ajkerit

সংক্ষেপে এলুমিনা হোমিওপ্যাথিক মেটিরিয়া মেডিকা থেকে

এলুমিনা হোমিও ঔষধের মূলভাবঃ

এলুমিনা ঔষধটিকে হোমিওপ্যাথিতে চিররোগের একোনাইট বলা হয়। অ্যালুমিনা শরীরের গভীর প্রদেশে ক্রিয়া করতে সক্ষম। হোমিওপ্যাথিক গভীর ঔষধ গুলোর ক্রিয়া সবসময় ধীর গতি সম্পন্ন হয়। এলুমিনা একটি শীতকাতর ঔষধ। মনের নিরানন্দ ভাব ও দেহের নিস্তেজতা অবশেষে পক্ষাঘাত এ রূপ নেয়। শরীরের জৈব উত্তাপ বা তাপ কম থাকে। শরীরে জৈব উত্তাপের অভাব বা শারীরিক তাপ কম থাকে। (ক্যালকেরিয়া কার্ব, সাইলিসিয়া)।

এলুমিনার মনঃ

বিষন্নতা, ভবিষ্যতের জন্য উৎকণ্ঠা, ব্যস্ততা এবং হঠকারিতার ভাব রোগীর ভেতরে বিশেষভাবে বর্তমান থাকে। ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তার উৎকণ্ঠা এত প্রবল যে সে যদি খাবার খেতে খেতে সংবাদ পায় যে বাইরে কেউ তার জন্য অপেক্ষা করছে সে তখন নানা প্রকার কাল্পনিক দুশ্চিন্তা করতে করতে দ্রুত খাওয়া শেষ করে। মানসিক এই ব্যস্ততার সময় এক ঘণ্টাকে তার কাছে ছয় ঘন্টা বলে মনে হয়! সময় যেন কাটতেই যায় না। 

এলুমিনা

বিভ্রান্তিকর চিন্তায় মনটা সব সময় ব্যস্ত থাকে। নিজের অস্তিত্ব এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থার প্রতি রোগী প্রচন্ড সন্দেহপরায়ণ থাকে। ক্রমাগত এভাবে চলতে চলতে রোগী একসময় প্রচন্ড বদমেজাজি ও খিটখিটে হয়ে যায়। 

এলুমিনার চর্ম লক্ষণঃ

সমস্ত শরীর এবং চর্মের উপর শুষ্কতার অনুভূতি এলুমিনার চরিত্রগত লক্ষণ। ডিমের সাদা অংশ মুখে লেগে শুকিয়ে গেলে বা মাকড়সার জাল মুখে লাগলে যে রকম অনুভূতি হয় এই সকল রোগীর চর্মেও এই রকম অনুভূতি হয়ে থাকে।

এগারিকাস এর ন্যায় এলুমিনাতেও চর্মের উপর পোকা হাঁটার নেয় সুড়সুড়ানি ভাব উৎপন্ন হয়। এর চর্ম ঘর্মহীন ও শুষ্ক। চর্মপীড়া শীতকালে ও শয্যার উত্তাপে(সালফার) বৃদ্ধি পায়। চর্মে উদ্ভেদ থাক অথবা না থাক রোগী গায়ে আচ্ছাদন মোটেই সহ্য করতে পারে না। যদিও রোগী শীতকাতর। আচ্ছাদনে চুলকানি প্রচুর পরিমাণে বেড়ে যায়।

চর্ম শুষ্ক বলে সামান্য চুলকালেও চর্ম ছিড়ে যায়, রক্ত বের হয় এবং চটা পড়ে। অ্যালুমিনার চর্মপীড়া সর্বদাই শুষ্ক। কোন প্রকার রস বা পুঁজ এতে থাকে না। পোকা হাঁটার অনুভূতি। চর্মরোগ শীতে বাড়ে। চর্মের শুষ্কতার কারণে অ্যালুমিনার রোগী বারবার স্নান করতে চায়। শুষ্কতার কারণে চুল ও নখের ভঙ্গুর ভাব দেখা যায়। এলুমিনার চুলকানি অধিকাংশ সময়ে উদ্ভেদ শূন্য। 

আরো পড়ুনঃ

সাদা স্রাব এর হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা

এলুমিনার কোষ্ঠবদ্ধতাঃ

মল শুষ্ক ও শক্ত বলের মত ফলে মালদার ছিঁড়ে রক্ত পড়ে। মলাশয়ে যথেষ্ট পরিমাণে মল না জমা পর্যন্ত রোগীর মলত্যাগ হয় না বা মলত্যাগের ইচ্ছাও হয় না। মলত্যাগে প্রচন্ড কোথানি। অনেক সময় রেক্টামের কর্মহীনতার জন্য(এনাকার্ডিয়াম, প্লাটিনা, ভিরেট্রাম, হাইলি)। মল নরম হওয়া সত্ত্বেও মলত্যাগ কালে প্রচুর কোঁথ দিতে হয়। মায়ের দুধের পরিবর্তে কৃত্রিম দুধ দ্বারা প্রতিপালিত বাচ্চাদের কোষ্ঠবদ্ধতার একটি ভালো ঔষধ এলুমিনা। এলুমিনা বৃদ্ধদের কোষ্ঠবদ্ধতায়(লাইকোপোডিয়াম, ওপিয়াম) গর্ভাবস্থায় মায়েদের রেকটামের কর্মহীনতার জন্য (সিপিয়া) উপযোগী ঔষধ। অতিশয় শুষ্ক জাতীয় কোষ্ঠবদ্ধতা। মলত্যাগের সময় মূত্রত্যাগের জন্যেও আলাদা করে কোঁথ দিতে হয়। কস্টিকামের মত এলুমিনার রোগীর দাঁড়িয়ে মলত্যাগ ভালো হয়। তবে কষ্টিকাম এর কোথানি থাকে না।

এলুমিনার প্রদর স্রাবঃ

প্রচুর পরিমাণে প্রদর স্রাব। জ্বালা জনক প্রদার স্রাব এত অধিক পরিমাণে হয় যে গোড়ালি পর্যন্ত গড়িয়ে পড়ে। ঝাঁঝালো ও জ্বালাকর স্বভাব এ এটি ক্রিয়োজোটের ন্যায়। আবার স্রাবের প্রচুরতায় সিফিলিননাম এর সমতুল্য। দিনের বেলায়, পরিশ্রমে ও সঞ্চালনে প্রদর স্রাব বৃদ্ধি পায়।

রোগিনী প্রচন্ড দুর্বল, ফ্যাকাসে চেহারা ও রক্তহীন(Anaemic)। রজস্রাব অত্যন্ত বিলম্বে এবং পরিমাণে খুবই অল্প হয়।(N C Ghosh)। ঋতুস্রাবের পর ভয়ঙ্কর রকমের দুর্বলতা(এম ভট্টাচার্য্য) কার্বো এনিমেলিস, ককুলাস ইন্ডিকা)এইচ সি এলেন। 




নাসিকার পুরাতন সর্দি, বৃদ্ধদের স্পারমাটোরিয়া( শুক্রস্খলন), গলনালীর পীড়া(আলজিব বৃদ্ধি, কাশি, সরভঙ্গ, গলার শুষ্কতা) তে রোগীর পিপাসা অধিক। সমস্ত উত্তেজক পদার্থ যেমন লবণ, মরিচ, মদ, গোলমরিচ, ভিনিগার ইত্যাদি খেলে কাশি হয়। 

এলুমিনার রুচিঃ

অ্যালুমিনার অদ্ভুত রুচির কারণে চা, খড়িমাটি, কয়লা, অম্ল, লবঙ্গ, কফি বা চায়ের গুড়া, মাটির কাপ ভাঙ্গা ইত্যাদি খেতেযায় খেতে চায় বা খায়। 

বৃদ্ধদের রোগে ব্যারাইটা কার্ব ও কোনিয়াম এর সমগুণ সম্পন্ন(এইচ সি অ্যালেন?

প্রচন্ড দুর্বলতা( জেলস) 

হ্রাসবৃদ্ধিঃ শয্যাতাপে (চর্মপীড়া) একদিন অন্তর, প্রতি পুর্ণিমা এবং অমাবস্যায় (সাইলিসিয়া) শুষ্ক 

আবহাওয়ায়, শীতের দিনে, কৃত্রিম খাদ্যে, আলু খেলে, ঋতুস্রাবের পর প্রাতঃকালে ও নিদ্রা ভঙ্গের পর (শিরঃপীড়া ও মানসিক লক্ষণের বৃদ্ধি)।

উপসমঃ ঠান্ডা জলে স্নান করলে, আক্রান্ত স্থান 

জল দিয়ে ধুলে, গলপীড়ায় গরম খাদ্য ও পানিয়ে, চুপচাপ থাকলে ও অল্প গরমের দিনে উপসম।

ক্রিয়া স্থিতিকালঃ এলুমিনার ক্রিয়াকাল ৪০ থেকে ৬০ দিন এর মত প্রায়। ক্রিয়া ধীরে প্রকাশ পায় তাই ঔষধ শীঘ্র পরিবর্তন করা যাবে না। 

অগ্নিদগ্ধঃ শরীরে কোন স্থানে গরম তেল বা আগুন দ্বারা পুড়ে গেলে বা পুড়ে গিয়ে ক্ষত হলে ফিটকিরি বিচূর্ণ বাহ্যিক ভাবে প্রয়োগ করলে উপকার হয়। (এন সি ঘোষ)

আরো পড়ুনঃ
নাক্স ভমিকা ব্যাবহার ডোজ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

ডাঃ দীপংকর মন্ডল।
রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথ
১১.০৪.২০২৪

—————————-

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url
ajkerit
ajkerit
ajkerit
ajkerit