হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দ্বারা লোশন ও মলম প্রস্তুত প্রণালী

ভূমিকাঃ বিভিন্ন প্রয়োজনে হোমিওপ্যাথিক মাদার টিংচার দ্বারা লোশন, মলম ইত্যাদি তৈরি করে ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়ে। যদিও ক্রণিক রোগ সমূহ অভ্যন্তরীণ শক্তিকৃত হোমিওপ্যাথিক ঔষধ প্রয়োগ ছাড়া আরোগ্য হয় না তবে বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে আশু উপশমের জন্য হোমিওপ্যাথিক লোশন বা মলম এর ব্যবহার অপরিহার্য হয়ে পড়ে। আজকের আলোচনাতে আমি কিভাবে হোমিওপ্যাথিক লোশন প্রস্তুত করতে হয় তার ব্যাপারে বিস্তারিত বলবো। 

বাহ্য প্রয়োগে ব্যবহৃত হোমিওপ্যাথিক ঔষধ সমূহঃ 

ক্যালেন্ডুলা- (লোশন ও মলম উভয় ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়) 

আর্নিকা- লোশন ও মলম 

ক্যান্থারিস- লোশন ও মলম 

হাইপারিকাম- লোশন ও মলম 

আর্টিকা ইউরেন্স-

পোষ্ট সূচিপত্রঃহাইপেরিকাম-লোশন ও মলম।

রুটা- অধিকাংশ ক্ষেত্রে মলম কিছু ক্ষেত্রে লোশন।

সিম্ফাইটাম- অধিকাংশ ক্ষেত্রে মলম কিছু ক্ষেত্রে লোশন।

প্লান্টেগো মেজর- দাঁতের ও কানের বেদনায় মাদার টিংচার ব্যবহৃত হয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে লোশন।

একিনেশিয়া-শুধুমাত্র লোশন 

মূলেন অয়েল-মাদার টিংচার ব্যবহৃত হয়।

একোনাইট- মাদার টিংচার হিসাবে ব্যবহার করা যায়। 

হোমিওপ্যাথিক লোশন
হোমিওপ্যাথিক লোশন

হোমিওপ্যাথিক লোশন প্রস্তুত প্রণালীঃ

হোমিওপ্যাথিক লোশন প্রস্তুত করতে সাধারণত ঔষধের মূল আরোক বা মাদার টিংচার প্রয়োজন হয়। হোমিওপ্যাথিক সকল ঔষধের মাদার টিংচার ব্যবহৃত হয় না। যে সকল ঔষধ দ্বারা শুধুমাত্র মলম বা লোশন তৈরি করে ব্যবহার করা হয় তার তালিকা উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। এখন আমরা দেখব কিভাবে ব্যবহারিকভাবে ঔষধ থেকে লোশন প্রস্তুত করতে হয়।

সাধারণত এক ভাগ মূল ঔষধ এর সাথে দশ ভাগ পরিমাণ বিশুদ্ধ জল মিশ্রিত করে লোশন প্রস্তুত করা হয়। তবে এই নিয়ম ভিন্ন আরো নানাভাবে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ থেকে লোশন প্রস্তুত করা হয়ে থাকে।


তবে পরিস্থিতি অনুযায়ী এই জলের ব্যবহারের তারতম করা হয়ে থাকে। 

১ঃ১০ পদ্ধতিঃ এক্ষেত্রে একভাগ ঔষধের মূল আরোক এর সাথে দশ ভাগ বিশুদ্ধ জল মেশানো হয়ে থাকে।


১ঃ২৫ পদ্ধতিঃ কখনো কখনো পরিস্থিতি বিবেচনা পূর্বক এক ভাগ মূল ঔষধের সাথে ২৫ ভাগ পরিমাণ বিশুদ্ধ জল মিশিয়ে লোশন প্রস্তুত করা হয়ে থাকে।


১ঃ৪/৬ পদ্ধতিঃ ডাঃ কেন্ট তার মেটেরিয়া মেডিকায় একভাগ মূল ঔষধের সাথে চার ভাগ পরিমাণ বা ছয় ভাগ পরিমান বিশুদ্ধ জল মিশিয়ে লোশন প্রস্তুত করতে বলেছেন।


১ঃ৯ পদ্ধতিঃ কেউ কেউ একভাগ মুল ঔষধের সাথে নয় ভাগ বিশুদ্ধ জল মিশিয়ে লোশন প্রস্তুত করে ব্যবহার করে থাকেন। 


এছাড়াও কেউ কেউ এক আউন্স পরিমাণ জলের ভেতর দশ ফোটা মূল ঔষধ ব্যবহার করে লোশন প্রস্তুত করে থাকেন। কেউ আবার এক কাপ জলে চার/পাঁচ ফোটা মাদার‌ টিংচার ব্যবহার করে লোশন প্রস্তুত করেন।


হোমিওপ্যাথিক লোশন তৈরির এই প্রকার মতভেদ বা বিভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও সঠিক ঔষধের নির্বাচন হলে তা ফলপ্রসূ হয়। চিকিৎসা ক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথিক লোশন তৈরির এই তারতম্য টুকু চিকিৎসকের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে থাকে। হোমিওপ্যাথিক মলম তৈরির ক্ষেত্রেও কিন্তু কিঞ্চ তারতম্য দেখা যায়।


উদাহরণ হিসেবে বলা যায় রক্তস্রাব বেশি হতে থাকলে যদি ১ঃ১০ পরিমাণ লোশনে তা কম না হয় সেক্ষেত্রে জলের অনুপাতে ঔষধ আরো একটু বেশি মিশিয়ে লোশন প্রস্তুত করা যেতে পারে। রক্তচাপ বন্ধ হলে তখন ১ঃ২০ পদ্ধতির লোশন ব্যবহার করা যেতে পারে। 


হোমিওপ্যাথিক লোশনের ব্যবহার পদ্ধতিঃ

হোমিওপ্যাথিক বিভিন্ন ঔষধের মাদার টিংচার ব্যবহার করে প্রস্তুতকৃত মলম ও লোশন ত্বকের বিভিন্ন ক্ষত, আঘাত, ভ্যাকসিন এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া, কোথাও কেটে গেলে, কোন বিষাক্ত প্রাণীর কামড়, বিষাক্ত কিছুর সংস্পর্শে আসা, দাঁতের ও কানের যন্ত্রণা ইত্যাদি নানাবিধ ক্ষেত্রে খুবই কার্যকরী হয়ে থাকে। এছাড়াও চুলকানি, মুখের দাগ, ত্বকের সংক্রমণ, ত্বকের এলার্জি ইত্যাদি দূর করতেও হোমিওপ্যাথিক লোশন এর ব্যবহার হয়ে থাকে। 

সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করা হলে হোমিওপ্যাথিক লোশন বা মলমের কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় না। মনে রাখবেন যে কোন হোমিওপ্যাথিক মলম বা লোশন ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা দরকার।



সতর্কতাঃ লোশন সর্বদা সবসময় টাটকা ব্যবহার করা উচিত। লোশন তৈরির জন্য সব সময় মানসম্পন্ন ও উৎকৃষ্ট ঔষধ ব্যবহার করতে হবে। বিশ্বস্ত ঔষধের ফার্মেসি থেকে তা কিনতে হবে।


ক্যালেন্ডুলা ঔষধটির মাদার টিংচার এবং লোশন উভয়ই ব্যবহার করা যায়। লোশন তৈরির পর ক্যালেন্ডুলা ঔষধের ক্রিয়া বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। তাই পুনরায় আবার তা তৈরির প্রয়োজন পড়ে। কখনোই কর্পূর মেশানো জলে হোমিওপ্যাথিক লোশন তৈরি করা যাবে না। কেননা কর্পূর সকল প্রকার হোমিওপ্যাথিক ওষুধের ক্রিয়া নষ্ট করে দেয়।


জল ফুটিয়ে নামমাত্র গরম অবস্থায় ঔষধ মিশিয়ে লোশন প্রস্তুত করতে হবে। তবে আকস্মিক বিপদের সময় কলের জল বা উৎকৃষ্ট পুকুরের বিশুদ্ধ ঠান্ডা জল ব্যবহার করা চলে।


অল্প বয়সী বালক বালিকার ক্ষেত্রে লোশনের শক্তি মৃদু হতে হবে। এসব ক্ষেত্রে জলের পরিমাণ দ্বিগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা যেতে পারে।


ক্ষতে লোশন প্রয়োগ করতে হলে ব্যান্ডেজ বা বস্ত্রখন্ড বা ন্যাকড়া লোশন দ্বারা ভিজিয়ে তা ক্ষতস্থানের উপর দিতে হবে একে ওয়েট কমপ্রেস (Wet compress) বলা হয়।


মুখের মধ্যে, জরায়ুতে বা যোনিপথে কোন ক্ষতে লোশন প্রয়োগ করতে হলে অধিক জল মিশ্রিত লোশন ব্যবহার করতে হবে।


শেষ কথাঃ আকস্মিক বিপদ-আপদে, হঠাৎ আঘাত লাগলে, বা কোথাও কেটে গেলে ইত্যাদি ক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথিক লোশন ব্যবহারের আবশ্যকতা দেখা দেয়। যথাসময়ে লোশন ব্যবহারের সাথে সাথে আভ্যন্তরিকভাবে হোমিওপ্যাথিক শক্তিকৃত ঔষধ সেবন করতে হবে। তাহলে যথা সম্ভব দ্রুত রোগাবস্থা আরোগ্যমুখী হবে।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আইটিচহেলথ এর নীতিমালা মেনে তবেই মন্তব্য করার অনুরোধ রইল। প্রত্যেকটি মন্তব্য প্রকাশের পূর্বে যাচাই করা হয়।

comment url