অনিদ্রা দূর করতে ৭টি পরামর্শ


প্রাথমিক আলোচনাঃ অনিদ্রা রোগ বা ইনসোমনিয়া রোগে ভুগে অনেকেই নিদ্রাহীন সারারাত কাটিয়ে দেয়। এই দুঃসহ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে অনেকে অনিদ্রা দূর করার ঔষধ পর্যন্ত সেবন করে থাকে। কিন্তু তাতে কি তেমন কোন ফল হয়? প্রকৃত নিদ্রা আসে? উত্তর হল অনিদ্রার কারণ না বুঝে এবং অনিদ্রার সঠিক ব্যবস্থাপনা না জানার কারণে এই নিদ্রাহীনতার মত পরিস্থিতি থেকে আমরা সহজে বের হয়ে আসতে পারি না।

অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে যে জীবনাচরণ সংশোধন মূলক কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করলেই অনিদ্রা দূর করার ঔষধ সেবন করা ছাড়াই অনিদ্রা রোগ থেকে আমরা মুক্তি পেতে পারি। আজকের আলোচনাতে আমি অনিদ্রা রোগ দূর করতে ৭টি পরামর্শ নিয়ে আলোচনা করব। 

এই পরামর্শ গুলো ধারাবাহিকভাবে অনুশীলন করলে নিশ্চয়ই আমরা অনিদ্রা রোগ থেকে মুক্তি পাবো।


অনিদ্রা ছবি
অনিদ্রা ছবি
১) নিদ্রার রুটিন তৈরি করুনঃ প্রতিদিন বিছানায় ঘুমাতে যাওয়া এবং ঘুম থেকে ওঠার একটি নির্দিষ্ট সময়সূচী তৈরি করুন। প্রতিদিন এই রুটিনটা ফলো করলে এক ধরনের অভ্যাস তৈরি হয়ে যাবে। 
ফলশ্রুতিতে শরীর অভ্যন্তরে একটা এনার্জিটিক ফিল তৈরি হবে যা আমাদের ব্রেন কে ঘুমানোর জন্য প্রস্তুত করবে। এমনকি এই রুটিনটি ছুটির দিনেও ভফলো করতে হবে। সাধারণত রাত্রি দশটার পূর্বে ঘুমাতে যাওয়া ভালো। 
এবং পরবর্তী দিন সূর্যোদয়ের পূর্বে ঘুম থেকে উঠে যেতে হবে। পরীক্ষায় দেখা গেছে এমনকি রাত্রি দশটা থেকে রাত্রি দুইটা পর্যন্ত মাত্র এই ৪ ঘন্টা ঘুমালেও পরবর্তী সমস্ত দিন শরীরে এনার্জি ভরপুর থাকে। কিন্তু এই সময়টা না ঘুমিয়ে জেগে থেকে রাত্রি ২ টার পর পর থেকে 
একটানা আট ঘন্টা ঘুমালেও পরবর্তী সমস্ত দিন শরীরে একটা দুর্বল ভাব, ঝিমুনি ভাব ঘুম ঘুম ভাব দেখা দেয়। তাই যথাসম্ভব রাত্রিবেলা শীঘ্র শীঘ্র ঘুমাতে যাওয়া উত্তম। এক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যে দিবানিদ্রা যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। দিনের বেলায় ঘুমাবেন না 
বিশেষ করে বিকেলবেলা এবং সন্ধ্যার পুর্বে। কেননা এই সময়ে ঘুমালে রাত্রিবেলায় ঘুম আসতে চায় না। 

২) ঘুমানোর পরিবেশের স্থিতিশীলতাঃ ঘুমানোর জন্য যে কক্ষটি আমরা ব্যবহার করব সেটি সাধারণত অন্ধকারযুক্ত হতে হবে। আলুর উপস্থিতি ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
কক্ষটিতে যেন শান্ত ও নিরিবিলি পরিবেশ বজায় থাকে।
কক্ষে সহনীয় তাপমাত্রা ঘুমের সুন্দর পরিবেশ তৈরি করতে পারে। এর সাথে সাথে বিছানা, চৌকি, ঘুমের সরঞ্জাম যেমন বালিশ, তোয়ালে ইত্যাদি সকল কিছু আরামদায়ক হতে হবে। ঘুমানোর পরিবেশ আরামদায়ক না হলে সহজে ঘুম আসতে চাইবে না। তবে কোন কিছুকে অতিরিক্ত করা যাবে না।

৩) তরল সীমিত করুনঃ রাত্রিবেলায় সাধারণত হালকা আহার করাই নিয়ম। এবং এর সাথে সাথে তরল জাতীয় পানীয় সীমিত করতে হবে। অর্থাৎ রাত্রে বেলায় কোম্পানি পান করতে হবে। 
কেননা অত্যাধিক পানি পান করলে রাত্রিতে বারবার প্রস্রাবের বেগে ঘুম ভেঙে যাবে। এবং রাত্রিবেলার আহার সাধারণত সন্ধ্যার পরপরই খেয়ে নিতে পারলে তা স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য উপকারী হয়। 
কেননা রাত দশটার পর থেকে রাত দুইটা পর্যন্ত আমাদের শরীর অভ্যন্তরে ভারী খাদ্যদ্রব্য হজমের শক্তি অনেক কমে যায়?

৪) ইলেকট্রিক্যাল ডিভাইস থেকে দূরে থাকুনঃ ঘুমানোর প্রস্তুতি নেওয়ার সময় থেকেই যে কোন প্রকারের ইলেকট্রিক্যাল ডিভাইস যেমন মোবাইল, ল্যাপটপ, কম্পিউটার বা যেকোনো কিছু থেকে নিজেকে দূরে রাখুন। 
বিশেষ করে ইলেকট্রিক্যাল ডিভাইসের স্ক্রিনের আলো আমাদের চোখে এমন ধরনের রশ্মি নিক্ষেপ করে যেটি ঘুমের 
প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। এই কারণে অবশ্যই ঘুমানোর সময় মোবাইল স্ক্রল করা থেকে বিরত থাকুন।

৫) ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় পরিহারঃ আমরা অনেকেই ক্যাফেইনন জাতীয় পানীয় যেমন চা, কফি ইত্যাদির সাথে অভ্যস্ত। কিন্তু আপনি জানেন কি এইগুলো আমাদের নিদ্রায় ব্যাঘাত ঘটায়। 
সমস্ত দিন অধিক পরিমাণে এই জাতীয় পানীয় পান করলে রাত্রিবেলায় ঘুম আসতে চায় না। তাই এই সকল পানিয় পানের ক্ষেত্রে অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে এবং মার্জিত রুচির পরিচয় দিতে হবে। 
এছাড়াও ধূমপান বা তামাক জাতীয় নেশার থেকে নিকোটিন শরীরে গ্রহণ করলে সেটিও ঘুমের উপর ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করে এবং এর থেকে অনিদ্রা রোগটি তৈরি হয়।

৬) মানসিক চাপ কমানঃ মানসিক চাপ বা উদ্বেগ আমাদের শরীরের উপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে যা এমনকি স্বাভাবিক নিদ্রাকেও দূর করে দেয়। খুব বেশি মানুষিক উদ্বেগ দুশ্চিন্তা থাকলে এটি আমাদের 
শরীরের ভেতর এমন কিছু হরমোনের নিঃসরণ করে যেগুলো শরীরের স্বাভাবিক ভারসাম্যকে নষ্ট করে এবং অনিদ্রা রোগ নিয়ে আসে। 
সরল জীবন যাপনের ক্রমাগত অভ্যাস দ্বারা এই সকল মানসিক প্রতিকূলতা থেকে দূরে থাকতে হবে। প্রয়োজন হলে মানসিক রোগের চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

৭) নিয়মিত শরীর চর্চাঃ সুষম শারীরিক ও মানসিক গঠনের জন্য নিয়মিত শরীর চর্চার অভ্যাস অপরিহার্য। বিভিন্ন যোগাভ্যাস ও মেডিটেশন দ্বারা শারীরিক মানসিক স্থিতি বজায় থাকে। 
কিছু অনিদ্রা দূর করার ব্যায়াম আছে যেগুলো অনুশীলন করা যেতে পারে। পর্যাপ্ত পরিমাণে শারীরিক পরিশ্রম সুনিদ্রার সহায়ক। 
তাই যথাসম্ভব শরীরকে ব্যবহার করতে হবে। ব্যায়াম করতে হবে এবং নিত্যদিনের কাজ কর্মের সঙ্গে অভ্যস্ত থাকতে হবে।

শেষ কথাঃ যে কোন নিয়ম ক্রমাগত অনুশীলনের ফলে তা অভ্যাসে পরিণত হয়। আর যে কোন সু অভ্যাস গঠন করতে নিশ্চয়ই কিছু পরিশ্রম ও ত্যাগ স্বীকার প্রয়োজন হয়। প্রথম প্রথম এই নিয়মগুলোর অভ্যাস কিছুটা কষ্টকর ও 
এলোমেল হলেও পরবর্তীতে এর অনুশীলন সহজ হয়ে উঠবে। গুরুত্বপূর্ণ এই টিপসগুলি ব্যবহার করার পরেও যদি আপনি অনিদ্রা রোগ থেকে মুক্তি না পান তবে একজন স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারের সঙ্গে পরামর্শ করুন। 
তিনি আপনার আনিদ্রার কারণ নির্ধারণ করে আপনাকে যথাযথভাবে অনিদ্রার চিকিৎসা দ্বারা সহযোগিতা করতে পারবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আইটিচহেলথ এর নীতিমালা মেনে তবেই মন্তব্য করার অনুরোধ রইল। প্রত্যেকটি মন্তব্য প্রকাশের পূর্বে যাচাই করা হয়।

comment url