পরিমিত করতে হবে। এর সাথে ধূমপান, মদ্যপান, তামাকজাত নেশা এই সকল পরিহার করতে হবে। 

নিয়মিত শরীর চর্চাঃ রক্তের চাপ নিয়ন্ত্রণ সহ শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখতে নিয়মিত শরীর চর্চার বিকল্প নেই।

ওজন নিয়ন্ত্রণঃ ওজন খুব বেশি হয়ে গেলে সেটি রক্তচাপের কারণ হতে পারে। তাই অবশ্যই ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

মানসিক চাপ কমানোঃ অত্যাধিক মানসিক চাপ উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। যতটা সম্ভব মানসিক চাপ কে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

নিয়মিত চেকআপঃ নিয়মিত চেকআপ করে রক্তের চাপ সম্বন্ধে নিশ্চিত থাকতে হবে। এবং সেই অনুযায়ী জীবন যাপন করতে হবে।

ঔষধঃ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য ঔষধ গ্রহন করার প্রয়োজন হলে একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে ঔষধ সেবন করতে হবে।

মনে রাখতে হবে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য ধৈর্য ধরতে হবে। ধৈর্য ধরে স্বাস্থ্যকর এবং নৈতিক জীবন যাপনের অভ্যাস করলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকতে পারে।

কখনো রক্তচাপ মাপা উচিত? 

১) কারো রক্ত চাপের ঝুঁকি থাকলে নিয়মিত ভাবে তার রক্তচাপ মাপা উচিত।
২) মাথাব্যথা, ঘাড়ে জ্বালা বিশেষত বাম পাশে ঘাড়ে জ্বালা, বমি বমি ভাব, দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি এইসব উপসর্গ থাকলে প্রেসার মেপে দেখতে হবে।
৩) যে কোনো অসুস্থতায় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রেসার মাপতে হবে।

ব্লাড প্রেসার মাপার আগে করনীয়ঃ

রক্তচাপ মাপার পূর্বে রোগীকে যে সকল কাজ করতে হবে-

১) সঠিক রিডিং পেতে রক্তচাপ মাপার অন্তর ৩০ মিনিট আগে থেকে ধূমপান, মদ্যপান, চা-কফি, জর্দা-তামাক  ইত্যাদি সেবন এবং ব্যায়াম বা এ জাতীয় শারীরিক পরিশ্রম পরিহার করুন।
২) প্রেসার মাপার পূর্বে ন্যূনতম পাঁচ মিনিট শারীরিক ও মানসিকভাবে শান্ত হয়ে থাকুন। কোন দুশ্চিন্তা করবেন না এবং কারো সাথে কথা বলবেন না।
৩) হাতের পোশাক যথাসম্ভব ঢিলা রাখুন যেন সঠিকভাবে রক্ত চলাচল করতে পারেন।

ব্লাড প্রেসার মাপার নিয়মঃ

ব্লাড প্রেসার মাপার সময় রোগী যা করবেন-
স্থানঃ আলো বাতাস যুক্ত পরিচ্ছন্ন স্থানে রোগী বসবে।
বসার ভঙ্গিঃ পিঠ সোজা করে পা মেঝেতে রেখে বসবে।  হাতটি বুক বরাবর সোজা করে রাখবে।
কাফঃ কনুই এর ঠিক উপরে হালকা ভাবে কাফ বাঁধুন।
স্টেথোস্কোপঃ এটির এক প্রান্ত(Eartips) কানে লাগাতে হবে এবং ডায়াফ্রাম কনুই এর ভাজে রাখুন।
পাম্পঃ ধীরে ধীরে পাম্প করুন।
রিডিংঃ সিস্টোলিক স্পন্দন কখন শুরু হলো এবং ডায়াস্টোলিক স্পন্দন কখন শেষ হলো খেয়াল রাখুন।
মাপ পুনরাবৃত্তিঃ দুইবার প্রেশার মাপুন। প্রয়োজনে অন্য হাতেও মাপুন। অনেক ব্যক্তিদের দুই হাতের প্রেসার এর মধ্যে পার্থক্য থাকে। যদি এই পার্থক্য ১০ mmHg বা এর চেয়ে বেশি হয় তবে বেশি মাপটি গ্রহণ করতে হবে।
মানসম্পন্ন মেশিনঃ নির্ভুল রিডিং পেতে মানসম্পন্ন বিপি মেশিন সঠিক পদ্ধতিতে ব্যবহার করুন।

সিস্টোলিক ব্লাড প্রেসার কি?

হৃদপিন্ডের সংকোচন এর সময় ধমনীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত রক্ত ধমনীর গাত্রে যে ধাক্কা দেয় তার ফলে রক্তের যে চাপ তৈরি হয় তাকে সিস্টোলিক ব্লাড প্রেসার বলে। সিস্টোলিক ব্লাড প্রেসার এর নরমাল রেঞ্জ হল 120 mmHg এর কম। তবে 129mmHg পর্যন্ত একে স্বাভাবিক ধরা যায়। উচ্চ রক্তচাপ থাকলে হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনি রোগ,  ইত্যাদি দেখা দিতে পারে এছাড়াও অন্যান্য স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়তে পারে। নিয়মিত আপনার সিস্টোলিক ব্লাড প্রেসার পরিমাপ করুন এবং প্রেসার বেশি থাকলে তা কমাতে যা করবেন-

১) স্বাস্থ্যকর খাবার পরিমিত মাত্রায় আহার করুন।
২) নিয়মিত শরীর চর্চা করুন।
৩) ধূমপান বা যেকোনো নেশা থাকলে তা পরিত্যাগ করুন।
৪) ওজন বেশি থাকলে তা কমান।
৫) মাত্রাতির মানসিক চাপ কে কম করুন।
৬) চিকিৎসকের পরামর্শে প্রয়োজন থাকলে ঔষধ সেবন করুন।

ডায়াস্টোলিক ব্লাড প্রেসার কি?

দুটি সিস্টোলিক হৃদস্পন্দন এর ঠিক মধ্যবর্তী সময়ে হার্ট সম্প্রসারিত হয়ে শিথিল হয়। এবং হৃদপিন্ডের প্রকোষ্ঠগুলি রক্ত দ্বারা পূর্ণ হয়। হৃদপিন্ডের এই সম্প্রসারণ কালে ধমনী-গাত্রে রক্ত যে চাপ প্রদান করে তাকে ডায়াস্টোলিক ব্লাড প্রেসার বলে। এই পরিমাপটি নির্দেশ করে যে রক্তনালীগুলি কতটা শিথিল এবং রক্তে পূর্ণ হয়েছে? হৃদপিণ্ড এই অবস্থায় পরবর্তী সংকোচনের জন্য প্রস্তুত হয়।

80-84 mmHg পর্যন্ত ডাস্টলিক ব্লাড প্রেসার কে স্বাভাবিক ধরা হয়। 84 mmHg এর উপরে ডাইস্টোলিক রক্তচাপ গেলে তাকে উচ্চ রক্তচাপ ধরা হবে।

সিস্টোলিক এবং ডায়াস্টোলিক এই দুইটি প্রেসারের মধ্যে যেকোনো একটি নির্দিষ্টমান থেকে বেড়ে গেলেই তাকে হাই ব্লাড প্রেসার বলা হবে। কখনো কখনো দুইটি প্রেশারই বাড়তে পারে আবার কখনো কখনো সিস্টোলিক অথবা ডায়াস্টোলিক এর যেকোনো একটি খুব বেড়ে যেতে পারে। সব সময়ই যে দুইটি প্রেসার বেশি থাকবে এমনটা নাও হতে পারে।

ডায়াস্টোলিক ব্লাড প্রেসার উচ্চ হলে সে ক্ষেত্রেও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য উপরে বর্ণিত নিয়মগুলি অনুসরণ করুন।

প্রেশার বা রক্তচাপ বলতে সাধারণত হাই ব্লাড প্রেসারকেই বোঝানো হয়। নিম্ন রক্তচাপের কোন ঔষধ বাজারে নেই। এটি জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন বা নিয়ন্ত্রণ করে নিম্ন রক্তচাপ এর মোকাবিলা করতে হয়।

মনে রাখতে হবে সিস্টোলিক প্রেসার বেশি থাকার চেয়ে ডায়াস্টোলিক প্রেসার বেশি থাকাটা অধিক ঝুঁকিপূর্ণ।

হঠাৎ প্রেসার কমে গেলে তাৎক্ষণিক কি করবেন?

সাধারণত দেখা গেছে লবণ এবং চিনি এই দুটি খাদ্য উচ্চ রক্তচাপ বাড়াতে খুব সাহায্য করে। তাই উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের এসব খাবার খুব পরিমিত করতে হয়। পক্ষান্তরে হঠাৎ প্রেসার কমে গেলে জলের সাথে একটু লবণ এবং চিনি মিশিয়ে শরবতের মতো করে খেলে সঙ্গে সঙ্গে কিছুটা প্রেসার বেড়ে যায়। বাজারে যে খাবার স্যালাইন পাওয়া যায় এটির ভেতরেও লবণ, চিনি মিশ্রিত থাকে। ফলে এটি খেলেও তাৎক্ষণিক প্রেশার বেড়ে যায়। এছাড়াও সিদ্ধ ডিম প্রেশার বাড়াতে সাহায্য করে। অর্থাৎ উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা এই সকল খাবার পরিহার করবে। এবং নিম্ম রক্তচাপের রোগীরা প্রয়োজন অনুযায়ী পরিমিত মাত্রায় এগুলো খাবে।

এখন আমরা উচ্চ রক্তচাপ সম্বন্ধে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর সম্বন্ধে জানবো।

প্রশ্নঃ ব্লাড প্রেসার কোন হাতে মাপতে হয়? 

উত্তরঃ সাধারণত মানুষের রক্তচাপ দুই হাতে কিছুটা তারতম্য হতে পারে। বলা হয়ে থাকে পুরুষের ডান হাতে এবং স্ত্রী লোকের বাম হাতে রক্তচাপ মাপতে হয়। কিন্তু এই কথা সঠিক নয়। কোন ব্যক্তির দুই হাতেই প্রেসার মাপতে হবে। যে হাতে প্রেসার বেশি পাওয়া যাবে সেই ব্যক্তির ক্ষেত্রে সেই হাতে নিয়মিত পেশার মাপতে হবে।

প্রশ্নঃ প্রেসার মাপার সঠিক সময় কখন?

উত্তরঃ ব্যক্তির ব্যক্তিগত পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে এই প্রেসার মাপার সময়। তবে সাধারণভাবে যে সময় গুলোতে প্রেশার মাপা উচিত তা হলঃ 

১) সকালে ঘুম থেকে উঠে বিছানা ছাড়ার পূর্বে।
২) বিকেলে কাজ শেষে আহারের পূর্বে।
৩) রাত্রে ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে।

প্রশ্নঃ উচ্চ রক্তচাপ কি গর্ভবতী মায়েদের জন্য ক্ষতিকর?

উত্তরঃ হ্যাঁ, হাই ব্লাড প্রেসার গর্ভবতী মায়েদের এবং শিশু উভয়ের জন্য নানাবিধ স্বাস্থ্য ঝুঁকি সৃষ্টি করে থাকে যেমন প্রি একলাম্পশিয়া, একলাম্পশিয়া, ডায়াবেটিস, গর্ভপাত, অকালপ্রসব ইত্যাদি। এই কারণে অবশ্যই গর্ভবতী মায়েদের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

প্রশ্ন উচ্চ রক্তচাপে কি খাবেন আর কি খাবেন না?

উত্তরঃ খাদ্যাভ্যাস এবং জীবানাচরণের ব্যবস্থাপনাই হলো উচ্চ রক্তচাপ কমানোর প্রাকৃতিক উপায়। যে সকল খাবার উচ্চ রক্তচাপে রোগীদের জন্য উপকারী তার মধ্যে অন্যতম হলো বিভিন্ন শাক সবজি যেমন পালন শাক, কলমি শাক, ফুলকপি, পাট শাক, টমেটো, মুলা শাক, বাঁধাকপি, লাউ, শসা, মটরশুঁটি,, ঢ্যাঁড়স, বেগুন ইত্যাদি। 

বিভিন্ন ফল যেমন কলা, পেঁপে, লেবু, আমলকী, পেয়ারা, ডালিম, জাম্বুরা, কমলা, কমলা, মাল্টা ইত্যাদি।
এছাড়াও পরিমিত পরিমাণে মাছ, মুরগির মাংস, ডাল, দই, বাদাম,
তবে কথা হল খাবার যতই পুষ্টিকর হোক আর যেমনই হোক না কেন খাবারকে পরিমিত করতে হবে। পুষ্টিকর খাবারও যদি অধিক পরিমাণে আহার করা হয় তা শরীরের জন্য ভালো নয়।

উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা যে সকল খাবার সাধারণত এড়িয়ে যাবেন তা হল।
লাল মাংস, অতিরিক্ত তেল মশলা যুক্ত খাবার, প্রক্রিয়াজাত খাবার, ফাস্ট ফুড, অ্যালকোহল, চিনিযুক্ত খাবার এবং পানীয়, ধূমপান ইত্যাদি।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ব্যক্তিগত পরিস্থিতি অনুযায়ী নিয়মিত হালকা ধরনের ব্যায়াম করুন।

উপরে উল্লেখিত খাদ্যের এই তালিকাটি একটি সাধারণ নির্দেশনা মাত্র। ব্যক্তিগত বিভিন্ন ক্ষেত্রে উপযুক্ত খাদ্যাভ্যাসের তালিকা পেতে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।

শেষ কথাঃ নিয়মিত ব্লাড প্রেসার পরিমাপ করা স্বাস্থ্যকর জীবনের জন্য অতীব প্রয়োজনীয়। সুস্থ সুন্দর জীবনের জন্য সচেতনতা অপরিহার্য।

আরো পড়ুনঃ
তাৎক্ষণিকভাবে উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায়|

ডা. দীপংকর মন্ডল।
রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথ।
১৬.০৩.২০২৪

——————————-

Dr. Dipankar Mondal
Dr. Dipankar Mondal
আমি ডা. দীপংকর মন্ডল। রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথ। যেকোন নতুন ও পুরাতন রোগের চিকিৎসা করার জন্য যোগাযোগ করুন।
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments