পাতলা পায়খানার রোগীর খাদ্যের পরামর্শ ও ব্যবস্থাপনা

প্রাথমিক আলোচনাঃ আজকে সকালে আমার কাছে একটি ছোট বাচ্চাকে ডায়রিয়ার চিকিৎসার জন্য আনা হয়েছিল। বাচ্চাটির বয়স মাত্র ১০ মাস। গতকাল থেকে বাচ্চাটির অনবরত পাতলা পায়খানা হচ্ছে। এর পূর্বে অন্য চিকিৎসা করিয়েছেন। কিন্তু আজ আমার কাছে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার জন্য এসেছিলেন ওনারা। আমি রোগীর লক্ষণ সাদৃশ্য বিবেচনায় রেখে ঔষধ নির্বাচন করে রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছি। এর সঙ্গে সঙ্গে রোগীকে খাদ্যা-খাদ্যের ব্যাপারে যে পরামর্শ দিয়েছিলাম তা এখানে তুলে ধরছি।

পোষ্ট সূচীপত্রঃবাচ্চা বা পূর্ণবয়স্ক ব্যাক্তি1 যে কারোরই অনবরত পাতলা পায়খানা হতে থাকলে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি ও লবণের ঘাটতি দেখা দেয়। এছাড়াও এই সময় পরিপাকতন্ত্র ভীষণভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই এই পরিস্থিতিতে রোগীর জন্য বিশেষ উপযোগী কিছু খাবারের কথা বলছি।

ডায়রিয়া ছবি
ডায়রিয়া ছবি

ডায়রিয়ার রোগী যে সকল খাবার খাবেঃ 

তরল পানীয়ঃ অধিক পরিমাণে বিশুদ্ধ তরল পানীয় পান করতে হবে এই সময়। ডাবের পানিতে প্রচুর পরিমাণে ইলেকট্রোলাইট পাওয়া যায় তাই ডাবের পানি পান করা সম্ভব হলে সেটি করতে হবে। বিভিন্ন ফলের রস যেমন কমলা, আপেল, আঙ্গুর ইত্যাদির জুস পান করা যেতে পারে। বিভিন্ন পুষ্টিকর সবজির সুপ পান করা যেতে পারে। বাজারে পাওয়া যায় যে ওরাল রিহাইড্রেশন সল্ট (ORS) তার নির্দিষ্ট পরিমাণে রোগীকে ঘনঘন পান করাতে হবে। অল্প মাত্রায় দই খাওয়ানো যেতে পারে।

নরম খাবারঃ নরম জাতীয় যে সকল খাবার আমরা খেয়ে থাকি সহনীয় মাত্রায় সেই খামারগুলো খেতে হবে। অর্থাৎ এই সময় পরিপাক শক্তি অত্যন্ত দুর্বল থাকে। তাই এই সময় পরিমিত মাত্রায় আহার করা কর্তব্য। ভাত, রুটি, তরকারি, ফল ও সবজি এই সকল খাবার পরিমিত মাত্রায় রোগীকে খেতে দিতে হবে।

প্রোটিন জাতীয় খাবারঃ পরিমিত মাত্রায় রোগীকে প্রথম জাতীয় খাবার খেতে যেতে হবে। প্রোটন জাতীয় খাবারের ভিতরে অন্যতম মাছ, ডিম, দুধ, পনির, ছোলা, ডাল, বাদাম, বীজ ইত্যাদি। (তবে এর ভেতর কোন খাবারে যদি কোন ব্যক্তির পেটে বায়ু জমার প্রবনতা থাকে তবে সেই সকল খাবার সেই রোগী এড়িয়ে চলবেন)

ডিমের সাদা অংশে উচ্চ মাত্রায় প্রটিন থাকে। যদিও প্রোটিন খাবার আমাদের শরীরের বৃদ্ধি, গঠন ও শক্তি সঞ্চয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে তবুও বিশেষ এই পরিস্থিতিতে খাবার অবশ্যই পরিমিত মাত্রায় খেতে হবে। অধিক আহারের ফলে এই সময়ে যথাযথভাবে পরিপাক ক্রিয়া সম্পাদন হতে পারে না ফলে রোগের ভোগকাল দীর্ঘায়িত হয়।

ডায়রিয়ার রোগী যে সকল খাবার খাবে নাঃ

ডায়রিয়াজনিত এই বিশেষ পরিস্থিতিতে রোগী যে সকল খাবার এড়িয়ে যাবে সেগুলো হলো-

চর্বিযুক্ত খাবারঃ অধিক তেল যুক্ত খাদ্য, তেলে ভাজা খাদ্য, বিভিন্ন ডেয়ারি খাবার যেমন দুধ, চিজ ইত্যাদি এগুলো রোগী এই সময় খাবে না। এই সকল খাবার খেলে তা এই সময়ে রোগবৃদ্ধি করবে।

অধিক ঝাল-মসলা যুক্ত গুরুপাক আহার সর্বপ্রকারে নিষিদ্ধ।

বায়ুযুক্ত খাবারঃ কিছু খাবার আছে যেগুলো পেটে গ্যাসের সমস্যা তৈরি করে বা এসিডিটি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এই সকল খাবার এই সময় খাওয়া যাবেনা। 

যেমন পুঁইশাক, ফুলকপি, ডাল, ব্রকলি ইত্যাদি খাবারে যদি পেটে গ্যাস তৈরি হয় তবে এই সকল খাবার বাদ দিতে হবে।

কৃত্রিম মিষ্টি যুক্ত খাবারঃ সফ্ট ড্রিংক, ক্যান্ডি, বাজারে তৈরি আইসক্রিম ইত্যাদি কৃত্রিমভাবে মিষ্টি যোগ করা খাবার খাওয়া যাবেনা। এছাড়াও বাজারের চিপস, চানাচুর বা এই জাতীয় প্যাকেট জাতীয় খাদ্য সর্বতোভাবে বর্জন করতে হবে।

খাবারের আরো কিছু বিবেচনাঃ 

অল্প করে খানঃ একবারে অধিক পরিমাণে খাবার না খেয়ে বারে বারে অল্প পরিমাণে খাবার খেতে হবে। এবং অবশ্যই খাবার ভালোভাবে চিবিয়ে খেতে হবে। 

গরম খাবার খানঃ এই সময় ঠান্ডা খাবার না খাওয়াই উত্তম। কেননা খাবার কিছুটা উষ্ণ গরম অবস্থায় খেলে তা সহজে হজম হয়।

আশযুক্ত খাবারের পরিমাণ আস্তে আস্তে বাড়ানঃ রোগের প্রথম অবস্থায় তরল ও নরম খাবার খাওয়ার সাথে সাথে আস্তে আস্তে আশ যুক্ত খাবারের পরিমাণ বাড়াতে হবে।

স্বাস্থ্যসম্মত রান্নাঃ খাবার রান্না করতে হবে অবশ্যই স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে। কেননা খাদ্য প্রস্তুত প্রণালী সুরক্ষিত না হলে সেখান থেকেও রোগ জীবাণু ছাড়াতে পারে।

শেষ কথাঃ প্রবন্ধটি শুধুমাত্র ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর খাদ্যা খাদ্যের বিবেচনা এবং ব্যবস্থাপনার বিষয়ে লেখা হয়েছে। রোগাক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবনের পাশাপাশি এই সকল স্বাস্থ্য রক্ষার নিয়ম মেনে চলতে হবে।

বিঃদ্রঃ ডায়রিয়া, আমাশয়, হজমের গন্ডগোল, এসিডিটি এই সকল সমস্যার ক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা খুবই কার্যকরী। যথাসময়ে অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের পরামর্শ ও চিকিৎসা গ্রহণ করলে এই সকল রোগ অন্য কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া তৈরি ব্যতিরেকে আরোগ্য হয়ে থাকে।

সকলের জন্য সুস্বাস্থ্য ও মঙ্গল কামনা-

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আইটিচহেলথ এর নীতিমালা মেনে তবেই মন্তব্য করার অনুরোধ রইল। প্রত্যেকটি মন্তব্য প্রকাশের পূর্বে যাচাই করা হয়।

comment url