ajkerit

ডাইলিউশন এবং ডায়নামাইজেশন এর উপলব্ধি

ডাইলিউশন এবং ডায়নামাইজেশন এর উপলব্ধি

মহাত্মা হ্যানিম্যানের ক্রণিক ডিজিজেস গ্রন্থের পঞ্চম খন্ডের ভুমিকা বক্তব্য পাঠ দ্বারা আমার উপলব্ধি এখানে আমার নিজের ভাষায় বর্ণনা করলামঃ-
সাধারণত যে কোন বস্তু বা দ্রব্য, বিশেষত ভেষজ পদার্থের মূল উপাদান ঘনীভূত অবস্থায় থাকে। এদের ভেতর তখন কোন ঔষধজ শক্তির চরম স্ফুরণ ঘটে না। এরূপ পরিস্থিতিতে এই সমস্ত বস্তু যদি জলে গোলা হয়, তাহলেও তার ঔষধজ শক্তির স্ফুরণ ঘটে না। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় কোন স্বাদযুক্ত জিনিস যেমন লবণ, তিক্ত দ্রব্য ইত্যাদিতে যদি জল মেশানো হয় তাহলে পর্যায়ক্রমে তার স্বাদ কমতে থাকে ও সেটি পাতলা বা আরো সুক্ষ্ম হয়। ঠিক তদ্রুপ কোন রংদার বস্ততে জল মিশিয়ে নাড়তে থাকলে তা ক্রমান্বয়ে রংহীন হয়ে পড়ে। একে ডাইলিউশন বলে।
কিন্তু এই ডায়লিউশনেও মূল ভেষজে ঘুমিয়ে থাকা সূক্ষ্ম ঔষধজ গুনগুলো জেগে ওঠে না। কারণ এতটুকু প্রক্রিয়ায়, মূল ভেষজের ভেতরে বা সারাংশে লুকিয়ে থাকা ঔষধজ শক্তি তখনও মুক্ত হয় না।
কিন্তু শুষ্ক দ্রব্যকে খল দ্বারা পিষলে, এবং তরল দ্রব্যকে জলে বা এলকোহলে ডাইলিউশন করে সাজোরে নাড়লে বা ঝাঁকি দিলে, তখন ভেষজের অন্তর্নিহিত সূক্ষ্ম ঔষধজ শক্তির চরম স্ফুরণ ঘটে। এই সাজোরে আলোড়ন দ্বারা ঔষধজ শক্তির বহিঃপ্রকাশকে ডাইনামাইজেশন বলে। অর্থাৎ ডাইলিউশন এর পরেই ডাইনামাইজেশন করতে হয়। কেননা ভেষজ দ্রব্য ডাইলিউশন এর পূর্বে ঘনীভূত অবস্থায় যতক্ষণ থাকে, ততক্ষণ যতই তা সাজোরে ঘর্ষণ দ্বারা গুড়ো করা হোক বা সাজোরে আলোড়িত করা হোক, তার অন্তর্নিহিত সূক্ষ্ম ঔষধজ শক্তির চরম স্ফুরণ ঘটেনা। এবং অবশ্যই শিশিটি কিছুটা শক্ত অথচ নরম(রবারের মত) জিনিসের উপরে সাজোরে ঝাঁকি দিতে হবে। নতুবা আস্তে আস্তে নাড়লে ওই গোলা বা ডাইলিউশন থেকে খুব বেশি কিছু হবে না। তাই মহাত্মা হ্যানেম্যান এখানে হোমিওপ্যাথকে নিজেকেই ঔষধ তৈরি করে নেওয়ার কথা উপদেশ করেছেন। “কারণ যে অস্ত্রে রোগের সঙ্গে লড়তে হবে, তার উচিত নিজেই তা তৈরি করা ও শান দেওয়া”।
নয়তো কি ভুল হতে পারে?
এ বিষয়ে বলতে গিয়ে মহাত্মা বলেছেন যে, অনেক ক্ষেত্রে আমরা বিভিন্ন হোমিও বই পুস্তকে পড়ে থাকি যে, রোগ বিশেষ অসুস্থ কোন কোন লোকের ক্ষেত্রে উচ্চশক্তির ঔষধে মোটেই কাজ হয়নি, কিন্তু নিম্ন শক্তির ঔষধে খুব কাজ হয়েছে। আবার কেউ কেউ উচ্চশক্তির ঔষধে ভালো কাজ পেয়েছেন। এই সমস্ত ক্ষেত্রে ফলাফলের এত পার্থক্যের কারণ সম্বন্ধে কেউ খোঁজ করেন না। তাই মহাত্মা হ্যানেম্যান বলেছেন, “এক ফোঁটা নিম্নশক্তির ঔষধের সঙ্গে ৯৯ ফোঁটা সুরাসার মিশিয়ে প্রত্যেক শিশিটি ১০, ২০, ৫০ বা তার চেয়ে আরো বেশি বার কতকটা শক্ত অথচ নরম(রাবার এর মত) জিনিসের উপর জোরে ঝাঁকি দিয়ে এমন ভাবে শক্তি তৈরি করেন না যাতে দরকার মতন উচ্চশক্তির ঔষধ পেতে পারেন। এইভাবে শক্তিকৃত ঔষধে খুব বেশি ফল হয়। কিন্তু আস্তে আস্তে নাড়লে গোলার চেয়ে আর বড় বেশি কিছু হয়না-যেটা হওয়াও ঠিক নয়”। এই প্রসঙ্গে মহাত্মা আরো বলেছেন, “যদি প্রত্যেক শক্তির ওষুধে সমান সংখ্যক ঝাঁকি দিয়ে ওষুধের শক্তি বাড়ানো হয়, তবে- এমনকি ৫০ ক্রমেও আমরা তীব্রভাবে কাজ করবার মতো ঔষধ পাই। সেইজন্য অসহিষ্ণু রোগীতে ঔষধের তীব্র ক্রিয়া উৎপাদন করবার ইচ্ছা না থাকলে, ওই ওষুধে ভেজান প্রত্যেক ছোট্ট বড়ি কতকটা জলে গুলে নিয়ে, তা থেকে অল্প পরিমাণে তাদের দেওয়া যেতে পারে-যেতে পারে কেন, দেওয়া উচিত”। এবং ঔষধ এইভাবে তৈরি হলে তবেই তাদের কাজ করবার পুরো ক্ষমতা দাঁড়ায়।
………………………………………………….
লেখকঃ
দীপংকর মন্ডল(ডিএইচএমএস, চতুর্থ বর্ষ,বিএইচবি)
মহাত্মা হ্যানিম্যানের ক্রমিক ডিজিজেস গ্রন্থের পঞ্চম খন্ডের ভূমিকা অনুসরণে।
১৯/০৯/২০২০
………………………………………………….
এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত কোন লেখা কপি না করার অনুরোধ রইলো। প্রয়োজনে শেয়ার করুন।
ধন্যবাদ।
………….

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url
ajkerit
ajkerit
ajkerit
ajkerit