ajkerit

শিশুর কান্না থামানোর উপায়ঃ যে বিষয়গুলো অবশ্যই জানতে হবে।

শিশুর কান্না থামানোর উপায়ঃ

কেউ কেন কাঁদে? আমরা কেন কাঁদি? আমাদের প্রতিটি কান্নার পেছনে অবশ্যই থাকে কোন না কোন কামনা পূরণের অতৃপ্তি অথবা কোন প্রকার দণ্ড ভোগ। কামনার অতৃপ্তিতে আসে ক্রোধ নতুবা কান্না। নিজের জীবনের সাথে একটু মিলিয়ে নিন তো!

আচ্ছা একটা শিশু কেন কাঁদে? একটি ছোট্ট শিশু যে এখনও কথা বলতে শেখেনি তার সব থেকে বড় হাতিয়ার হলো কান্না। দেখা গেছে একটি শিশু দৈনিক গড়ে প্রায় দেড় থেকে দুই ঘন্টা শুধু কাঁদে! সে প্রয়োজনে কাঁদে সে অপ্রয়োজনে কাঁদে। নিষ্পাপ শিশুর এই মর্মস্পর্শী কান্না কাদায় শিশুর অভিভাবকদেরও। তারা চায় সর্বান্তকরণে তাদের আদরের মানিকের কান্না থামাতে। কিন্তু কখনো কখনো শিশুর কান্না থামানোর উপায় বের করা কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়।

শিশু কাঁদলেই মায়েদের অনেকেই সঙ্গে সঙ্গে শিশুকে দুধ খাওয়াতে ব্যস্ত হয়। কিন্তু এটি ঠিক নয়। শিশুর কান্না থামাতে শিশু কেন কাঁদছে সর্বাগ্রে সেই কারণটিকে খুঁজে বের করতে হয়। সচরাচর ভাবে দেখা যায় এমন কিছু সাধারন কারণের উল্লেখ করছি যেগুলো বাবামায়ের বিশেষত যারা প্রথম বাবা মা হয়েছেন তাদের জানা থাকলে তাদের বাচ্চার এই কান্না থামাতে বিশেষ সুবিধা হবে।

Debangshu Mondal


ভেজা কাপড়ঃ যেহেতু ছোট বাচ্চারা কথা বলতে পারে না এবং দেখা যায় তারা প্রায় ঘন ঘন প্রস্রাব করে তাদের ডায়াপার ভিজিয়ে ফেলে। এরকম অবস্থায় শিশু প্রায়ই কান্না শুরু করে দেয়। তাই শিশু কাঁদলে প্রথমেই এক ঝলকে দেখে নিতে হবে শিশুর প্যান্ট ভেজা কিনা? যদি প্যান্ট ভেজা হয় তবে খুব দ্রুত তা পাল্টে দিতে হবে।

ক্ষুধাঃ শিশুর মৌলিক প্রয়োজন খাদ্যের সংস্থানের জন্য শিশুর একমাত্র কথা বলার ভাষা হল তার কান্না। শিশুর ক্ষুধা পেলে সে কান্না করে তা জানাতে চায়। তাই খেয়াল করতে হবে শিশুর ক্ষুধা লেগেছে কিনা। ক্ষুধা লেগে থাকলে তাকে যত দ্রুত সম্ভব আহারের ব্যবস্থা করতে হবে।

শিশু ঘুমাতে চায়ঃ শিশুরা সাধারণত দিনের ভেতর অনেকটা সময় ঘুমায়। শিশুরা হয়তো ঘুমানোর কথা মুখে বলতে পারেনা। তাই তারা অহেতুক কান্নাকাটি করতে থাকে। সেই মুহূর্তে কোন কিছু দিয়েই তাকে শান্ত করা যায় না। তাই এসব ক্ষেত্রে সচেতনভাবে অনুসন্ধান করতে হবে শিশু ঘুমাতে চাচ্ছে কিনা?

পেট ব্যথাঃ অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় পেট বেদনার কারণে শিশু কান্নাকাটি করে। এসব ক্ষেত্রে শিশুকে দেখা যায় যে সে কখনো কখনো মোচড়ানোর মত ভাব করে। যেহেতু সে কথা বলতে পারে না তাই তার এরকম অঙ্গভঙ্গির প্রতি খেয়াল রেখে বোঝার চেষ্টা করতে হবে যে তার পেট ব্যথা করছে কিনা। যদি সেরকম মনে হয় তবে যত দ্রুত সম্ভব একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

সাধারণ অসুস্থতাঃ জ্বর, সর্দি, কাশি অথবা জাতীয় সাধারণ অসুস্থতার সূচনা লগ্নে বা শুরুর দিকে এক ধরনের অস্বস্তি ভাব হয়। এই যে তুই সাধারণ অসুস্থতা থেকেও শিশু কান্না করে। সেটি বুঝে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

প্রসাবে জ্বালাপোড়াঃ অনেক ক্ষেত্রে শিশু প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ার কারণে কান্নাকাটি করে। তবে সেক্ষেত্রে প্রস্রাব করার আগ মুহূর্তে শিশুর ভীতিভাব কান্নার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। পরিস্থিতি বিবেচনা করে ব্যবস্থা নিতে হবে।

দাঁত ওঠাঃ দাঁত উঠার সময়ে কিছু কষ্টকর উপসর্গ থাকতে পারে, সেক্ষেত্রে শিশু কান্নাকাটি করলে পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। বিনাশ কালে বুদ্ধি নাশ হয়।

গালে ঘাঃ শিশুদের প্রায় অনেক ক্ষেত্রে গালে ঘা হতে দেখা যায়। সেক্ষেত্রে শিশু আহার করার সময় কান্নাকাটি করে এবং ঝাল জাতীয় খাবার, অনেক সময় কোন খাবারই সে মুখে নিতে চায় না। শিশুর মুখ হাঁ করে গালের ভেতরে দেখলে সাদা সাদা স্পট ঘা দেখা যায় অনেক ক্ষেত্রে। এসব ক্ষেত্রে শিশুকে উপযুক্ত চিকিৎসা করাতে হবে। গালে ঘা এর ক্ষেত্রে সাধারণত দেখা যায় রোগ শুরুর প্রাথমিক পর্যায়ে শিশুর মুখ থেকে প্রচুর পরিমানে লালাস্রাব হতে থাকে।

হাম বা বসন্তঃ হাম বা বসন্ত রোগ স্বরূপ প্রাথমিক পর্যায়ে শিশু খুব কান্নাকাটি করে। সাধারণত রোগ শুরুর পূর্বের রাত্রে দেখা গেছে শিশু খুব অস্থিরতা যুক্ত হয় এবং খুব কান্নাকাটি করে এবং কোনভাবেই সে ঠান্ডা হতে চায় না।

ক্লান্তি যত্নঃ শিশু কখনো কখনো ক্লান্ত হয় ফলে কান্নাকাটি করে অনেক সময় বাবামা বা গুরুজনের কাছ থেকে সে স্নেহ চায়। এই সকল পরিস্থিতিকে উপলব্ধি করে শিশুর বাসনা কে পূরণ করতে হবে তাহলে শিশুকে কান্না থেকে থামানো যাবে হয়তো।

শিশুর অনর্থক কান্নার মূল কারণ খুঁজতে উপরোক্ত বিষয়গুলোর উপর সর্বাগ্রে নজর রাখতে হবে। এই সকল কারণগুলোর উপর নজর রেখে তার সাথে সাথে চিকিৎসা করতে হবে যদি প্রকৃতই তার চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। নতুবা স্নেহ, আনুষঙ্গিক ব্যবস্থাপনা, ইত্যাদির দ্বারা শিশুকে কান্না থেকে শান্ত করতে হবে।

আবারো বলছি শিশু কাঁদছে মানেই তাকে দুধ দিতে হবে এরকমন নয়। তার কান্নার আরো নানা কারণ থাকতে পারে। সেগুলিকে বিবেচনায় নিয়ে তার কান্না কে প্রতিরোধ করতে আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করতে হবে।

বাচ্চাদের যেকোনো সমস্যায় হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাই সর্বোত্তমঃ বাচ্চাদের জটিল প্রকারের যেকোনো রোগ থেকে শুরু করে একুইট সর্দি, কাশি, জ্বর যেকোন প্রকার শারীরিক সমস্যায় হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাই সর্বোত্তম। কারণ সঠিক হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় রোগের শরীরে ঔষধজ কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হয় না। শুধু তাই নয় হোমিওপ্যাথিক ঔষধ বাচ্চাদের শারীরিক মানসিক বিকাশ ভূমিকা রাখে। তাদের জীবনী শক্তি যথাসম্ভব রোগ প্রবণতা মুক্ত রাখতে সাহায্য করে। যে সকল শিশুরা ছোটবেলা থেকে সাধারণ শারীরিক সমস্যাগুলোতে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ সেবন করে থাকে তাদের জীবনী শক্তি প্রায়ই সবল থাকে এবং তাদের সাধারণত সচরাচর নানাবিধ রোগের আক্রমণ কম হয়ে থাকে। হোমিওপ্যাথিক শক্তিকৃত ঔষধ বাচ্চাদের মেধা মননশীলতার বিকাশেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

আরো পড়ুনঃ
শিশুর নাক বন্ধ হওয়ায় স্যাম্বুকাস

ডাঃ দীপংকর মন্ডল।

রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথ।

২২.১১.২০২৩

————————–

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url
ajkerit
ajkerit
ajkerit
ajkerit