মাঙ্কি পক্স কারণ, লক্ষণ, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা

প্রাথমিক আলোচনাঃ বর্তমান সময়ে আলোচিত মাঙ্কিপক্স ভাইরাস সংক্রমণের কারণ, লক্ষণ, প্রতিরোধ ও চিকিৎসার বিষয়ে এই প্রবন্ধে আলোচনা করা হবে। আতঙ্ক নয় বরং মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের বিষয়ে আমাদের সচেতন হতে হবে এবং রোগটিকে প্রতিরোধ করতে হবে। 

মাঙ্কি পক্স কি? 

Mpoxযা মাঙ্কিপক্স নামেও পরিচিত। এটি একটি ভাইরাল বা সংক্রামক রোগ যা সারা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে। সর্বপ্রথম রোগটি প্রাণীদের ভেতর সংক্রমিত হয়েছিল। পরবর্তীতে এটি প্রাণী থেকে মানুষের ভেতর সংক্রমিত হয়েছে। মাঙ্কিপক্স ভাইরাসটি অর্থোপক্স ভাইরাস গনের অংশ হিসেবে পরিচিত। 

পোষ্ট সূচিপত্রঃমানবদেহের সর্বপ্রথম মাঙ্কি পক্স ভাইরাস সনাক্ত হয় ১৯৭০ সালে "ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব দ্য কঙ্গো" তে। প্রাথমিকভাবে এই ভাইরাসের সংক্রমণ আফ্রিকার একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে সীমাবদ্ধ ছিল তবে ২০২২ সালে ব্যাপক হারে বিশ্বব্যাপী মাঙ্কি পক্স ভাইরাস রোগের প্রাদুর্ভাগ ঘটে থাকে। এই রোগটি কিভাবে ছড়ায়? রোগটির কারণ, লক্ষণ এবং প্রতিরোধ সম্পর্কে জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আজকের আলোচনাতে গুরুত্বপূর্ণ এ সকল বিষয় সম্বন্ধে জানবো। 
এম পক্স ছবি
এম পক্স ছবি

মাঙ্কি পক্স এর লক্ষণঃ 

মাঙ্কি পক্স ভাইরাসের লক্ষণ বা রোগ উপসর্গগুলো হলো- জ্বর, সর্দি, মাথা ব্যাথা, ত্বকে ফুসকুড়ি ও ক্ষত, পেশি ব্যথা, ক্লান্তি ও দুর্বলতা, লিম্ফনোড ফোলা ইত্যাদি। মাঙ্কি পক্স ভাইরাস রোগটি সংক্রামিত হলে ত্বক, বাহু, মুখ ও পায়ে ফুসকুড়ির ন্যায় ফোস্কা তৈরি হয়। এই সকল উপসর্গ দেখে প্রাথমিকভাবে রোগটি শনাক্ত করতে পারলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব হয় এবং রোগটি থেকে দ্রুত আরোগ্য লাভ করা যায়। 

মাঙ্কি পক্স কিভাবে ছাড়ায়? 

সংক্রামিত কোন ব্যক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের থেকে মাঙ্কি পক্স ভাইরাস টি ছড়িয়ে থাকে। সংক্রামিত ব্যক্তির সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করলে, আক্রান্ত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস এর মাধ্যমে, মাঙ্কি পক্স আক্রান্ত ব্যক্তির বিছানা পোশাক তোয়ালে ইত্যাদি ব্যবহার বা স্পর্শ থেকে এই রোগটি ছড়িয়ে থাকে। ইদুর, বেড়াল, বানর, কাঠবিড়ালি ইত্যাদি কোন প্রাণী যদি এই ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হয়ে থাকে তাদের সংস্পর্শে আসলেও সেখান থেকে রোগটি ছড়িয়ে থাকে। 

মাঙ্কিপক্স বাংলাদেশ পরিস্থিতিঃ 

সম্প্রতি মাঙ্কি পক্স রোগটি বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল সহ বাংলাদেশেও এর বিস্তার লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশে মাঙ্কি পক্স ভাইরাসের ব্যাপক প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। তবুও এই বিষয়ে সকলকে সচেতন থাকতে হবে। তবে বাংলাদেশেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগটির সংক্রমণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কোন কোন দেশে মাঙ্কি পক্স ছড়িয়েছে? সাধারণত এই ভাইরাসের সংক্রমণ কঙ্গো প্রজাতন্ত্র এবং পশ্চিম এবং মধ্য আফ্রিকার কিছু প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে বেশি দেখা যায়। এই অঞ্চলগুলোতে এই ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হয়ে প্রতিবছর অনেক রোগী মারা যায়। সাম্প্রতিক সময়ে ভাইরাসটি বুরুন্ডি, রুয়ান্ডা, কেনিয়া ও উগান্ডা এই সকল দেশেও দেখা গেছে। 

মাঙ্কি পক্স ভাইরাসের ধরনঃ 

মাঙ্কি পক্স ভাইরাসের সাধারণত দুটি প্রধান ধরণ রয়েছে। 
১) মধ্য আফ্রিকান (কঙ্গো বেসিন) ক্লেডঃ মাঙ্কি পক্স ভাইরাসের এই ধরনটির সংক্রমনের ক্ষেত্রে রোগ অধিক গুরুতর ও জটিল হয়ে থাকে এবং মৃত্যুর হারও বেশি হয়ে থাকে। 
২) পশ্চিম আফ্রিকান ক্লেডঃ মাঙ্কি পক্স ভাইরাসের এই ধরনটি সাধারণত হালকা আক্রমণের কারণ হয়ে থাকে এবং এই সকল আক্রমণে মৃত্যুর হার খুবই কম। 

সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি কাদের? 

মূলত যে সকল ব্যক্তিরা অন্য কোন গুরুতর রোগাক্রান্ত বা বিশেষভাবে জীবনীশক্তি যাদের দুর্বল তারাই এই রোগের ক্ষেত্রে বেশি ঝুঁকিতে আছেন। জীবনী শক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হলে বা শরীরে পুষ্টির ঘাটতি থাকলে সেক্ষেত্রে রোগ প্রতিরোধে শরীর দুর্বল হয় এবং সহজেই এই জাতীয় ভাইরাস সংক্রমন দ্বারা আক্রান্ত হয়ে পড়ে। শিশু, বয়স্ক ব্যাক্তি এবং গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে যত্ন সহকারে পরিস্থিতি মোকাবেলার চেষ্টা করতে হবে। আক্রান্ত শিশুরা খেলাধুলার কারনে অন্যান্য শিশুদের সংস্পর্শে আসলে সেক্ষেত্রে রোগটি সংক্রামিত হতে পারে। 
আফ্রিকার এম পক্স পরিস্থিতি- ছবি বিবিসি
আফ্রিকার এম পক্স পরিস্থিতি- ছবি বিবিসি

মাঙ্কি পক্স ভাইরাস প্রতিরোধঃ 

যেহেতু এটি একটি সংক্রামক রোগ তাই মাঙ্কি পক্স রোগটিকে প্রতিরোধ করতে বিশেষ কিছু সচেতনতা ও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। 
১) মাঙ্কি পক্স ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত ব্যক্তির থেকে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ এড়িয়ে চলতে হবে। 
২) ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি যথাসম্ভব পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকবে। যথাসম্ভব সচেতন থাকবে যেন তাদের থেকে অন্যদের মাঝে রোগটি না ছড়াতে পারে। 
৩) শরীরে প্রকাশিত ক্ষত ও ফুসকুড়ি সেরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত রোগীকে অন্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন রাখতে হবে। 
৪) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এর পরামর্শ অনুযায়ী সুস্থ হওয়ার পরেও বারো সপ্তাহ পর্যন্ত অরক্ষিত যৌন সম্পর্ক থেকে বিরত থাকতে হবে। যৌন সম্পর্ক করতে হলে অবশ্যই কনডম ব্যবহার করতে হবে। 

এম পক্স এর হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাঃ 

হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা একটি সার্বজনীন চিকিৎসা নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। লক্ষণ সাদৃশ্য থাকলে সকল ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসজনিত রোগ সহ সকল মহামারী রোগের চিকিৎসা করা সম্ভব হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দ্বারা। লক্ষণ সাদৃশ্য মিলিয়ে রোগীর জীবনী শক্তির উপর নজর রেখে শক্তিগড় হোমিওপ্যাথিক ঔষধ প্রয়োগে মাঙ্কি পক্স রোগটি আরোগ্য হওয়া সম্ভব। এক্ষেত্রে অবশ্যই অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। 

লক্ষণ সাদৃশ্য থাকলে রাসটক্স, নাক্স ভমিকা, সালফার, এন্টিম টার্ট, এপিস মেলিফিকা, ব্রায়োনিয়া অ্যাল্বা, লিডাম পল, পাইরোজেন ইত্যাদি ঔষধ ব্যবহৃত হতে পারে। তবে সাধারণত উচ্চশক্তিতে ঔষধ প্রয়োগ করলে জীবনী শক্তি দ্রুতই সবলতা লাভ করবে এবং রোগ আরোগ্য হবে। শক্তিকৃত সূক্ষ্ম ঔষধ, স্বল্প ও বিভক্ত মাত্রায় প্রয়োগ করতে পারলে অতি দ্রুত ফল পাওয়া যাবে।

এম পক্স বিষয়ে প্রশ্নোত্তর পর্বঃ 

প্রশ্ন ১) এম পক্স আর মঙ্কি পক্স রোগটি কি একই? 
হ্যাঁ এমপক্স এবং মাঙ্কিপক্স একই রোগ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা(WHO) নাম পরিবর্তন করে MPOX করাতে নামটি সংক্ষিপ্ত হয়েছে। 

প্রশ্ন ২) মাঙ্কি পক্স এর জন্য কোন ভ্যাকসিন আছে কি? 
 হ্যাঁ মাঙ্কি পক্স এর জন্য দুইটি অনুমোদিত টিকা বা ভ্যাকসিন রয়েছে এগুলো হল JYNNEOS এবং ACAM2000। মাঙ্কি পক্স ভাইরাস প্রতিরোধ করতে এবং অসুস্থতার তীব্রতা কমিয়ে আনতে সাহায্য করে। 

উপসংহারঃ এই প্রবন্ধে আমরা মাঙ্কি পক্স ভাইরাসটির বিষয়ে যথাসম্ভব বিস্তারিত আলোচনা করেছি। Monkey pox থেকে Mpox, ভাইরাস সংক্রমণের কারণ, লক্ষণ, স্বাস্থ্য সমস্যা এবং মাঙ্কি পক্স প্রতিরোধের বিষয়ে আলোচনা করেছি প্রবন্ধটিতে। রক্তের প্রতিরোধের টিকা নেওয়া এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি শেয়ার করেছি। এখন আমাদের সচেতন হতে হবে রোগটি প্রতিরোধের ব্যাপারে। ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির যথাযথ চিকিৎসা এবং ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আইটিচহেলথ এর নীতিমালা মেনে তবেই মন্তব্য করার অনুরোধ রইল। প্রত্যেকটি মন্তব্য প্রকাশের পূর্বে যাচাই করা হয়।

comment url