Achalasia Cardia'র কারণ, লক্ষণ, জটিলতা ও চিকিৎসা

Achalasia Cardia কিঃ 

Achalasia Cardia হল এমন একটি রোগজনিত পরিস্থিতি যেখানে খাদ্যনালি সরু বা খাদ্যনালির অস্বাভাবিকতা জনিত খাবার গিলতে অসুবিধা সম্বন্ধীয় নানা রোগ লক্ষণ বিশেষত খাবার খেলতে সমস্যা দেখা দেয়। এই রোগজনিত পরিস্থিতিতে যেহেতু খাদ্যনালী চিকন হয়ে যায় তাই খাবার গিলতে কষ্ট বা বেদনাজনক হতে পারে। কখনো কখনো খাবার গিলতে বুকে ব্যথা হতে পারে। অনেক সময় বেদনা না থাকলেও খাবার গিলতে অসুবিধা হয়। কখনো গিলে ফেলা খাবার পুনরায় বের হয়ে আসে। এই সকল নানাবিধ অসুবিধা একজন ব্যক্তির স্বাভাবিক জীবন যাপনকে বাধাগ্রস্ত করে থাকে। 

কারা একালেশিয়া কার্ডিয়ায় আক্রান্ত হয়ঃ

একটা জরিপে দেখা গেছে সাধারণত ২৫ থেকে ৬০ বছর বয়সে ব্যক্তিদের মধ্যেই Achalasia Cardia রোগটি বেশি দেখা যায়। তবে এই বয়সের বাইরেও অল্পবয়সী এবং বয়স্কদের মধ্যেও এটি কখনো কখনো খুঁজে পাওয়া যায় এবং পুরুষ বা মহিলা উভয়েরই এই রোগটিতে তে আক্রান্তের হার সমান।

একালেশিয়া কার্ডিয়া কারণঃ

Achalasia Cardia’র সঠিক কারণ জানা যায় না তবে এটি ধারণা করা হয় খাদ্যনালীর স্নায়ুর অস্বাভাবিকতা বা ত্রুটিজনিত কারণ রোগটি হওয়ার জন্য দায়ী। এছাড়াও Autoimmune পরিস্থিতি, Genetic কারণ এবং কিছু ক্ষেত্রে Viral Infection এই রোগের জন্য দায়ী। যদিও এই রোগটি সকল বয়সী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে দেখা যায় তবে ৩০ থেকে ৬৫ বছর বয়সী ব্যক্তিদের ভিতরে এটা বেশি পাওয়া যায়।

একালেশিয়া কার্ডিয়ার লক্ষণঃ

Achalasia Cardia’র সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হলো খাবার গিলতে সমস্যা বা কষ্ট হওয়া। কখনো কখনো গলা বা বুকের বরাবর খাবার আটকে থাকার অনুভূতি হয়ে থাকে। কখনো কখনো গিলে ফেলা খাবার আবার বের হয়ে Regurgitation of food) আসতে পারে। এর সাথে কারো কারো Acidity এর লক্ষণ থাকতে পারে। বুক জোড়া একটা ব্যথা তার সাথে খাবার গিলতে বুকে ব্যথার অনুভব হতে পারে। এবং দীর্ঘদিন যাবত এভাবে চলতে থাকলে অসুস্থতা জনিত কারণে রোগীর ওজনের হ্রাস হতে পারে। আরো নানাবিধ রোগ লক্ষণ যেমন broncopulmonary symptoms ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।

ব্লগে আরো জনপ্রিয় পোষ্টঃ
Cystitis এর হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা

একালেশিয়া কার্ডিয়া জটিলতাঃ

যেহেতু কখনো কখনো গিলে ফেলা খাবার পুনরায় বের হয়ে আসে (Rigargitation of food) তাই অনেক সময় এই খাবার খাদ্যনালী থেকে শ্বাসনালীতে প্রবেশ করতে পারে। কখনো কখনো এই খাবার শ্বাসনালী বেয়ে ফুসফুসে প্রবেশ করতে পারে এবং তার ফলে নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে। যেমন নিউমোনিয়া, ফুসফুসের সংক্রমণ এমনকি খাদ্যনালির ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে একালেশিয়া কার্ডিয়া রোগটির কারণে।

achalasia-cardia


একালেশিয়া কার্ডিয়া নির্ণয়ঃ

একজন চিকিৎসক নানাবিধ উপায়ে Esophageal_achalasia cardia রোগটি নির্ণয় করতে পারেন। রোগীর চিকিৎসা ইতিহাস পর্যালোচনা, শারীরিক পরীক্ষা এবং কিছু প্যাথলজিক্যাল টেস্ট দ্বারা রোগটি নির্ণয় করা সম্ভব। Pathological test এর মধ্যে Esophagial manometry দ্বারা খাদ্যনালীর সংকোচন হয়েছে কিনা তা পরিমাপ করা যায়। এছাড়াও Barium Swallow বা Upper endoscopy ইত্যাদি Pathological Test দ্বারা খাদ্যনালীর প্রকৃত অবস্থা সম্বন্ধে ধারণা পাওয়া যাবে।

একালেশিয়া কার্ডিয়া ব্যবস্থাপনাঃ

কোন ব্যক্তি এই রোগে আক্রান্ত হলে তাকে কিছু জীবনাচরণের পরিবর্তন বিশেষত আহার সংশ্লিষ্ট কিছু নিয়ম নীতি মেনে চলতে হবে। তাহলে এই রোগটি বর্তমান থাকা সত্ত্বেও রোগীর জীবনযাপন সহজ হবে। 

যেমন- 

১) খাবার যতটা সম্ভব মুখে চিবিয়ে তরল করে খাবে। 

২) এক সাথে অনেকটা খাবার না খেয়ে বরং অল্প অল্প করে বারেবারে খেতে হবে।

৩) যে সকল খাবার খেলে ব্যক্তির ওই রোগ-জনিত কষ্ট বৃদ্ধি হয় ঐ সকল খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। 

৪) খাবার সময় সোজা হয়ে বসে খেতে হবে।

achalasia-cardia


একালেশিয়া কার্ডিয়া কি মারাত্মকঃ

সাধারণত এই Achalasia Cardia রোগে কেউ মারা যায় না। তবে যদি দীর্ঘদিন যাবত সমস্যাটিতে ভুগতে থাকা হয় তবে জীবন যাপন বা খাদ্য গ্রহণের পরিবর্তন এনে গুরুতর পরিস্থিতি গুলিকে এড়িয়ে চলা সম্ভব। তবে সচেতন থাকতে হবে কেননা যাদের Achalasia Cardia রোগটি আছে তাদের খাদ্যনালির ক্যান্সার(Cancer of oesophagus) হওয়ার ঝুঁকি খুব বেশি থাকে।

একালেশিয়া কার্ডিয়া প্রকারভেদঃ

Achalasia Cardia সাধারণত তিন ধরনের দেখা যায়- 

Type 1: (Classic Achalasia): এখানে lower esophageal sphincter (LES) relaxation জনিত সমস্যা থেকে Achalasia Cardia সমস্যাটি তৈরি হয়।

Type 2: (Achalasia with Compression): খাদ্যনাদের সম্পূর্ণ দৈর্ঘ্য জুড়ে সংকোচন ও সম্প্রসারণের ভারসাম্যহীনতা এবং incomplete LES relaxation লক্ষ্য করা যায়।

Type III: (Spastic Achalasia or Vigorous Achalasia): incomplete LES relaxation এর সাথে খাদ্যনালির সংকোচন ও সম্প্রসারণের অভাব এবং তার সাথে premature contraction জনিত সমস্যা একই সাথে বর্তমান থাকে।

একালেশিয়া কার্ডিয়া চিকিৎসাঃ

এলোপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে বিভিন্নভাবে Achalasia Cardia’র চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। নন সার্জিক্যাল উপায় গুলোর মধ্যে রয়েছে Medications, Balloon dilation ইত্যাদি। এই সকল পদ্ধতির একটাই উদ্দেশ্য থাকে তা হল রোগীর LES( Lower Esophagial Spicter) যেটি সংকোচন এর ফলে খাবার পাকস্থলীতে প্রবেশে বাধা পায় সেটিকে যথাসম্ভব সম্প্রসারিত করতে সাহায্য করা।

Ballon dilation: রোগীকে হালকা অচেতন অবস্থায় রেখে বিশেষভাবে নকশা করা একটা বেলুন জাতীয় টিউব খাদ্যনালির একদম নিচের প্রান্তে LES এর মধ্যে প্রবেশ করানো হয় এবং তারপর বেলুনটিকে বিশেষ ভাবে ফোলানো হয় এবং তার ফলে ওই অঞ্চলটি কিছুটা সম্প্রসারিত হয় এবং তখন রোগী খাবার গিলতে পারে।

Madication: কিছু বিশেষ ঔষধ খাইয়ে রোগীকে Achalasia Cardia’র চিকিৎসা দেয়া হয় প্রয়োজনে রোগীকে নিদৃষ্ট ইনজেকশন প্রয়োগ করেও চিকিৎসা করা হয়ে থাকে।

achalasia-cardia


Laparoscopic Esophagimyotomy: Achalasia Cardia’র সার্জিক্যাল অপারেশনের নাম Laparoscopic Esophagimyotomy অথবা laparoscopic heller myotomy. এই পদ্ধতিতে খাদ্যনালির LES অংশের পার্শ্ব থেকে কিছুটা কেটে বাদ দেওয়া হয় ফলে খাদ্যনালীর ওই অংশ সম্প্রসারিত হয়।

POEM(Peroral Endoscopic Myotomy): মুখের ভেতর দিয়ে এন্ডোস্কোপিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মায়োটমি করা হয়।

Esophagectomy: সম্পূর্ণ খাদ্যনালী কেটে বাদ দেয়া হয় সাধারণত ক্যান্সার জনিত কারণ থাকলে এটি করা হয়।

Achalasia Cardia’র চিকিৎসায় জটিলতাঃ উপরোক্ত সকল চিকিৎসা পদ্ধতিতে Achalasia Cardia’র চিকিৎসা করলেও কিছু জটিলতা থেকে যেতে পারে। যেমন 

১) সার্জিক্যাল অপারেশনের কারণে খাদ্যনালীতে গর্তের সৃষ্টি হতে পারে।

২) অনেক সময়ই চিকিৎসায় সফলতা পাওয়া যায় না এবং রোগটি আবার ফিরে আসে।

একালেশিয়া কার্ডিয়ায় সচেতনতাঃ

মনে রাখতে হবে যেকোনো প্রকারে Achalasia Cardia’র চিকিৎসা করা হোক না কেন এটি সর্বদাই উপশমদায়ক হয়ে থাকে। সাধারণত Achalasia Cardia এই সকল চিকিৎসাতে সম্পূর্ণরূপে আরোগ্য হয় না ফলে রোগটি আবার ফিরে আসে।

একালেশিয়া কার্ডিয়া হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাঃ

রোগীর জীবনী শক্তি সতেজ থাকলে এবং রোগটি আরোগ্যযোগ্য পর্যায়ে থাকলে সঠিক হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা দ্বারা রোগটি আরোগ্য হতে পারে। এক্ষেত্রে রোগীর ধাতুগত লক্ষণ সাদৃশ্য হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা করতে হবে। রোগীর শারীরিক, মানসিক ও ধাতুগত লক্ষণ সাদৃশ্যে শক্তিকৃত হোমিওপ্যাথিক ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে। এবং রোগটি আরোগ্য হলেও যাতে ফিরে না আসে সেহেতু রোগীকে আরো বেশ কিছুদিন চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকতে হবে।

চিকিৎসায় ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতাঃ

আমি একবার একজন ৮০ বছর বয়স্ক ব্যক্তির Achalasia Cardia’র চিকিৎসা করেছিলাম। রোগীর সমস্যা ছিল Dysphagia. রোগীর খাবার গিলতে কষ্ট হতো। উনাকে লক্ষণ সাদৃশ্যে ল্যাকেসিস ঔষধটি 200 শক্তিতে প্রয়োগ করেছিলাম এবং রোগী ভালো হয়ে গিয়েছিল। তবে দীর্ঘদিন বাদে বাদে রোগটি কিছুটা পরিমাণে আবার ফেরত আসত। তখন আবার উনাকে ঔষধের নতুন ডোজ প্রয়োগ করলে রোগী আবার কিছুদিন ভালো থাকতো।

আরো পড়ুনঃ
সুস্থ জীবন গঠনে আয়ুর্বেদ| আদর্শ জীবনাচরণ| প্রথম পর্ব|

ডাঃ দীপংকর মন্ডল।
রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথ।
২৫.১২.২০২৩

——————————–

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪