ক্রিয়াজোট হোমিও ঔষধ এর বিস্তারিত

ক্রিয়োজোট একটি ধ্বংসমুখী ঔষধ। অতিশয় ক্রোধী(হিপির) ও দুঃখমনা। অতিশয় শীতকাতর। প্রচুর রক্তস্রাব প্রবণ ও ক্ষতকারী স্বভাব। কেলি জাতীয় ঔষধের ন্যায় এই ঔষধের ক্ষত অতটা গভীর নয়। এর ক্ষত অগভীর কিন্তু বিস্তৃত। ক্ষতের উপসর্গ উত্তাপে উপশম এবং ঠান্ডার সংস্পর্শে আসলে বা জল দিয়ে ধুলে সকল কষ্ট বেড়ে যায়।
(আর্সেনিক এর স্রাবের স্বল্পতা ও মৃত্যুভয়)।

ক্রিয়োজোটের বালিকা মাত্রেই স্নায়বিক অস্থিরতায় পরিপূর্ণ। কালচে বর্ণের দুর্গন্ধযুক্ত এবং নিদারুণ ক্ষতকারী জমাট বাধা অথবা তরল সকল প্রকার ঋতুস্রাব শুয়ে থাকা অবস্থাতেই সমধিক বৃদ্ধি পায় এবং উঠে বসলে এই স্রাব কম হয়।

ক্রিয়োজোট হোমিও ঔষধ ছবি
ক্রিয়োজোট হোমিও ঔষধ

ক্রিয়োজোট স্ত্রী রোগীর যোনিদার ও যোনি কপাটদ্বয় হেজে যায় ও সেখানে টাটানি ও স্পর্শকাতর বেদনা সহ যথেষ্ট জ্বালা থাকে। অথচ ঐ সকল স্থানে ঠান্ডা ঠান্ডা জল লাগালে খুবই কষ্ট হয় এবং উত্তাপে এবং গরমে সকল কষ্টে উপসম হয়। ক্ষতস্থানের এই যন্ত্রনায় আর্সেনিক এর রোগীর মত রোগী অস্থির হয় কিন্তু আর্সের স্রাবের স্বল্পতা ও মৃত্যুভয় ক্রিয়োজোটে নেই। মাসিক ঋতুর সময় ক্রিয়োজোট রোগীর সকল প্রকার রোগকষ্ট বেড়ে যায়। এটি ক্রিয়োজোট রোগীর একটি চরিত্রগত লক্ষণ। (ল্যাকেসিসের সকল কষ্ট স্রাবে কমে যায়। একটিয়া রেসিমোসার স্রাব যত বেশি কষ্টও তত বেশি)। ল্যাকেসিস এর আবদ্ধ ঘরে রোগ বৃদ্ধি হয়।

ক্যান্সার, ক্ষয় প্রবন ক্ষত, শ্লৈল্ষ্মিক ঝীল্লি সমুহের উপর ক্ষত ইত্যাদি ক্রিয়োজোট ধাতুযুক্ত রোগী দেহে অতি সহজেই ভয়ংকর আকার ধারণ করে। অতিশয় পচন প্রবৃত্তি, ক্ষতকারী স্রাব, দারুন জ্বালা ইত্যাদি ক্যান্সারের যাবতীয় লক্ষণের গুলির সাথে ক্ষতস্থান সমূহের পরিপূরণ ও গঠনের অক্ষমতা ইত্যাদি মিলিত হয়ে রোগীর অবস্থা অতিশয় মারাত্মক করে তোলাই ক্রিয়োজোটের উদ্দেশ্য। গঠন প্রবৃত্তির পরিবর্তে পচন প্রবণতাই এর এই ঔষধে অধিক দেখা যায়।

যাবতীয় টি.বি এবং ক্যান্সার অবস্থায় যতক্ষণ পর্যন্ত মানসিক লক্ষণসমূহ পরিস্ফুট থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত বুঝতে হবে জীবনী শক্তি তখনও আরোগ্যকার্যে সাহায্য করতে প্রস্তুত আছে। কিন্তু রোগ অবস্থাটি পূর্ণ পরিণতির অবস্থায় পৌঁছালে তখন ঔষধ নির্বাচনের সহায়ক লক্ষণ সমূহ অন্তর্হিত হয় এবং মানসিক উৎকণ্ঠার ভাবটিও তখন আর থাকে না। সুতরাং আরোগ্য সম্ভব হয় না। ক্রিয়োজোট রোগীর মাড়ী ও দাঁতগুলো কোন সময়ই সুস্থ নয়। সেই কারণে অন্য কোন প্রকার দীর্ঘস্থায়ী হোক ভোগকালে অথবা জীবনের যে কোন প্রকার পরিবর্তনজনক অবস্থার প্রারম্ভে অথবা সময় যেমন- প্রথম ঋতু আরম্ভের সময়, গর্ভাবস্থায় বা রজলোপ এর সময় ক্রিয়োজোটের লক্ষণযুক্ত রোগী দাঁতের রোগে প্রায় সুনিশ্চিতভাবেই কষ্ট ভোগ করে থাকে।

কার্বোভেজ ও ক্রিয়াজোট পরস্পর বিরুদ্ধভাবাপন্ন ঔষধ সুতরাং আগে ও পরে এই দুইটি ঔষধ কখনো ব্যবহার করতে নেই। আর্সেনিক এবং ফসফরাস পরস্পর অনুপুরক ঔষধ।

যেকোনো প্রকার ক্যান্সার অবস্থায় আর্সেনিক, ফসফরাস, ল্যাকেসিস ও সালফারের কথা একবার চিন্তা করা প্রয়োজন। (আর্সেনিক, কার্বো এনিমেলিস, কার্বোভেজ, ক্রিয়োজোট, নাইট্রিক এসিড)

ক্যান্সারে ক্রিয়োজোট এবং আর্সেনিক উভয়ের লক্ষণে সাদৃশ্য আছে। এই অবস্থায় মানসিক লক্ষণ ও তেমন পাওয়া যায় না। তাই এক্ষেত্রে একমাত্র পার্থক্য আর্সেনিক এর স্বভাব সুলভ স্রাবের স্বল্পতা এবং ক্রিয়োজোট এর স্বভাব গত স্রাবের প্রচুরতা।

সর্বপ্রকার ক্যান্সার অবস্থায় তিনটি লক্ষণ অবশ্যই বর্তমান থাকেঃ

১) ঔষধ নির্বাচনের সহায়ক লক্ষণের অভাব।

২) নিদারুণ জ্বালা এবং তা কোন পরিস্থিতিতেই উপসম না হওয়া।

৩) শরীরের শোচনীয় শীর্ণতা বা শুষ্কতা।

শিশুদের দাঁত ওঠার সময়ে নানা প্রকার বিপর্যয় বিশেষত দাঁত এবং মাড়ী এই দুটিকে কেন্দ্র করে সকল লক্ষণ পরিস্ফূর্ত হয়। দাঁতগুলি যথেষ্ট যন্ত্রণার সাথে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পঁচতে আরম্ভ করে। দাঁত ওঠার সময়ে প্রবল জ্বর ভোগ, আক্ষেপ ও বমির প্রাধান্যতা দেখা যায়।

নিদ্রার প্রারম্ভে প্রচুর পরিমাণে জলবৎ দুর্গন্ধযুক্ত শয্যামূত্র ক্রিয়োজোটের প্রকৃত পরিচয়। শরীর অভ্যন্তরীণ সিফিলিস দোষই বিসৃঙ্খলাপূর্ণ এই প্রকার দন্তোদগম এর প্রকৃত কারণ। এই সময় শরীরে  অবস্থিত ঐ সিফিলিস দোষ এর প্রতিকার করতে পারলে দাঁতগুলো সুস্থ হয় এবং শরীরটি পরিশোধিত হয় এই বিশৃঙ্খলা থেকে। এই বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই

স্ত্রী রোগীদের রক্তস্রাব এর প্রবনতাটি শৈশব অবস্থাতেই নাসিকা পথে রক্তস্রাব ও ক্ষত লক্ষণের মধ্য দিয়ে প্রস্ফুটিত হয়। কোন কোন বালিকার শরীরে সিফিলিস দোষ টি প্রাপ্ত আকারে বর্তমান থাকায় এমন কি তিন চার বছর বয়স হতেই তাদের মধ্যে ক্ষতকারী প্রদর স্রাব লক্ষ্য করা যায়। প্রস্রাব সংক্রান্ত নানাবিধ অসুবিধা বিশেষত ক্রিয়োজোটের বৈশিষ্ট্য ব্যাপক শয্যামূত্র লক্ষণটি বালিকা বয়সেই বিকাশ লাভ করে।

হ্রাসবৃদ্ধিঃ বিশ্রামে, শয়ন অবস্থায়, ঠান্ডায়, ঠান্ডা জলে, দাঁত ওঠার সময়ে, ঋতুস্রাবের সময়, সন্ধ্যা সাতটা থেকে সকাল সাতটা পর্যন্ত এবং গর্ভাবস্থায় বৃদ্ধি। গরমে, গরম খাদ্যে ও সঞ্চালনে উপসম।

প্রদর স্রাবের রংঃ স্রাবের রং হলুদ( সিপিয়া,  মিউরেক্স)। কাপড়ে হলদে দাগ পড়ে। অত্যন্ত পচা দুর্গন্ধ। যেখানে লাগে সেখানে চুলকায় ও জ্বালা করে। চুলকালে চুলকানির উপশম হয় না। জরায়ু সংক্রান্ত যাবতীয় উপসর্গ  ঋতুস্রাবের পরই দেখা দেয়। দুর্গন্ধ লোকিয়া স্রাব। জরায়ুর ক্ষত ও ক্যান্সার।

যক্ষ্মা কাশিঃ ডা. এখন. সি. ঘোষ তার মেটিরিয়া মেডিকায় লিখেছেন ক্রিয়োজোট ঔষধের নিম্ন ডাইলিউশন ১x(জলের সাথে ঔষধ মিশিয়ে প্রত্যহ ৩ বার) ব্যাবহার করে কফের পরিমাণ কম করা যায়। অনেক ক্ষেত্রে কফ ওঠা বন্ধ হয়।

জল পান করার 10 থেকে 15 মিনিট পর বমি-ফসফরাস । জলপান মাত্রই বমি- আর্সেনিক। শিশুদের অবিরাম বমিতে এবং ডিস্পেপসিয়া রোগীর কোন খাদ্য হজম না হয়ে বমি হলে তখন ক্রিয়োজোটের দ্বারা উপকার হতে পারে বলেছেন ডা. এন. সি. ঘোষ।

ঋতুস্রাব থেমে থেমে হয়। স্রাব শুয়ে থাকা অবস্থাতেই অধিক হয় এবং উঠে বসলে বা চলাফেরা করলে কম হয়।
ঋতুস্রাবের কালে কোমরে প্রচন্ড ব্যাথা হয় । কান ভোঁ ভোঁ করে। স্ত্রী সহবাস কালে বেদনা বোধ করে (সিপিয়া, নেট্রাম মিউর)।

বৃদ্ধ দিগের গ্যাংরিন এ অত্যন্ত পচা দুর্গন্ধ ও জ্বালা থাকলে ক্রিয়োজোট ফলপ্রদ ।

বহুমূত্রঃ রাত্রিতে ঘন ঘন প্রস্রাব। প্রতিবারে অনেকটা করে প্রস্রাব। প্রসবের বেগ সামলাতে কষ্ট। বালক বা যুবক ব্যাক্তি বিছানায় প্রস্রাব করে। মনে করে সে ঠিক জায়গাতেই প্রস্রাব করছে। ঘুম ভেঙ্গে দেখে স্বপ্ন! দাঁতের যন্ত্রণা(ক্রিয়োজোট, প্লান্টেগো মেজর, স্ট্যাফিসেগ্রিয়া, ক্যামোমিলা)।

দাঁত ক্ষয় রোধে হোমিওপ্যাথিঃ 

ক্রিয়োজোট ঔষধটি দাঁতের নানাবিধ রোগ, পোঁকা খাওয়া দাঁতে জ্বালা, দাঁতের ক্ষয়, মাড়ীর নানাবিধ অসুস্থতা বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সময় নানাবিধ অসুস্থতা ইত্যাদি ক্ষেত্রে খুব সুন্দর কাজ করে।

দাঁতে জ্বালার উপর ক্রিয়োজোট ঔষধটি খুব সুন্দর ক্রিয়া করে। ক্রিয়োজোট এর মাদার টিংচার বাহ্যিক ব্যবহারে অধিকাংশ সময়ে যেকোনো প্রকার দাঁতের যন্ত্রনা সঙ্গে সঙ্গেই নিবারিত হয়। এছাড়াও কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্লাটেগো মেজর এর মাদার টিংচার অনুরুপ ভাবে ব্যবহারে দাঁত এর জ্বালা উপশম হয়। দাঁতের জ্বালায় একোনাইট এর মাদার টিংচার ও বাহ্যিক ব্যাবহার হয়ে থাকে।

লক্ষণ থাকলে এর সাথে অভ্যান্তরিণ ভাবে ক্রিয়োজোট শক্তি কৃত ঔষধ সেবন করতে হয়। সাধারণত ক্রিয়োজোট ৩০, ২০০ ইত্যাদি শক্তিই পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবহার হয়ে থাকে। ক্রিয়োজোট ৩০ বা ক্রিয়োজোট ২০০ এর কাজ কি তা হোমিওপ্যাথিক মেটিরিয়া মেডিকায় বিস্তারিত পাওয়া যাবে। এ বিষয়ে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

বিঃদ্রঃ আমি এই পোস্টটি লিখতে ডা. এম. ভট্টাচার্য এর পুরাতন দোষের পরিচয়  ও তাহার চিকিৎসা নামক গ্রন্থ, ডা. এলেন এর কীনোটস, ডা. এন.  সি ঘোষ এর কম্পারেটিভ মেটিরিয়া মেডিকা ইত্যাদি থেকে সহায়তা নিয়েছি। সকল শ্রদ্ধাভাজন চিকিৎসকের প্রতি শ্রদ্ধা অর্পন করছি।

 আরো পড়ুনঃ

দাঁতের এ্যানাটমী

ডা. দীপংকর মন্ডল।
রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথ।
৩০.০৬.২০২৪

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪