Sunday, May 19, 2024
Homeভেষজভৃঙ্গরাজ চুলের যত্নে| কেশরাজ গাছ এর উপকারিতা|

ভৃঙ্গরাজ চুলের যত্নে| কেশরাজ গাছ এর উপকারিতা|

ভৃঙ্গরাজ পাতার গুনাগুনঃ প্রাথমিক আলোচনাঃ

চুলের যত্ন বা চুল পড়া বন্ধ করার উপায় খুঁজতে আমরা এটা সেটা করে থাকি। বিভিন্ন জানা-অজানা পদ্ধতি ব্যবহার করে চুল পড়া ও খুশকি দূর করার উপায় খুঁজি। আজকে আমি এমন একটি ভেষজ উদ্ভিদ এর ব্যাপারে আলোচনা করব যেটির নিয়মানুযায়ী ব্যবহার করলে মাথার চুল পড়া বন্ধ ও চুল ঘন করা এবং মাথার খুশকি দূর করা সম্ভব হবে।

ভেষজটির নাম ভৃঙ্গরাজ বা কেশরাজ। এটির সাধারণ ইংরেজী নাম False Daisy. ভেষজটির আরো কিছু নাম আছেঃ কালকেশী, কেউতি, কালকেশারিয়া, কালসাতা, কেশরাজ ইত্যাদি। আয়ুর্বেদে এটিকে বাংড়া(Bhangra) বা ভৃঙ্গরাজ(Bhringaraj) বলে। কেশরাজ গাছটির Scientific name বা Botanical name হল Ectipta Prostrata Linn বা Eciptaalba Hask. এটি Asteraceae পরিবারের সদস্য। 

কেশুতি পাতার গুনাগুন চুলের যত্নে হেয়ার প্যাক
Bhringraj

ভৃঙ্গরাজ একটি বর্ষজীবী গুল্ম জাতীয় লতানো প্রকৃতির উদ্ভিদ। এর পাতার রং গাড়ো সবুজ এবং ছোট ছোট প্রকৃতির পাতাগুলো লম্বাটে ধরনের। ফুলের রং সাদা। ফল গাড় সবুজ রংয়ের। ফল পেঁকে বীজ তৈরি হয় এবং তা থেকে নতুন গাছ জন্মায়। চুলের যত্নে কেশরাজ গাছের পাতা, ফল, ফুল ও কান্ড সবই ব্যবহৃত হয়।

ভৃঙ্গরাজ পাতার উপকারিতাঃ

ভৃঙ্গরাজ বা কেশুতি পাতার ব্যবহার করে তৈরি কেশুতি পাতার তেল মাথায় ব্যবহারে চুল পড়া বন্ধ হয়, চুল কালো হয় এবং মাথার খুশকি দূর হয়। কেশুতী পাতার তেল ব্যবহারে চুল শক্ত ঘন ও মজবুত হয়। মাথার উকুনের প্রতিষেধক হিসেবেও কাজ করে এটি। চুলের যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি মাথার ত্বকের যত্ন নেয় এবং মাথা ঠান্ডা রাখে তাই চুলের যত্নে কেশুতি পাতার গুনাগুন অপরিসীম। এটি চুলে বিটামিন, মিনারেল, আরো কিছু প্রকৃতিক উপাদান সরবরাহ করে, যা চুলের স্বাস্থ্যকে উন্নত করে। 

চুলের যত্ন ব্যতীত এমনকি কেশুতি পাতার রস নিয়মিত সেবনে কৃমির উপদ্রব নাশ হয়। কোথাও কেটে গেলে সেই কাঁটা স্থানে কেশুতি পাতা বেটে রসসহ লাগালে দ্রুত রক্ত বন্ধ হয় এবং দ্রুত সেই কাটা ক্ষত আরোগ্য হয়। স্বাস্থকর জীবনযাপনের সাথে সাথে নিয়মিত কেশুতি পাতার রস সেবনে ডায়াবেটিস রোগীর রক্তে শর্করার পরিমাণ কমাতে কার্যকরী । আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে এটিকে নানা ভাবে উপকারী বলা হয়েছে।

কেশুতি পাতা কোথায় পাওয়া যায়?

কেশরাজ নামক ভেষজ উদ্ভিদটি বিশ্বব্যাপী উষ্ণ নাতিশীতোষ্ণ এবং গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে প্রচুর জন্মে। বাংলাদেশ, ভারত চীন, থাইল্যান্ড এবং ব্রাজিলে এই সকল অঞ্চলে ভৃঙ্গরাজ গাছটি যথেষ্ট পরিমাণে পাওয়া যায়। একটু নজর রাখলেই আমরা আমাদের হাতের কাছে, পাশের বাগানে বাড়ির আঙিনায় একে খুঁজে পাবো।

চুলের যত্নে কেশুতি পাতার ব্যবহারঃ

কেশুতি পাতা বেটে রস করে তা মাথায় চুলে মাখতে হবে নিয়মিত। প্রতিদিন যদি হাতের কাছে কিছু পাতার যোগান না থাকে তবে একবারে কিছু কিছু পাতা সংগ্রহ করে, বেটে রস করে সংরক্ষণ করা যাবে। নারকেল তেল বা তিলের তেলের সাথে মিশিয়ে এটিকে সংরক্ষণ করা যায়। সে ক্ষেত্রে তেল এবং কেশুতি পাতার রস একসাথে মিশিয়ে উত্তাপে ফুটিয়ে তা ঠান্ডা করে ছেঁকে সংরক্ষণ করতে হবে।

কেশুতি পাতাঃ চুলের যত্নে হেয়ার প্যাকঃ

কেশুতি পাতার হেয়ার প্যাক বা কেশুতি পাতার তেল তৈরি করতে চাইলে যে সকল উপাদান সমূহ লাগবে তা হল-
১ কাপ পরিমাণ কিছু পাতা বাটা (পাতা+বৃক্ষ+কান্ড)।
২৫০ গ্রাম নারকেল বা তিল তেল।
দুইটি আমলকি বাটা।
একটি জবা ফুল বাটা ।
সামান্য কয়েকটা মেথি ।
এক মুঠো কারি পাতা ।
( সম্ভব হলে ৮/১০ টি নিম পাতা মিশ্রণটি ফোটানোর সময় এর ভেতর দিলে তার কার্যকারিতা আরো ভালো হবে)।

কেশুতি পাতার গুনাগুন চুলের যত্নে হেয়ার প্যাক
Eclipta prostrata

হেয়ার প্যাক তৈরীর প্রক্রিয়াঃ

তেল ব্যতীত এইসব কয়টি উপাদান একসাথে মিশিয়ে ফেলতে হবে। এবার একটি প্যানে ২৫০ গ্রাম নারিকেল এর তেল ঢেলে বা তিলের তেল নিয়ে চুলার উত্তাপে গরম করতে হবে। তেলটি কিছুটা গরম হলে এর ভেতর পূর্বে তৈরি ওই মিশ্রণটি ঢেলে দিতে হবে এবং মাঝারি আঁচে পাঁচ সাত মিনিটের মতো মিশ্রণগুলোকে তেলের ভেতর ফোটাতে হবে। এবার চুলা বন্ধ করে দিয়ে মিশ্রণটি কোন একটা নিরাপদ স্থানে ছয় ঘন্টার মতো রেখে দিতে হবে। এরপর মিশ্রণটি ঠান্ডা হয়ে গেলে এবং থেতিয়ে গেলে তখন ছেঁকে নিয়ে কাঁচের বোতলে সংরক্ষণ করতে হবে। ব্যাস হয়ে গেল আপনার চুলের যত্নে হেয়ার প্যাক! এভাবে কেশুতি পাতার তেল বা কেশরাজ টনিক তৈরি করতে পারবেন এবং এটি নিয়মিত মাথায় মাখলে তা দারুন উপকারী হবে।

কেশুতি পাতার হেয়ার প্যাক চুলে মাখবার নিয়মঃ

কেশুতি পাতার ব্যাবহারে তৈরি এই হেয়ার টনিক প্রতিদিন অথবা একদিন বাদে একদিন রাত্রে ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে এভাবে নিয়মিত কিছু দিন মাথায় ব্যবহার করতে হবে। তেলটি হাতে নিয়ে মাথার তালুতে এবং সকল চুলের গোড়ায় প্রবেশ করে এভাবে লাগিয়ে দিতে হবে। এবং তারপর সমস্ত মাথার চুলে এটি ভালো করে ঘষে মাখিয়ে নিতে হবে। পরদিন সকালে শ্যাম্পু দিয়ে চুল পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।

সতর্কতাঃ রাত্রিবেলায় মাথায় তেল লাগিয়ে ঘুমাতে গেলে সেই তেল বালিশে লেগে বালিশ নষ্ট হতে পারে। এই কারণে বালিশের উপর কোন এমন পাতলা কাপড় বা গামছার আবারণ ব্যবহার করতে হবে যেটি পরদিন স্নান করার সময় ধুয়ে ফেলা যায়।

(বিঃদ্রঃ চুলের নানাবিধ সমস্যায় শরীর অভ্যন্তরে কোন মায়াজমেটিক বাধা কাজ করছে কিনা এটি অবশ্যই বিবেচনা করা উচিত। ভেতর থেকে জীবনী শক্তি সুস্থ ও সবল না থাকলে বাইরে থেকে কোন উপাদান ব্যবহার করেই শারীরিক অসুস্থতায় সুফল পাওয়া যাবে না। তাতে বরংচ দৃশ্যমান রোগটি চাপা পড়ে ভেতর থেকে অন্য নতুন রোগের সৃষ্টি হবে। তাই যে কোন রোগে ভেতর থেকে সুস্থ হওয়ার জন্য নিকটস্থ একজন অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।)

আরো পড়ুনঃ
আয়ুর্বেদ চিকিৎসার মূলতত্ত্ব

ডাঃ দীপংকর মন্ডল।
রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথ।
১১.১২.২০২৩

———————————–

Dr. Dipankar Mondal
Dr. Dipankar Mondal
আমি ডা. দীপংকর মন্ডল। রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথ। যেকোন নতুন ও পুরাতন রোগের চিকিৎসা করার জন্য যোগাযোগ করুন।
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments