তাৎক্ষণিকভাবে উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায়|

প্রাথমিক আলোচনাঃ আজকে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায় নিয়ে আলোচনা করব। এর সাথে সাথে রক্তচাপ বিষয়ক আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।

আমাদের শরীরে রক্তের চাপ ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় থাকা অত্যন্ত জরুরি। রক্তচাপের এই ভারসাম্যতা সঠিক অবস্থায় না থাকলে আমাদের হাই ব্লাড প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ অথবা লো ব্লাড প্রেসার বা নিম্ন রক্তচাপের শিকার হয়ে থাকি। হাই ব্লাড প্রেশার অনেক সময় কোন প্রকার লক্ষণ প্রকাশ না করেই হৃদরোগ কিডনি রোগ ডায়াবেটিস স্ট্রোক ইত্যাদি নানাবিধ স্বাস্থ্যে ঝুকির সৃষ্টি করে থাকে। তাই আমাদের হাই ব্লাড প্রেশারের সম্বন্ধে ধারণা থাকতে হবে। হাই ব্লাড প্রেসার কেন হয়? কি কি লক্ষণ প্রকাশ পায় রোগীদের? তাৎক্ষণিকভাবে উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায়? ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে জানা থাকলে আমরা বিপদজনক পরিস্থিতি গুলো মোকাবেলা করতে পারি।

আজকের আলোচনায় আমরা উচ্চ রক্তচাপ সম্পর্কিত এই সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সহ তাৎক্ষণিকভাবে উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায় নিয়ে আলোচনা করব।

উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণঃ

হাই ব্লাড প্রেসার রোগটি একটি নীরব ঘাতক ব্যাধি। দীর্ঘদিন যাবতকে এই রোগে ভুগতে থাকলেও সবসময় সেটি নাও জানা যেতে পারে। তবে সচেতন থাকলে বা নিয়মিত রক্তচাপ মাপলে এটি ধরা পড়তে পারে।

উচ্চ রক্তচাপের ক্ষেত্রে সাধারণত যে সকল লক্ষণ দেখা যায় তা হল:

মাথা ব্যথাঃ মাথায় যন্ত্রণা থাকতে পারে রোগীর। বিশেষ করে মাথার পেছনদিকে ব্যথা। মাথাটা ভারী ভারী বোধ হয়।

চোখের সমস্যাঃ হঠাৎ করে রোগীর চোখে ঝাপসা দেখতে পারে। চোখের সামনে কালো দাগ ভেসে বেড়ানোর মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

মাথা ব্যথাঃ মাথায় যন্ত্রণা থাকতে পারে রোগীর। বিশেষ করে মাথার পেছনদিকে ব্যথা। মাথাটা ভারী ভারী বোধ হয়।
চোখের সমস্যাঃ হঠাৎ করে রোগীর চোখে ঝাপসা দেখতে পারে। চোখের সামনে কালো দাগ ভেসে বেড়ানোর মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
শ্বাসকষ্টঃ হঠাৎ করে রোগীর শ্বাসকষ্ট শুরু হতে পারে এলার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে।
হৃদস্পন্দন বৃদ্ধিঃ হঠাৎ করেই রোগীদের স্পন্দন বৃদ্ধি পেতে পারে বা অনিয়মিত হতে পারে।
ক্লান্তি ও দুর্বলতাঃ রোগীর মাথাতে ভার বদসহ রোগীর প্রচন্ড ক্লান্তি ও দুর্বলতা অনুভব হতে পারে।
ঘুমের সমস্যাঃ রোগীর ঘুমের সমস্যা হতে পারে। রাত্রে পরিমিত নিদ্রার ব্যাঘাত ঘটে থাকে।
বমি বমি ভাবঃ রোগের বমি বমি ভাব থাকতে পারে। কখনো বা বমি হয়ে যায়।
বুকে ব্যথাঃ উচ্চ রক্তচাপ যুক্ত রোগের কখনো কখনো বুকে ব্যথা থাকতে পারে। বুকের বাম পাশে বরাবর এক ধরনের বেদনা বা জ্বালা যন্ত্রণা থাকতে পারে হৃদপিন্ডের সমস্যাযুক্ত রোগীর।

একজন উচ্চ রক্তচাপের রোগীর এই সমস্যা গুলো যেকোনো পরিস্থিতিতে দেখা দিতে পারে। অথবা ক্রমাগত এই সমস্যাগুলো কোন না কোন রোগ লক্ষণ আকারে চলতে থাকে।

তাৎক্ষনিক ভাবে উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায়

তাৎক্ষণিকভাবে উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায়ঃ

দেখা যাচ্ছে যদি কারো তাৎক্ষণিক রক্তচাপ বেড়ে যায় তবে তৎক্ষণাৎ সেই রক্তচাপ স্বাভাবিক পর্যায়ে আনার প্রয়োজন হয়। আবার তিনি সুস্থ হয়ে যাওয়ার পর দীর্ঘমেয়াদে যেন তার রক্তচাপ আস্তে আস্তে কমতে থাকে সেজন্য আমাদের কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। এখানে এই উভয় বিষয়েই আমি আলোচনা করব।

যদি কারো হঠাৎ করে প্রচন্ড রক্তচাপ বেড়ে যায় তবে তাৎক্ষণিকভাবে উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায় সম্বন্ধে জানা থাকলে সেগুলো প্রয়োগ করে বিপদজনক পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়। দ্রুত রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য আমরা কিছু পদক্ষেপ  অবলম্বন করতে পারি কিন্তু এগুলি সাময়িকভাবে সহযোগিতা করবে। দীর্ঘমেয়াদে উচ্চ রক্তচাপ থেকে মুক্তি পেতে চাইলে খাদ্যাভ্যাস এর সাথে জীবন আচরণের সংশোধনপূর্বক চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে।

শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়ামঃ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য উপযুক্ত কিছু শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম বেচে নিতে হবে। যেমন প্রাণায়াম, ধ্যান, অনুলোম বিলোম ইত্যাদি।

হালকা হাঁটাচলাঃ সামান্য কিছুক্ষণ যেমন ১০ থেকে ১২ মিনিটের মত হালকা হাঁটাচলা মূলক ব্যায়াম করলে এবং ওই সময় মনকে শান্ত রাখলে প্রেসার তাড়াতাড়ি নিয়ন্ত্রণে আসবে।

ধূমপান না করাঃ হঠাৎ প্রেসার খুব বেড়ে গেলে ওই সময় কোনভাবেই ধূমপান করা যাবে না। কেননা ধূমপান মারাত্মকভাবে উচ্চ রক্তচাপকে বাড়িয়ে দেয়।

ক্যাফেইন এবং অ্যালকোহল বর্জনঃ যার মদ্যপান বা অ্যালকোহল সেবনে আসক্ত তারা এটি পরিত্যাগ করবেন। কেননা এলকোহল দ্বারা শরীরে মাদকতা তৈরি হয় এবং রক্তেরচাপ বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। এমনকি চা, কফি, তামাক, জর্দা, গুল এ জাতীয় নেশা সামগ্রী কমবেশি শরীরে ও মনে মাদকতা তৈরি করে। এবং দেখা গেছে এগুলোর ভেতর তেমন ফুড ভ্যালু কিছু নেই। তাই উচ্চ রক্তচাপের রোগীর এই সকল বিষয় থেকে দূরে থাকা ভালো।

পর্যাপ্ত ঘুমঃ রক্তচাপ খুব বেশি থাকলে ঘুম সেদিকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। তাই পরিমিত মাত্রায় ঘুমানোর চেষ্টা করতে হবে।

মানসিক চাপ কমানোঃ মাত্রাতিরিক্ত মানসিক চাপ রক্তচাপকে বাড়িয়ে দেয় বহু গুনে। তাই এমন জীবন আচরণ বেছে নিতে হবে যেন মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকা যায়।

তাৎক্ষণিকভাবে রক্তচাপ বেড়ে গেলে উপরোক্ত এই সকল বিষয়ের উপর আমরা নজর রাখবো।

এখন আমরা আলোচনা করব দীর্ঘ মেয়াদে যাদের রক্তচাপের সমস্যা আছে তাদের জীবন আচরণ ও খাদ্যাভ্যাস সম্বন্ধে।

লবণ এবং চিনি পরিহারঃ লবণ এবং চিনি এই দুটিকে সাদা বিষ বলা হয়। লবণ এবং চিনির ব্যবহার যতটা সম্ভব কমে যাবে উচ্চ রক্তচাপে রোগীদের।

স্বাস্থ্যকর আহারঃ উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের স্বাস্থ্যকর আহার করা অবশ্য কর্তব্য। পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার যেমন কলা আলু টমেটো বাদাম এই সকল খাবার উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার যেমন সবুজ শাকসবজি বাদাম ইত্যাদিও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

এছাড়াও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হাই ব্লাড প্রেশারের রোগীকে নিয়মিত ঔষধ সেবন করতে হবে।

ওজন নিয়ন্ত্রণঃ শরীরে অতিরিক্ত ওজন থাকলে শরীর ভারি হয়ে যায়। অতিরিক্ত ওজন রক্তচাপ বৃদ্ধি করে। তাই শরীরকে সুস্থ রাখতে যথাসম্ভব ওজন কমাতে হবে।

নিয়মিত চেকআপঃ হাই ব্লাড প্রেশারের রোগীরা নিয়মিত চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে চেকআপ করাবেন। তাতে শারীরিক ত্রুটিগুলো সম্বন্ধে যেমন জানা যায় তেমনি স্বাস্থ্যকর যেমন যাপনের জন্য সুযোগ তৈরি হয়।

শেষ কথাঃ উচ্চ রক্তচাপ এমনই একটি নীরব ঘাতক যে তা ব্যক্তির অগোচরেই প্রতিনিয়ত রোগীর স্বাস্থ্যের সকল সম্পদ গুলি চুরি করে নিয়ে যায়। এই ঘাতক ব্যাধি কে প্রতিরোধ করতে ও মুক্ত থাকতে স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন ও পুষ্টিকর মানসম্মত খাদ্যাভ্যাসের কোন বিকল্প নেই। এর সাথে সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে ও সৎ জীবন করতে হবে নিয়মিত। তবেই উচ্চ রক্তচাপের বিরুদ্ধে আমরা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারবো এবং আমরা বিজয়ী হব।

আরো পড়ুনঃ
ব্রেন স্ট্রোক এর লক্ষণ? ব্রেন স্ট্রোক হলে কি করনীয়?

ডা. দীপংকর মন্ডল।
রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথ।
১৬.০৩.২০২৪

—————————

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ব্লগের নীতিমালা মেনে তবেই মন্তব্য করার অনুরোধ রইল। প্রত্যেকটি মন্তব্য প্রকাশের পূর্বে যাচাই করা হয়।

comment url