বাচ্চার জ্বর যেন এখনই কমে যায়, জ্বর আর না আসে এইরকম ঔষধ

আমাদের চেম্বারে কিছু রোগীরা এসে বিশেষত তাদের বাচ্চাদের জ্বর নিয়ে এসে বলে থাকেন যে, বাচ্চার জ্বর যেন আর না ওঠে অথবা বাচ্চার জ্বর যেন আজকেই কমে যায় এইভাবে ওষুধ দিতে হবে। 

আমি সব সময় এই সকল রোগীদের বলে এসেছি যে জোর করে চাপা দিয়ে কোন রোগে উপশম নেওয়া ভালো নয়। জোর করে জ্বরকে চাপা দিলে এটি অন্য অনেক নতুন রোগ তৈরি করতে পারে। চাপা দিয়ে জ্বরকে উপশম করলে ওই সময়ে জ্বরটা হয়তো কমলো কিন্তু পরবর্তীতে জ্বর কমে যাওয়ার কয়েকদিন পর হয়তো ভয়ানক কাশি হতে পারে, হয়তো মাথা ব্যাথার সমস্যা দেখা দিতে পারে, হয়তো শ্বাসকষ্টের সমস্যা হতে পারে, কত রকম সমস্যা হতে পারে।

জ্বর হোমিওপ্যাথি

এই কারণে জ্বরকে তার নিজের মত করে একটু সময় নিয়ে কমতে দেওয়াই সর্বোত্তম। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগীর জীবনী শক্তির প্রতিরোধ ও সহ্য ক্ষমতা ভালো থাকলে কোন ঔষধ সেবন না করলেও জ্বর এমনিতেই দুই একদিনের ভেতর ভালো হয়ে যায়।

জ্বর মূলত কোন রোগ নয়। এটি হলো আমাদের শরীরের অ্যান্টিবডি এবং বাইরের এন্টিজেন এই দুটির ভেতরের যুদ্ধের পরিণাম। আমাদের শরীরে কোন অজ্ঞাত রোগ জীবাণু প্রবেশ করে আক্রমণ করেছে আর আমাদের শরীর অভ্যন্তরের জীবনীশক্তি সেটিকে প্রতিরোধ করছে। এই দুই পক্ষের যুদ্ধের ফলে শরীরের ভেতর যে বিষম প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে তার ফলে শরীর উত্তপ্ত হয়েছে। 

এখন এই যুদ্ধের সমাপ্তি না হওয়ার পূর্বেই বিকল্প পন্থায় জোরপূর্বক শরীরের উত্তাপ কে দমন করলে তা কখনোই ভালো ফল বয়ে আনে না। তাই এই ক্ষেত্রে একান্ত করণীয় ঔষধ, খাদ্য বা ব্যবস্থাপনা দ্বারা জীবনী শক্তির প্রতিরোধকে সবল হতে সহায়তা করা। যে সকল ঔষধ বা পথ্য জীবনী শক্তিকে সবল না করে শুধু শরীরে জ্বরের উত্তাপকে কমায় তা কখনোই জ্বরের আদর্শ আরোগ্য নয়। এবং এভাবে জ্বরের উত্তাপ কমালে তা শরীরে ভালো করার পরিবর্তে মন্দই করে থাকে।

তাই আমরা বলে থাকি জ্বরের ভোগান্তি কাল এবং শারীরিক পরিস্থিতি সহ্য সীমার ভেতরে থাকলে অনর্থক ব্যস্ত হবেন না। জ্বরের ভোগকালে একটু কষ্ট তো হবেই। কিন্তু কিছুটা সহ্য করে থাকলে তার সঙ্গে সঙ্গে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ সেবন করলে দ্রুত জ্বর আরোগ্য হয়, জ্বর খুব বাড়তে পারে না এবং তাড়াতাড়ি জ্বর আরোগ্যের পর শরীরে দ্রুত বল শক্তি ফিরে আসে।

জ্বরেরর সময় বাচ্চাকে ডিম ভাজা দিয়ে ভাত খেতে দেওয়া যাবে কি? 

সেদিন একজন মা তার বাচ্চার জ্বরের ঔষধ নিতে এসে জিজ্ঞাসা করছিলেন তিনি তার বাচ্চার জন্য একটি ডিম ভাজি করে রেখে এসেছেন। এই সময়ে ডিম ভাজা দিয়ে ভাত খাওয়ানো যাবে তো? তুমি আমাকে এই প্রশ্ন করেছিলেন। 




এটির উত্তর হলঃ

জ্বর কালিন আমাদের শরীরের সকল পজেটিভ এনার্জি এন্টিজেনের সঙ্গে যুদ্ধে ব্যস্ত থাকে। এই সময় খাদ্য পরিপাকের জন্য এনার্জির ঘাটতে থাকে। তাই এই সময় যথাসম্ভব সহজে হজম হয় কিন্তু বলকারক এ জাতীয় খাবার খেতে হয়। জ্বরের অসুস্থতার সময়ে কখনই মসলা-গুরুপাক জাতীয় খাবার আহার করা উচিত নয়। কেননা এই প্রকার ভারী খাদ্য আহার করলে যুদ্ধরত পজেটিভ এনার্জির একটা বড় অংশকে খাদ্য পরিপাকের জন্য ফিরে আসতে হয়। তাহলে জীবাণুর বিরুদ্ধে যুদ্ধের সৈনিক কম হয়ে গেল। ফলে রোগ আরোগ্য হতে আরো দেরি হয় অথবা কখনো কখনো আমাদের জীবনী শক্তির প্রতিরোধ অতীব দুর্বল হয়ে পড়ে। তখন আমরা আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ি। 

এই কারণে জ্বর থাকাকালীন সবসময়ই হালকা আহার করা উচিত সকলের। জ্বর আরোগ্য হয়ে গেলে তখন ধীরে ধীরে আবার স্বাভাবিক খাবার খাওয়া যাবে। 

তাই পরামর্শ হলোঃ 

জ্বর কালিন যতটা সম্ভব হালকা তবে পুষ্টিকর আহার গ্রহণ করুন। মসলা খাবার, গুরু পাক ও ভারী আহার করা থেকে বিরত থাকুন। পর্যাপ্ত পানি পান করুন। পর্যাপ্ত বিশ্রাম গ্রহণ করুন।

আরো পড়ুনঃ
জ্বরের প্রকারভেদ, ব্যবস্থাপনা এবং চিকিৎসা

ডা. দীপংকর মন্ডল।
রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথ
২৬.০৫.২০২৪

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ব্লগের নীতিমালা মেনে তবেই মন্তব্য করার অনুরোধ রইল। প্রত্যেকটি মন্তব্য প্রকাশের পূর্বে যাচাই করা হয়।

comment url