OrdinaryITPostAd

হোমিওপ্যাথির শক্তিতত্ব

হোমিওপ্যাথির শক্তিতত্ব নিয়ে আলোচনাঃ

ভূমিকাঃ ১৮ শতাব্দীতে স্যামুয়েল হ্যানিম্যান প্রবর্তিত হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় ব্যবহৃত শক্তিকৃত ঔষধ কোন স্থূল বস্তু নয়। এটি মূল বস্তুতে অবস্থিত শক্তির পরিবর্তিত রূপ মাত্র। শক্তি সংরক্ষণের নীতি অনুযায়ী শক্তিকে সৃষ্টি বা ধ্বংস করা যায় না, শুধুমাত্র এক রূপ থেকে অন্য রূপে রূপান্তরিত করা যায়। 

প্রত্যেক পদার্থে অবস্থিত যে ভিন্ন ভিন্ন শক্তি তাকে রূপান্তরিত করে ভিন্ন ভিন্ন হোমিওপ্যাথিক শক্তিকৃত ঔষধ আবিষ্কার করা হয়েছে। আবার হোমিওপ্যাথিক একই ঔষধ বিভিন্ন শক্তিতে রূপান্তর করা হয়েছে অর্থাৎ ওই একই শক্তিকে বহুরূপ করা হয়েছে। 

আজকের প্রবন্ধে আমরা হোমিওপ্যাথির শক্তিতত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করব। প্রথমে আমরা শক্তি সম্বন্ধে কিছু তথ্য জেনে নেব।

হোমিওপ্যাথি

জগতে প্রত্যেকটা শক্তির উৎস খুঁজলে কোন না কোন মৌলিক উপাদানকে পাওয়া যাবে। শক্তির সংরক্ষণ নীতি অনুযায়ী কোন শক্তি অনিত্য নয় এবং এটির কেবল রুপটাই পরিবর্তন হতে পারে। কখনোই শক্তির ধ্বংস বা বিনাশ হতে পারে না। জগতে উপস্থিত শক্তিগুলোর বাইরে কোন নতুন শক্তির জন্মও হতে পারে না। 

শক্তির বিভিন্ন রূপ আছে যেমন- গতিশক্তি, স্থিতিশক্তি, আলোকশক্তি, রাসায়নিক শক্তি তাপ শক্তি বিদ্যুৎ শক্তি পারমাণবিক শক্তি ইত্যাদি। 

শক্তির রূপ সম্পর্কে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মনীষীরা জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। যেমন- 

স্যার আইজ্যাক নিউটন (১৬৪৩ – ১৭২৭): গতিশক্তি এবং স্থিতিশক্তি বিষয়ে ধারণা প্রদান করেছিলেন। 

মাইকেল ফ্যারাডে (১৭৯১-১৮৬৭): বিদ্যুৎ এবং চৌম্বকত্বের সম্পর্কে ধারণা প্রদান করেছিলেন। 

জেমস ওয়াট (১৭৩৬-১৮৯১): বাস্প ইঞ্জিনের বিষয়ে ধারণা প্রদান করেছিলেন।

আলবার্ট আইনস্টাইন (১৮৭৯ – ১৯৫৫): E=mc2 এই সূত্র প্রকাশ করে দেখিয়েছিলেন যে ভর এবং শক্তি সমান।

স্যামুয়েল হ্যানিম্যান (১৭৫৫ -১৮৪৩): ১৮০৫ সালে শ্যামুয়েল হ্যানিম্যান তার গ্রন্থ অর্গানন অফ মেডিসিন এ হোমিওপ্যাথি শক্তি তত্ত্বের ধারণা প্রথম প্রকাশ করেন। এই গ্রন্থে হ্যানিম্যান “সদৃশ দ্বারা সদৃশের আরোগ্য নীতি” তুলে ধরেন। সদৃশ নীতি অনুসারে একটি রোগের কষ্টকর উপসর্গ সমূহ কে সেই বস্তু দ্বারা চিকিৎসা করা যেতে পারে যা ঐ একই রোগ লক্ষণ সুস্থ শরীরের সৃষ্টি করার সামর্থ্য রাখে যদি তা উচ্চতর শক্তিতে এবং ক্ষুদ্রতম মাত্রায় প্রয়োগ করা হয়।

হোমিওপ্যাথিক ঔষধ তৈরির প্রক্রিয়াঃ

হোমিওপ্যাথি ঔষধ রেমেডি নামেও পরিচিত। যার মূল উপাদান বিভিন্ন উৎস থেকে গ্রহণ করা হয়। সাধারণত সাতটি উৎস থেকে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ প্রস্তুত করা হয়। উদ্ভিজ্জ-পাতা, কান্ড, শেকড়, বাকল ইত্যাদি।

প্রাণিজ- বিভিন্ন প্রাণী, পোকামাকড় ইত্যাদি।

খনিজ- লবণ, বিভিন্ন ধাতব উপাদান ইত্যাদি।

মূল পদার্থ নির্বাচনঃ সর্বপ্রথম একটি মূল পদার্থ নির্বাচন করা হয় ঔষধ তৈরির জন্য। পদার্থের ধরন নির্বাচন করে এটিকে তরলিকরণ পদ্ধতিতে ঔষধ প্রস্তুত করা হবে নাকি ট্রাইটুরেশন পদ্ধতিতে ঔষধ প্রস্তুত করা হবে তা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়াও হোমিওপ্যাথিক ঔষধ প্রস্তুতের তিনটি প্রণালী দশমিক, শততমিক এবং পঞ্চাশ সহস্রতমিক শক্তি নীতির ঔষধ প্রস্তুত হবে তাও এ সময় নির্ধারণ করা হয়।

শক্তিকরণঃ (Potentiation) Succussion অথবা Trituration এর যেকোনো একটি উপায় অবলম্বন করে পদার্থকে লঘুকরণ করা হয়। ডাইলিউশন বা তরলীকরণ দ্বারা ঔষধ কে লঘু করা হয়। ডায়নামাইজেশন দ্বারা এই ঔষধের শক্তিকে আলোড়িত করা হয় ঝাকুনির মাধ্যমে।

দশমিক স্কেল দ্বারা দশমিক শক্তি পদ্ধতির ঔষধের শক্তিকে প্রকাশ করা হয়। যেমন- 

1x, 10x, 100x, 200x ইত্যাদি।

সেন্টিসিমাল স্কেল দ্বারা শততমিক পদ্ধতির ঔষধের শক্তি কে প্রকাশ করা হয়। পদ্ধতির ঔষধের শক্তি কে প্রকাশ করা হয়।

যেমন 30, 200, 1m, 10m, cm ইত্যাদি।

হোমিওপ্যাথিক ঔষধের ডোজঃ

নির্বাচিত হোমিওপ্যাথিক ঔষধ রোগীকে সেবনের যে নিয়মাবলী দেয়া হয় তাকে ঔষধের ডোজ বলে। কি পরিমানে ঔষধ রোগী একেকবার গ্রহণ করবে? কতটা সময় অন্তর গ্রহণ করতে হবে? কখন ঔষধ বন্ধ করতে হবে? এই সকল নিয়মাবলী এই ডোজের অন্তর্ভুক্ত।

সূক্ষ্মশক্তি ও ক্ষুদ্র মাত্রার বিস্ময়ঃ

আমরা দেখে থাকি অনু থেকে পরমাণু শক্তিশালী। আণবিক শক্তি থেকে পারমাণবিক শক্তি অধিক সূক্ষ্ম এবং ক্ষমতাশালী।  পদার্থের ক্ষুদ্রতম একক অনু এবং অনুর ক্ষুদ্রতম একক পরমাণু। অর্থাৎ পদার্থকে যত ক্ষুদ্র করা হয় তাকে যত ভাঙ্গা হয় তার ভেতর অধিক শক্তির স্ফুরণ ঘটে। হোমিওপ্যাথিক নীতি অনুযায়ী কোন ভেষজের এক ফোটা রস যতটা শক্তিশালী তাকে ১০০ ভাগে ভাগ করলে তার একাংশ আরও অধিক শক্তিশালী হয়।অবশিষ্ট ওই অংশকে যদি আবার শতভাগে ভাগ করে তার একাংশ নেওয়া হয় তা আরো অধিক শক্তিশালী হবে। এরূপে যতবার এই শক্তিকে নিয়ে কাজ করা হবে ততবারই এই শক্তির পরিবর্তন ঘটবে। কেননা শক্তির কোন বিনাশ নেই।

এটি বাস্তব চিকিৎসা ক্ষেত্রে বারবার প্রমাণিত হয়েছে। ২০০ বছরের অধিক সময় যাবত যে হোমিওপ্যাথি টিকে আছে তা শুধু এর কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়েছে বলে। 

যদিও হোমিওপ্যাথির এই সূক্ষ্ম শক্তি নিয়ে বিতর্ক আছে। কেউ কেউ বলে থাকেন যে হোমিওপ্যাথিক ঔষধের শক্তির অস্তিত্ব যেহেতু মাইক্রোস্কোপ দিয়ে দেখা যায় না তাই তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। কিন্তু এ সকল বিতর্ক থাকার পরেও হোমিওপ্যাথি আজও মানব সমাজে টিকে  আছে কারণ তা রোগ আরোগ্য করতে পারছে বলেই।

আরো পড়ুনঃ
আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার মূলতত্ত্ব

ডাঃ দীপংকর মন্ডল।
রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথ।
১৬.০৪.২০২৪

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪