ajkerit

আর্টিকেরিয়া বা আমবাত এর হোমিওপ্যাথিক চিকিতসা

আর্টিকেরিয়া বা আমবাত কি: আমবাত কে ইংরেজিতে আর্টিকেরিয়া (Urticaria) বলে। শরীরের রক্তবাহি শিরায় প্রতিক্রিয়া বসন্ত চামড়ায় এক ধরনের ফ্যাকাসে লালচে রঙের চাকা চাকা ধরনের উদ্ভেদ দেখা দেয় । এতে প্রচণ্ড চুলকানি থাকে। অনেক সময় জ্বালা-যন্ত্রণা দেখা দেয়। অধিকাংশ সময়ে এই চাকা চাকা উদ্ভেদগুলো মিলিয়ে যায় বা শরীরের সাথে মিশে অদৃশ্য হয়ে যায়। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে উদ্ভেদ শরীরে মিলিয়ে নাও যেতে পারে। আমবাত আক্রমণের সময় শরীরে জ্বর জ্বর ভাব, মাথাব্যথা, পেটব্যথা, বমি বমি ভাব ইত্যাদি বিভিন্ন সমস্যা আনুষঙ্গিক লক্ষণ রূপে থাকতে পারে। তবে জ্বর জ্বর ভাব শুধু বাচ্চাদের বেলাতেই দেখা যায় । বড়দের সাধারণত জ্বর জ্বর ভাব থাকে না।

শরীরে অ্যালর্জি প্রবণতা অতিরিক্ত মাত্রায় থাকলে অনেক সময় এনজিওইডিমা (Angioedema) রোগ ও সৃষ্টি হতে পারে। এনজিওইডিমাতে ত্বকের গভীরে বা ত্বকের নিচে ডারমিস এর মধ্যে ফোলা ফোলা ভাব তৈরি হয়। বিভিন্ন এলার্জিক  বস্তুর প্রভাবে ত্বকের ভেতর রক্তবাহের মধ্যে থেকে তরল পদার্থ ক্ষরিত হওয়ার কারণে আক্রান্ত স্থানে অধিক মাত্রায় ফোলা ফোলা ভাব পরিলক্ষিত হয় যা মুখমন্ডলে হাতে, পায়ে, শরীরের বিভিন্ন স্থানে দেখা দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে আক্রান্ত স্থানে ফোলা ভাবটি তুলনামূলক বেশ বড় আকারে দেখা দেয়। তবে যদি ঠোঁট বা জিহবা আক্রান্ত হয় সে ক্ষেত্রে রোগ লক্ষণ গলার ভেতরে বিস্তৃত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এর ফলে শ্বাস প্রশ্বাসে বাধা তৈরি হতে পারে যার পরিণাম ফলে মৃত্যুর সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে।


এডিনজিওইডিমাতে হাত-পা ঠোঁট-জিভ ও চোখের চারপাশে ফোলা ফোলা ভাব দেখা যায়। ব্যথা, চুলকানি, কালচে রং এবং আক্রান্ত স্থানে উত্তাপ পরিলক্ষিত হয় । শ্বাসনালীর ভেতর কোথাও হলে শ্বাস-প্রশ্বাসে অসুবিধা হয়। আর গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল বা খাদ্যগ্রহণ ও পরিপাক ক্রিয়া যন্ত্রের ভেতর কোথও হলে বমি বমি ভাব ও ডায়রিয়া দেখা দিতে পারে।

আর্টিকেরিয়া কারণ: সাধারণত ব্যক্তির ভেতরে যদি অ্যালার্জির প্রবণতা বিদ্যমান থাকে, সে ক্ষেত্রে নানাবিধ কারণে, যেমন কোন উত্তেজক বস্তুর সংস্পর্শে, কোন খাদ্য পোকা-মাকড়ের কামড়ে, সিরাম গঠিত দুর্বলতায়, পোলেন এর সংস্পর্শে, ঔষধে ও স্নায়বিক কারণে আর্টিকেরিয়া বা আমবাত দেখা দিতে পারে। তবে শুধু বস্তু বা দ্রব্যগুলোই এই রোগ সৃষ্টির একমাত্র কারণ নয় । রোগ সৃষ্টি হতে হলে ব্যাক্তির ভেতর অবশ্যই রোগের প্রবণতা থাকতে হবে। বাহ্যিক যে সমস্ত কারণগুলো, প্রবণতা যুক্ত ব্যাক্তির ক্ষেত্রে এই রোগ তৈরি করে তা হল:-

১) বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য: যে সমস্ত প্রোটিনযুক্ত খাদ্য প্রবণতা যুক্ত ব্যাক্তির ক্ষেত্রে আর্টিকেরিয়া সৃষ্টি করে থাকে তা হলো মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, বাদাম, গম, আলু ইত্যাদি অতিরিক্ত কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার ও এই রোগ সৃষ্টি করে থাকে যেমন চিংড়ি, কাঁকড়া ইত্যাদি।

২) ঔষধ এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া:  বিভিন্ন প্রকার ঔষধ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে যেগুলোর অতিরিক্ত ব্যবহারে এই রোগ হতে পারে । তবে এসবক্ষেত্রে রোগের ব্যাপ্তিকাল অল্প। সাধারণত ঔষধ সেবন বন্ধ করলেই রোগের উপসর্গ সমূহ দূরীভূত হয়।

৩)আর্টিকেরিয়া সোলারিস: সূর্যের তাপে কারো কারো এলার্জি সমস্যা থাকে থাকতে পারে। সাধারণত শরীরের অনাবৃত অংশে এলার্জি সমস্যা দেখা দিতে দেখা যায়। এছড়া রান্নার উত্তাপে স্টোভের উত্তাপে রুম হিটার ব্যবহারের আর্টিকেরিয়া দেখা দেয়।

৪)আর্টিকেরিয়া একোয়াজেনিক: সাধারণ জল থেকে আর্টিকেরিয়া বাবা তৈরি হতে পারে একে আর্টিকেরিয়া একোয়াজেনিক বলে।

৫) আর্টিকেরিয়া মেরিটিমা: লবণ মিশ্রিত জল হতে আর্টিকেরিয়া হতে পারে। যেমন সমুদ্রের লবণ মিশ্রিত জলে স্নান করে এ রোগ হতে পারে ।

৬)আর্টিকেরিয়া সোলারিস: সূর্যের তাপে কারো কারো এলার্জি সমস্যা থাকতে পারে। সাধারণত শরীরের অনাবৃত অংশে এই এলার্জিক সমস্যা দেখা দিতে দেখা যায়। এছাড়া রান্নার উত্তাপে, স্টোভের উত্তাপে, রুম হিটার ব্যবহারে আর্টিকেরিয়া দেখা দেয়।

৭)আর্টিকেরিয়া কোল্ড: প্রচন্ড ঠান্ডা লেগে বা শীতকালে এই রোগ হতে পারে। ঠাণ্ডা কিছু খেলে, ঠান্ডা জলে স্নান করলে, ঠান্ডা জল হাত ভেজালে, শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে অবস্থান করলে, ঠান্ডা বাতাসে অর্থাৎ ঠান্ডার সংস্পর্শে প্রবণতা যুক্ত রোগীদের এই রোগ হয়ে থাকে। এছাড়া শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে, বিভিন্ন ফুলের ঘ্রাণে,  বাতাসে মিশে থাকা ধুলাবালি ও বিভিন্ন পদার্থের শ্বাস-প্রশ্বাস আমাদের শরীরের ভেতরে প্রবেশ করে এসব থেকে আর্টিকেরিয়া তৈরি হতে পারে ।

৮)আর্টিকেরিয়া হেমারেজিক: রক্ত দূষিত হলে তাকে আর্টিকেরিয়া হেমোরেজিক বলে। নাক, কান, গলা, সাইনাস, কিডনি, পিত্তথলি প্রভৃতিতে কোন ইনফেকশনের কারণে আর্টিকেরিয়াা হতে পারে। এছাড়াও বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন প্রকারের আর্টিকেরিয়া এলার্জি সমস্যা দেখা দেয়।পেটে কৃমি বা অন্য কোন পরজীবীর বাস থাকলে তাদের শুককীট এর মাধ্যমে অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে। অঙ্গে চাপ জনিত, শরীরের কোন অঙ্গ শক্ত কোন বস্তুর দ্বারা দীর্ঘক্ষণ আবৃত থাকলে যেমন বেল্ট, মোজা, ঘড়ি দীর্ঘক্ষন পরে থাকার কারণে অনেক ক্ষেত্রে আর্টিকেরিয়া হতে পারে

আর্টিকেরিয়া হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা:

আর্টিকেরিয়ার হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার লক্ষণভিত্তিক হতে হবে। অর্থাৎ রোগ এবং রোগীর লক্ষণ এবং ঔষধের লক্ষণ সাদৃশ্য যুক্ত হবে। তাহলে রোগটি ভেতর থেকে আরোগ্য হবে। এরপরও যে সকল প্রধান প্রধান ঔষধ সচরাচর ব্যবহার করে আমরা অনেক আর্টিকেরিয়ার রোগীর আরোগ্য সাধন করতে পেরেছি এমন কিছু ঔষধ হলোঃ 

Apis Mel, Natrum mur, Dalcamara, Rhustox, Sulphur, Phosphorus, Calc carb, Lach, Thuja, Graphitis ইত্যাদি অন্যতম।

এছাড়াও রোগীর সামগ্রিক লক্ষণের সঙ্গে মিল রেখে আরো যে কোন হোমিওপ্যাথিক ঔষধই রোগীতে প্রযুক্ত হতে পারে।

শেষ কথাঃ আর্টিকেরিয়া রোগটি সোরিক মায়াজম থেকে উদ্ভূত। তাই এন্টিসোরিখ চিকিৎসার মাধ্যমে আর্টিকেরিয়ার হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা সম্পন্ন হতে পারে। ঔষধ সেবনকালীন যদি কোন উত্তেজক খাবার বা পরিস্থিতি রোগকে বাড়িয়ে থাকে সেগুলোকে যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে।
 
……………………...........
লেখকঃ দীপংকর মন্ডল
ডি এইচ এম এস, ঢাকা(চতুর্থ বর্ষ)
………………………………….......

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url
ajkerit
ajkerit
ajkerit
ajkerit